শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি, ভঙ্গুর অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় : ত্রিশঙ্কু বিপদে মোদি সরকার

ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২০, ৫:৪৮ পিএম | আপডেট : ৮:১১ পিএম, ২৭ মে, ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তলানিতে, তার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড পশ্চিমবঙ্গ, এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর পঙ্গপালের আক্রমণ। প্রাকৃতিক এসব সমস্যার পাশাপাশি ভারতের মোদি সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সীমান্ত সংঘাত। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে চলমান বৈরিতার মধ্যেই ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির কারণে লাদাখ সীমান্তে চীন ও কালাপানি নিয়ে নেপালের সাথে নতুন করে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের ভিতরে ও বাইরে সমস্যা যেন একের পর এক ঝেঁকে বসেছে ভারতের উপরে।

একদিকে করোনা, অন্যদিকে আমফানের তাণ্ডব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পঙ্গপালের হানা। চরম হুমকিতে ভারতের অর্থনীতি। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ। মারা গেছেন প্রায় ৪ হাজার ৩৩৪ জন। লকডাউনে থাকলেও দিনদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে ভারতে। মহামারির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারমধ্যে কয়েকদিন আগে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পূর্ব ভারতের বেশকিছু অঞ্চল। পাশাপাশি নতুন সমস্য হিসাবে দেখা দিয়েছে ফসল বিনষ্টকারী পোকা পঙ্গপাল। ইদিমধ্যে ভারতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়েছে এই পোকা। রাজস্থানসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়েছে ফসল বিনষ্টকারী এ পোকা। প্রায় ১০০ জনেরও বেশি শ্রমিক যুদ্ধ করছে পঙ্গপালের সঙ্গে। এই পোকা ধ্বংসে ড্রোনের সাহায্য নিচ্ছে ভারত।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারতজুড়ে লকডাউন চলার মধ্যেই দেশটির মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় পঙ্গপালের আক্রমণ শুরু হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল এই রাজ্যগুলোর বহু গ্রাম ও শহরে ঢুকে পড়েছে, হানা দিয়েছে ফসলের ক্ষেতে। এতে দেশজুড়ে ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে পঙ্গপাল নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে দাবদাহ যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, লাদাখে চীন-ভারত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) দুই পারেই সৈন্য ও অস্ত্র সমাবেশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেসময় লাদাখ সীমান্ত পরিস্থিতির কোন উল্লেখ করেননি শি জিনপিং। এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে লাদাখ সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। ভারত ও চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত খবর থেকে এসব এসব তথ্য জানা গেছে। ভারতের সংবাদমাধ্যগুলোর খবরে জানা গেছে, চীনের তৎপরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সীমান্তে সেনা বাড়িয়েছে ভারতও। চীন যতদিন সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র বাড়াবে ততদিন ভারতও শক্তিবৃদ্ধি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নেপালও সীমান্ত নিয়ে ভারতকে ছেড়ে কথা বলছে না। কালাপানি ও লিপুলেখ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দুদেশের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। এর মধ্যেই প্রয়োজনে যুদ্ধ হবে বলে ভারতকে হুঁশিয়ার করল নেপাল। সম্প্রতি ‘দ্য রাইসিং নেপাল’ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নেপালের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঈশ্বর পোখরেল বলেন, ‘তৃতীয় কোনও শক্তির প্ররোচনায় আমরা কালাপানি সীমান্তে বিবাদ করছি বলে যে অভিযোগ করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান তা নিন্দনীয়। প্রয়োজনে নেপালি ফৌজ যুদ্ধ করবে।’

আবার গত রোববার পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, ‘অধিকৃত কাশ্মীরে ভারত কোন আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করলে তার জবাব পুরো সামরিক শক্তি দিয়ে দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর একটি বিতর্কিত অঞ্চল এবং আগ্রাসনের সাথে সম্পর্কিত যে কোনও রাজনৈতিক ও সামরিক চিন্তাধারাসহ বিতর্কিত মর্যাদাকে চ্যালেঞ্জ করার যে কোনও প্রয়াস সম্পূর্ণরূপে জাতীয় সংকল্প ও সামরিক শক্তির সাথে সাড়া দেয়া হবে।’

বর্তমানে ভারতকে তিন প্রতিবেশী দেশের সীমান্তেই শক্তি বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে লাদাখ সীমান্তে রাস্তা ও নতুন বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করছে ভারত। এর ফলে সামরিক খাতে তাদের ব্যায় অনেক বেড়ে গেছে। অথচ ক্রিসিলের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২১ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি ৫ শতাংশে হারে সঙ্কুচিত হবে। সেখানে প্রথমে জিডিপি বৃদ্ধি ৩.৫ শতাংশ হারে দেখানো হলেও পরে তা কমিয়ে ১.৮ শতাংশ হারে হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সাপ্লাই চেন পুরোপুরি উন্মুক্ত না করলে এবং অর্থনৈতিক ‘অ্যাক্টিভিটি’ না বাড়ালে লকডাউন ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও নেতিবাচক পথে নিয়ে যাবে। এবং যার অত্যন্ত খারাপ প্রভাব পড়বে জিডিপিতে। এবং সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি, আনাদুলু এজেন্সি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (17)
Ameer ২৭ মে, ২০২০, ১০:৫৮ পিএম says : 0
দেশ প্রেম ও শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির কারণে নেপাল আজ ভারত কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে আর বাংলাদেশ সেখানে ভারতের ভয় থর থর করে কাঁপছে।
Total Reply(0)
আলমগীর ২৭ মে, ২০২০, ১০:৫৯ পিএম says : 0
ভারত-চীন সীমান্তে বিড়ালের মত আর বাংলাদেশ সীমান্তে বাঘের মতো আচরণ করে।
Total Reply(0)
কামাল হোসেন ২৭ মে, ২০২০, ১১:০২ পিএম says : 0
ভারত বাংলাদেশ ছাড়া কোন প্রতিবেশী সাথেই সুসম্পর্ক রক্ষা করতে পারেনি বাংলাদেশের সাথে পেরেছে কারণ এখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দেশের স্বার্থ ও দেশপ্রেমের চেয়ে ক্ষমতা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ উর্দ্ধে স্থান পায়
Total Reply(0)
Zimdin F F ২৭ মে, ২০২০, ১১:১২ পিএম says : 5
এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, চির সত্যটা, চির সুন্দর। সাম্প্রদায়িক দর্শনে যাদের বসবাস ওরা যত জনপ্রিয়তা নিয়েই সরকার গঠন করুক, দেশ পরিচালনায় তাদের লালিত দর্শনের প্রকাশ ঘটতে বাধ্য, ফলে অবর্ণনীয় কষ্টে পড়ে দেশ ও দেশের মানুষ, এরা যতো সুন্দর মণোমুগ্ধকর কথাই বলুক না কেন। এই চির সত্যটা শুধু ভারত নয় পৃথিবীর সকল দেশের ও সকল ধর্মের সাম্প্রদায়িক দর্শনের অনুসারিদের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য । দোয়া করি আল্লাহ যেন ভারতের শতকোটি নিরীহ মানুষের জীবন জিবিকা মান সম্মানকে হেফাজত করেন । সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই ।
Total Reply(0)
Mohd Jamal Uddin ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৩ পিএম says : 0
আমরা কি ভাল অবস্হানে আছি। তাদেরকে অনুসরন করে আমাদের রাজনৈতিক অবস্হানও ভংগুর । স্বাধিন ভাবে আমরা মত প্রকাশ করতে পারি না, নিজের ভোট নিজে দিতে পারি না। প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে বার বার একই সরকার গঠন হচ্ছে ; বিএনপি / আওয়ামিলীগ কেউই জনগনের পক্ষের রাজনিতি করে না। তারা বরাবর জনগনের সাথে প্রতারনা করে এসেছে। এখন প্রয়োজন বাংলাদেশে নতুন রাজনিতির পথ - দেশ স্বাধিন হয়েছে প্রায় ৫০ বৎসর কিন্ত আমরা জনগন এখনো স্বাধিনতার সুফল পাই নাই ।
Total Reply(0)
Khadiza Islam Mitu Mitu ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৩ পিএম says : 0
চা বিক্রেতার কাছে দেশ পরিচালনার দ্বায়ীত্ব দিলে এরকম দুর্ভোগ আসবে এটাই স্বাভাবিক।
Total Reply(0)
Monirul Islam ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৪ পিএম says : 0
নেপাল পাকিস্তান চিন সবার একজোট হয়ে আক্রমণ করা উচিৎ। মুরুব্বি দের কাছ থেকে শুনেছি আগরতলা আমাদের অংশ ছিল
Total Reply(0)
Kh Pabel ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৪ পিএম says : 0
সবার দেশপ্রেম অাছে,একমাত্র বাঙালিদের নাই।অার ভারতীয় সেনাবাহিনীর মাস্তানীর জায়গা হলো বাংলাদেশের সিমান্ত। সিমান্তে বাংলাদেশের মানুষ মারে,এ দেশের সম্পদ নিয়ে যায়। দেখার কেউ নাই
Total Reply(0)
MD Nazmul Islam ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৫ পিএম says : 0
সমস্য নাই তাহার প্রধান হাতিয়ার আছে আর সেটা হলো ধর্ম নিয়ে রাজনৈতি করা
Total Reply(0)
Mohi Uddin ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৫ পিএম says : 0
ভারতের ধংস অনিবার্য! শুধু আওয়ামী লীগের সাথে মোদী সরকারের সম্পর্ক, তাছাড়া পার্শবর্তী কোন দেশের মানুষের সাথে ভারতের ভালো কোন সম্পর্ক নাই! চুরে চুরে মাসতোতে ভাই!
Total Reply(0)
Monir Hemeil ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৬ পিএম says : 0
এই মুদী/ ভারত সরকার বাংলাদেশের কত বড় ক্ষতি করছে মানুষ টের পাবে ।বাংলাদেশের কিছু পা চাটা গোলাম আছে ভারতের ।
Total Reply(0)
Mohammed Ismail ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৬ পিএম says : 0
মিথ্যা ও নির্যাতনের পথে যারা হাটে তাদের এই অবস্থাই হয়। কাশ্মীরীদের উপর অত্যাচার আর মুসলমানদের উপর জুলুম করে আর কত?
Total Reply(0)
Khalilur Rahman ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৬ পিএম says : 0
পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ওরফে বিশিষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ চায়ের দোকানি নরেন্দ্র মোদি
Total Reply(0)
MD Saydur Ruhman ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৭ পিএম says : 0
মুদির বিজেপি / RSS শ্রষ্টার সৃষ্টির বাহিরে নয়। সবাই হিসাব করে দেখুন মুদি ক্ষমতায় আসার পরে ভারতের অমঙ্গল ছাড়া এই পর্যন্ত মঙ্গল জনক কোন কিছুই করতে পারে নাই। কোন দিন পারবে ও না।
Total Reply(0)
Nur Nabi Mazumder ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৭ পিএম says : 0
চা বিক্রেতা আর এর বেশী কি করবে? শুধু মুসলমানদের হিংসা করতে জানে, আর ...খাওয়া লোকদের উস্কে দিয়ে মুসলমানদের জান মালের ক্ষতি করে।
Total Reply(0)
Arshadul Hoque ২৭ মে, ২০২০, ১১:১৮ পিএম says : 0
মুদি সরকার না সরলে ভারত টুকরো টুকরো হয় যাবে। কেননা তারা অন্য কোন ধর্মকে সম্মান করে না শুধু হিন্দুত্ববাদটায় বুঝে।
Total Reply(0)
ash ২৮ মে, ২০২০, ৪:৫৮ এএম says : 0
THIS IS THE TIME TO MAKE INDIA 100 PIECES
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন