শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনা জয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি

ভিন্নধারার ঈদচিত্র গ্রামাঞ্চলে : সরকারি প্রণোদনা ও ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২০, ১২:১৩ এএম

আনন্দ : দান খয়রাতের মাত্রাও বেড়েছে বহুগুণ
করোনা ভয় জয় করে কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতিতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। এবার ভিন্নধারার ঈদচিত্র লক্ষ্য করা গেছে দেশের প্রতিটি গ্রামে। শহর আর গ্রামচিত্রের পার্থক্য ছিল বিরাট। শহরে মরুভ‚মির অবস্থা বিরাজ করলেও গ্রাম ছিল জমজমাট। ঈদ ঘিরে গ্রাম ফিরে পায় নতুন প্রাণ। গ্রামে করোনার ভয় মোটেও স্পর্শ করেনি। সরকারি প্রণোদনা, বোরো ধান, আম, লিচু ও কাঁঠালসহ ফল এবং ফসল ওঠার কারণে গ্রামে গ্রামে মানুষের হাতে নগদ টাকা থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা বহুমাত্রায় সচল হয়ে ওঠে।

সারাদেশে বোরো ধান ও মৌসুমী ফলের ফলন হয়েছে আশানুরূপ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই ধান উঠে যায় কৃষকের ঘরে। ঈদের আগেই জেলায় জেলায় সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ১০৪০ টাকা ও বাইরে ৯০০ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন কৃষকরা। সরকার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করায় কৃষকরা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। আম, লিচু ও কাঠালসহ ফলের মৌসুম এটি। এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে এসব বিকিকিনি হচ্ছে না।
গ্রামপর্যায়ে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ২৫০০ টাকা করে দিয়েছে। ভিজিডি, ১০ টাকা চালের কার্ড ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বাইরে এটি সম্পূর্ণ নতুন। সরকার এবার আরো একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় আমার বাড়ি আমার খামারে শস্যগোলা ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা। এতে কৃষকরা ৫% সুদে ঋণ পাবেন। পরে সুবিধামতো সময়ে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাতে কৃষকরা ধান ওঠার মৌসুমে প্রতারিত হবেন না।

যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঈদে সরকারি বেসরকারি কর্মজীবিরা বোনাস পেয়ে গ্রামমুখী হয়ে দান খয়রাতের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। ব্যক্তিক দূরত্ব রেখে গ্রামে গ্রামে ঈদ আনান্দ উৎসব পালন হয় জমজমাট।

রাজশাহী অঞ্চলের গাঁও-গেরামে ঈদে ছিল ভিন্ন আমেজ। চারিদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝে কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে ছিল কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যস্ততা। ধান কাটায় পরিবহনসহ বিভিন্ন কাজে হাত বদল ঘটেছে প্রায় শত কোটি টাকার। এ অঞ্চলের আমে বাণিজ্য হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার। মোট ষাট হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যেখানে আম উৎপাদন হয় আট থেকে দশ লাখ মে. টন।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামেগঞ্জের অর্থনীতি সচল ছিল। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নাড়ির টানে অনেক মানুষ নিকটজনের কাছে ছুটে আসায় গ্রামীণ অর্থনীতি প্রান ফিরে পায়। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাভাবিক জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার মুখেও ঈদকেন্দ্রীক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জীবনীশক্তি পায়।

নোয়াখালীর গ্রামীন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। শহরে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লে গ্রামাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত রয়েছে। ১০ টাকা কেজি চাল, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কর্মহীন পরিবারের তালিকানুযায়ী খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। নোয়াখালীতে কৃষি হচ্ছে প্রধান অর্থনীতি। নোয়াখালীতে দ্বিতীয় প্রধান আয়ের উৎস প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স। এ জেলার সাড়ে চার লক্ষাধিক প্রবাসী বিদেশে অবস্থান করছে। তারা ঈদে দান-খয়রাত এবার বাড়িয়েছে।

বগুড়ার শহরাঞ্চলের জীবনযাত্রা স্থবির ও অর্থনীতির চাকা অচল। তবে গ্রাম এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বোরো ধান কাটা ছাড়াও শাক সব্জীর ক্ষেতের পরিচর্যা ফসল উত্তোলন ও তা বাজারজাতকরণ এবং পোল্ট্রি, ডেইরি ও ফিশিং প্রজেক্টগুলোর প্রডাক্ট পরিবহনে মুখর গ্রামাঞ্চল।
দিনাজপুরের মাঠের সৈনিকরা পেটে পাথর বেঁধে হলেও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। যার ফলশ্রæতিতে এবারের বোরো ধানের বাম্পার ফলন নিশ্চিত হয়েছে। একইভাবে লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে এবারও লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতেই গ্রামীণ অর্থনীতি হয়ে উঠেছে চাঙ্গা।

খুলনায় করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য দৃশ্যত স্থবির হলেও সরকারের প্রণোদনার ঘোষণা ও বাস্তবায়নে খুলনাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
সিলেটের গ্রামীণ সমাজে প্রায় প্রতি ঘরে একজন করে হলেও লোক মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করে। তারা সমাজের অভাবী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দান ও ত্রাণের হাত বাড়িয়ে। শহরের চেয়ে গ্রামে ছিল এবারের ঈদ জমজমাট। গ্রামীণ অর্থনীতি এ কারণে ছিল চাঙ্গা।

ময়মনসিংহের শহরে নয়, গ্রামে এবারের ঈদ উৎসবে টাকার প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। গ্রামীণ অর্থনীতি হয় অতিমাত্রায় সচল।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে দৈনিক ইনকিলাবের রাজশাহী, যশোর, নোয়াখালি, বরিশাল, বগুড়া, দিনাজপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ ব্যুরো)

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন