বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোববার থেকে চলবে বাস-ট্রেন-লঞ্চ

ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আজ বৈঠকে বসছে বাস ও লঞ্চ মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম


আগামী ৩১ মে থেকে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ওই দিন থেকেই চলবে বাস, লঞ্চ ও ট্রেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাড়বে। ট্রেন চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে।

বাস মালিকরা জানান, নতুন ভাবে ‘ভাড়া পুনর্বিন্যাস’ করে তারা বাস চালাতে চাচ্ছেন। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠানো ও কাউন্টার খোলা রাখা হবে। তবে ভাড়ার হার কি রকম হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে টার্মিনাল থেকে যাত্রী ওঠানামা করা হবে সেসব বিষয়ে আলোচনা করতেই আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় বৈঠকে বসছে গাবতলী টার্মিনালকেন্দ্রীক সংগঠন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে, সায়েদাবাদ, মহাখালী, ফুলবাড়িয়াসহ কয়েকটি টার্মিনালের দূরপাল্লার রুটের বাস মালিকদের সংগঠন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলতে গেলে নতুন করে ভাড়া ধার্য করার বিষয়েই বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন তারা।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, সরকারের নির্দেশনার পর এখন মালিকরা নিজেরা বৈঠক করে ঠিক করবেন এ বিষয়গুলো। এরপর ভাড়াসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আজ শুক্রবার বিকেল তিনটায় বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে সরকারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মালিকদের বৈঠক হবে। মহাখালী টার্মিনালের একজন বাস মালিক জানান, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে গেলে অন্তত ৭০ যাত্রীর সমপরিমাণ ভাড়া তুলতে হবে। এই পরিমাণ নিয়ে সরকারের সংস্থার সঙ্গে তাদের কোনো বৈঠক এখনও হয়নি। মালিক নেতারা চাচ্ছেন করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত যাত্রী তুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসের সিট অনুযায়ীই ভাড়া। এটাকেই তারা ‘ভাড়ার পুনর্বিন্যাস’ বলে উল্লেখ করছেন।

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী রোববার থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, ট্রেন চালুর ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কিছু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। রেলমন্ত্রী আরও বলেন, গণপরিবহন চালু করতে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তারই অংশ হিসেবে আমরা শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালাব। আগে যে রুটে পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেন চলতো, সেই রুটে এখন দুটি ট্রেন চলবে। সেক্ষেত্রে একটা সিট বাদ দিয়ে টিকিট বিক্রি করা হবে। অর্থাৎ একটি ট্রেনের পঞ্চাশ ভাগ টিকিট বিক্রি করা হবে। তিনি বলেন, এভাবে আমরা দু’সপ্তাহ ট্রেন চালিয়ে দেখব। তারপর সরকার থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা আবার বিষয়টি বিবেচনা করব›।

অপরদিকে,স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী রোববার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে লঞ্চ। তবে ভাড়া বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। আজ শুক্রবার বিকালে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের আদেশেই গণপরিবহনের অংশ হিসেবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। আগামী ৩১ মে থেকে লঞ্চ চলবে। তবে শর্ত পরিপালনের বিষয়সহ নানাদিক দিয়ে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যান। এই সময়ে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সরকারের কোনও আদেশ অমান্য করতে পারবো না। তাই আগামী রোববার থেকে লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানাতে পারবো, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান আমি নিজেই। কারণ, ফেরিতে চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাধারণ মানুষের ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখেছি। তিনি বলেন, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালালে ধারণ ক্ষমতার পাঁচ ভাগের একভাগ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে রওনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি তো প্রাসঙ্গিক। তাই এ বিষয়টি নিয়েও শুক্রবারের বৈঠকে আলোচনা হবে।

সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন চালুর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের গণপরিবহন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ আহŸান জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে আমাদের দেশের গণপরিবহনকে আইন মানানো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে আয় বঞ্চিত থাকায় পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা নিদারুণ আর্থিক সংকটে পতিত। তাদের কাছে বেঁচে থাকায় এখন মুখ্য বিষয়। তাদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন পরিচালনা করা কতটুকু সম্ভব তা প্রশ্নবোধক। অন্যদিকে সড়কে যারা চাঁদাবাজি করে তারা সক্রিয় হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষে পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণের জন্য আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

অপরদিকে দেশে গণপরিবহনগুলো দৈনিক ইজারাভিত্তিক চালানোর কারণে মালিক সমিতি, বাস শ্রমিক সংগঠনের নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নিজ নিজ গণপরিবহনের শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণের পরিবহনগুলো পরিচালিত হয়। এতে দেশের যাত্রী সাধারণ শঙ্কিত যে বাসে বাসে বেশি যাত্রী তোলা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একটি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দিলেই কেবল সড়কে শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা সম্ভব। তাই তিনি করোনা সংকটের সময়ে গণপরিবহন পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে প্রদানের জন্য জোর দাবি জানান।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন