বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজার উপকূলে ১০০ কি.মি. বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্ত

প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

লোকালয়ে চলছে জোয়ার-ভাটা
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় এখনো চলছে জোয়ার ভাটা। ওসব এলকার প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অর্ধশতাধিক পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়ায় বর্তমানে সেখানে চলছে জোয়ার-ভাটা। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এই বেড়িবাঁধ ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু’র তা-বে ল- ভ- হয়ে যায়। দিনদিন নতুন নতুন এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়া পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়ছে ওখানকার হাজার হাজার পরিবার। বেড়েই চলেছে জনদূর্ভোগ।
জানা যায়, পাউবোর অধীনে চকরিয়া উপজেলার ৬৫এ-৩ পোল্ডারের অধীন বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা, ৬৫এ-১ পোল্ডারের চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা, ৬৫ পোল্ডারের অধীন কোণাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা ও বিএমচর ইউনিয়নে ৬টি পয়েন্টে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। একই ভাবে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নে অন্তত ৬টি ও দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় সাতটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তারমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারণে প্রতিদিন এলাকার শত শত বসতবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে লোনা পানিতে।
এদিকে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের জোয়ারের পানিতে গোসল কতে গিয়ে ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলায় তিন শিশুর করুণ মুত্যু ঘটেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুত্র জানিয়েছেন, জেলার অন্যসব উপজেলার সাথে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ এসব বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নতুন টেন্ডারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। সহসাই এসব এলাকায় মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, রোয়ানু তা-বে ইউনিয়নের মরংঘোনা এলাকার অন্তত তিনশ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়া অংশটি বর্তমানে শাখা খালে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে দুই দফা জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে এলাকার শত শত পরিবার চরম দুর্ভোগের রয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন, রোয়ানুর তা-বে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ ৪২টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নির্দেশ দেয়াহয়েছে।
জোয়ারে ভাসছে শাহপরীর দ্বীপের হাজারো পরিবার
টেকনাফের একটি অবহেলিত এলাকার নাম শাহপরীর দ্বীপ। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বার বার ধরনা দিয়ে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই অবস্থা দেখে প্রশ্ন দেখাদিয়েছে আগামীতে শাহপরীর দ্বীপ সাগরে বিলীন হয়ে যাবে কিনা। দ্বীপের অনেক মানুষ দ্বীপ ছেড়ে চলে আসতে শুরু করেছে। শাহপরীর দ্বীপে অবস্থানরত পরিবারের তালিকা করে পুনরবাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাটায় জোয়ার আতঙ্ক!
মহেশখালী উপজেলার উপকূলীয় মাতারবাড়ী ও পাশ্ববর্তী ধলঘাট ইউনিয়নে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বার বার বেড়ীবাঁধ বিলীন হচ্ছে। স্থায়িভাবে শক্ত ব্লক দিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ সংস্কার না করার কারণে উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জোয়ার শুরু হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলীয় দু’ ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। দৈনিক অন্তত দু’বার জোয়ার আসায় আতঙ্কে ভুগছেন এসব এলাকার মানুষেরা। জোয়ার এলেই তলিয়ে যায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।
মাতারবাড়িবাসীর বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও নানা অজুহাতে তা হচ্ছে না। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিকগ্রহণকৃত জমির রাঙ্গাখালী, টিয়াখাঁটি ও চুয়ান্ন ঘোনা এলাকার তিনটি বড় পয়েন্টে বিধবস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে মাতারবাড়িতে এখনো পানিবন্দি শতাধিক পরিবার মনবেতর জীবন যাপন করছে ।
অনেক বাসিন্দাই বলেন, তারা ত্রাণ চায় না, সবার আগে স্থায়ি বেড়িবাঁধ সংস্কার চায়। বাসিন্দারা জানান, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ষাইটমারা এলাকায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নতুন করে সাগরে বিলীন হতে চলেছে। গত একমাসে অমাবস্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারের এবং সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বেড়িবাঁধের ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়। বেড়িবাঁধের ভয়াবহ ভাঙনে রাস্তা-ঘাট বিলীন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
তারা জানায়, মাতাবাড়ির ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের গত এক বছরে প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। অবশিষ্ট এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হলে পুরো ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে এমন আতঙ্কে দিন কাটছেন মাতারবাড়ির ২৫টি গ্রামের ৮০ হাজার বাসিন্দা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে মাতারবাড়ি ও ধলঘাট ইউনিয়নের প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ল-ভ- গোমাতলীর বেড়িবাঁধ
পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীতে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু’র তা-বে বেড়িবাঁধ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। সামুদ্রিক জোয়ার ও বন্যার পানির প্রবল ধাক্কায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার বর্তমানে ভেঙ্গে যাওয়া অন্তত ৪টি পয়েন্টে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্রতিদিন চলছে রীতিমত জোয়ার-ভাটা। পোকখালীর বেশির ভাগ পয়েন্টের বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে নিত্যদিন সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ার কারণে কোন স্থানে হাটু সমান আবার কোন স্থানে কোমড় সমান এলাকা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। এ অবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বেড়ে চলছে জনদুর্ভোগ। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই মৌসুমে এলাকার চিংড়ি চাষ। অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে চলেগেলেও অবশিষ্ট যারা আছে তাদেরও কয়েক বৎসরের মধ্যেই চলে যেতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে আগামীতে কয়েক হাজার পরিবার ভূমিহীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২২ জুলাই শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে গোমাতলী ৩ পোল্ডারের অধীন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। একইভাবে ইউনিয়নে ৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারণে প্রতিদিন এলাকার শত শত বসতবাড়ি পাবিত হচ্ছে পানিতে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানিয়েছেন, সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীর ক্ষতিগ্রস্থ এসব বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নতুন টেন্ডারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। সহসা এসব এলাকায় মেরামত কাজ শুরু হবে।
কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি আলহাজ সাইমুম সরওয়ার কমল গত বৃস্পতিবার গোমাতলীর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, রোয়ানুর তা-বে ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার অন্তত ৩শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বর্তমানে ভেঙে যাওয়া অংশটি শাখা খালে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে দুই দফা জোয়ারের সময় সামুদ্রিক জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে এলাকার শত শত পরিবার চরম দুর্ভোগের রয়েছে। তিনি বলেন, ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের অংশসমূহ সহসা মেরামত করা না গেলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবেনা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, রোয়ানুর তা-বে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পোল্ডারে অন্ততঃ ৩৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরির্দশন করে জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে পাউবো’র সংশিষ্ট উধর্বতন দপ্তরে লিখিত সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়। উধর্বতন কর্তৃপক্ষ ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ পয়েন্টের বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ৪২ প্যাকেজের আওতায় কাজের বিপরীতে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। দাখিলকৃত কাগজপত্র সমুহ যাছাই বাছাই চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। তারপর শুরু করা হবে মেরামত কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন