মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনায় ঈদ এবং কবি নজরুল

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২০, ১২:৪৯ এএম

২৫ মে পালিত হলো ঈদুল ফিতর। পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী দিনটি ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী। করোনার কারণে এবার রমজানের পর মুসলিমবিশ্বে ‘ঈদ উৎসব’ কার্যত ছিল কফিনবন্দী। শুধু ব্যাতিক্রম ছিলেন উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষি মুসলিমরা। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার জন্য ঈদগাহে খোলা মাঠে নামাজ আদায় করতে না পারলেও কাজী নজরুলের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজা শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি উৎসবে নতুন মাত্রা দিয়েছে; ঈদের দিন আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছে ঘরবন্দি মানুষের হৃদয়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা ঘরে ঘরে ঈদ উদযাপন করেছি। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যায়নি; কিন্তু ‘--এলো খুশির ঈদ’ গানটি রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বত্রই বিলিয়েছের ঈদ আনন্দ। যা বাংলাভাষাভাষি ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম পায়নি।

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাবে সউদী আরবসহ তামাম দুনিয়ার মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন ভিন্নভাবে। বিগত হাজার বছরেও হয়তো মুসলমানদের ঘরে বসে এবছরের মতো ঈদ উদযাপন করতে হয়নি। লকডাউন, কেয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, মৃত্যু, নতুন সংক্রশন ইত্যাদি খবরে কেটেছে ঈদের দিন। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ঘোরাঘুরি না হলেও থেমে থাকেনি ঈদ আনন্দ। মোবাইল ও অনলাইনের মাধ্যমে একে অপরকে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের চেয়ে বাংলা ভাষাভাষি মুসলমানরা কিছুটা হলেও সৌভাগ্যবান। কারণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জন্য ঈদুল ফিতরে বাড়তি আনন্দ দিতে ইসলামী গান লিখে গেছেন। তার লেখা ‘ও মন রমজানের--’ গানটি প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের আগের রাত থেকে আকাশ-বাতাসে হয়েছে ধ্বনিত। কান পাতলেই শোনা যেত ‘ও মন রমজানের ঐ রোজা শেষে এলো খুশির ঈদ’। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার বাংলাভাষাভাষি মুসলমানরা ঈদের দিন খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেনি; নজরুলের এই গান কিছুটা হলেও সেই কষ্ট লাঘব করেছে; ঘরে ঘরে উৎসবের ‘আবহ’ সৃষ্টি করেছে।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। রমজানের পরে উদযাপিত ঈদুল ফিতরের উৎসবকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নতুন মাত্রা দিয়েছেন তাঁর রচনার মাধ্যমে। কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের অনুরোধে কবি নজরুল ১৯৩১ সালে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজা শেষে’ গানটি রচনা করেন। আব্বাস উদ্দিনের কন্ঠে গানটি রেকর্ড করে কোলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানি। অতপর ১৯৩২ সাল থেকে উপমহাদেশের বাংলাভাষাভাষি মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরের ‘উৎসবে’ গানটি আবশ্যকীয় অংশ হয়ে উঠে। দীর্ঘ ৮৮ বছর ধরে গানটি রমজানের শেষ রোজার দিন (চাঁদরাত) মুসলমানদের ঘরে ঘরে উৎসবের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। ২২ লাইনের গানটির পরতে পরতে অর্থবোধক যে শব্দের ব্যবহার হয়েছে তা কেবল নজরুল ইসলামের মতো কালজয়ী কবির পক্ষেই সম্ভব।

গোটা বিশ্ব করোনার কড়াল গ্রাসে নিমজ্জিত। আমেরিকার ইসলাম বিদ্বেষী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে ব্রিটেনের বরিস জনসন, ইরানের হাসান রুহানি, এমনকি ভারতের নরেন্দ্র মোদীর ঘাম ঝড়াচ্ছে অদৃশ্য ভাইরাস করোনা। বিজ্ঞানীরা অচেনা রোগ করোনার টিকা, ওষুধ অবিস্কারের চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় করোনার সংক্রমণ ও সামাজিক ট্রান্সমিশন ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিকল্প নেই। এটা করতে গিয়ে সউদী সরকার ঈদের দিন মক্কা-মদিনাসহ সারাদেশে কার্ফু পর্যন্ত দিয়েছিল। বাংলদেশ তো বটেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদুল ফিতরের নামাজ ময়দানে আদায় করা হয়নি। বাংলাদেশে খোলা ময়দানে বদলে মসজিদে মসজিদে নামাজ আদায় করা হয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ মুসলমানের জন্য ‘ফরজ’ নয় ‘ওয়াজিব’। শত শত বছর ধরে মাঠে নামাজ আদায় করার প্রচলন থাকলেও ইসলাম ধর্মে তা বাধ্যতামূলক নয়। আলেম-ওলামারা বলেছেন, ঈদের নামাজ মাঠেই আদায় করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা বিধান নেই। নামাজ কবুল করার মালিক আল্লাহ। কার নামাজ কবুল করবেন তিনিই ভাল জানেন। করোনার কারণে এবার মুখে মাস্ক, হাতে গøাভস পড়ে মুসুল্লিরা মসজিদের গেছেন ঈদের নামাজ আদায় করতে। এমনকি মসজিদের পাশে ভিক্ষুকদের মুখে মাস্ক ও হাতে গøাভস পড়ে তিন ফুট দূরত্ব রক্ষা করে বসে থাকতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, এবার ঈদের নামাজের পর বন্ধু-বান্ধব, পরিজিতজন ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কোলাকুলির দৃশ্য দেখা যায়নি। তাই বলে কি ঈদ হয়নি! ঈদের আনন্দে কমতি ছিল? মোটেও না। ঈদের নামাজের সঙ্গে এগুলোর বাধ্যতামূলক নেই। করোনায় ইতোমধ্যে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছেন। অর্ধকোটি মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। বাংলাদেশে প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অদৃশ্য রোগ করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা মানুষের নিজের হাতে। আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিবেশি সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে। আগে তো মানুষের জীবন, তারপর উৎসব। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঈদুল ফিতরের উৎসবকে কেন্দ্র করে যে গান ছড়িয়ে দিয়েছেন মুসলমানদের ঘরে ঘরে; সেটার বাড়তি আনন্দই এবার করোনাকালে ময়দানে ঈদের নামাজ পড়তে না পারার বেদনাকে ‘পুষিয়ে’ দিয়েছে। করোনার জন্য ঈদের দিন অনেককিছুই সীমাবদ্ধ ছিল বৈকি; তবে প্রতিবছরের মতো এবারও কবি নজরুলের গানের সেনাদানা-বালাখানা, দুস্থ-দুশমন, আসমানী তাগিদ, নিত্য উপবাসী, মুর্দা-মুসলিম, ভাঙাইতে নিঁদ, গরিব-ইয়াতীম, মিসকিন, মুফিদ, দে যাকাত ইত্যাদি শব্দগুলো একাকার হয়ে গিয়েছিল। তাইতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণেও গেয়ে উঠেন ‘ও মন রমজানের ঐ রোজা শেষে এলো খুশির ঈদ’। হে কবি নজরুল স্বার্থক তোমার জন্ম। ##

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Abir Sakib ২৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহর কাছে কবির আত্মার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করি, আমিন।
Total Reply(0)
Sankari Saha ২৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি বিদ্রোহী কবিকে।
Total Reply(0)
Md Shamsuzzaman Sumon ২৯ মে, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
Total Reply(0)
Mehedi Hasan ২৯ মে, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
Nice presention ....Eid Mubarak
Total Reply(0)
Sofiqul Islam ২৯ মে, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
আল্লাহ অনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুক আমিন
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২৯ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
নজরুলের রচনায় ধ্বনিত হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৯ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
কবিতার পাশাপাশি বাংলা গানের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনিই প্রথম বাংলা গজলের প্রবর্তন করেন এবং একে উত্তর ভারতীয় রাগ সংগীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন