করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারিতে আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ। নির্যাতিত ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে ওই সব পুলিশ সদস্য করোনায় পরিচয় দিচ্ছেন মানবিক পুলিশের।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাড়া দিতে না পারায় মারধর করে বের করে দেয়া পিঠা বিক্রেতা পরিবারকে ঈদের উপহার দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ইলিয়াছ হোসেন। ঈদের উপহার পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ওই পরিবারটি কিছুটা হলেও শান্তনা পেয়েছে।
তিন মাসের ভাড়া দিতে না পারায় বাসায় তালা দিয়ে গত ১৯ মে ঝালমুড়ি ও পিঠা বিক্রেতা হান্নান পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় চকবাজার থানার হোসনী দালান শিয়া গলির বাসার মালিক রাজু আহমেদ। হান্নান ওই বাসায় গত ৫বছর ধরে ভাড়ায় থাকছেন। তবে করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাড়া দিতে না পারায় তাকে বাসা থেকে বের করে দেন বাসার মালিক। হান্নান এর প্রতিবাদ করলে ক্ষুব্ধ হন রাজু আহমেদ। তিনি ও তার ভাতিজা ভাড়াটিয়া হান্নানকে কিল-ঘুষি মারেন এবং তার ছেলে আল আমিন (২৪) ও সাইদুল ইসলামের (২০) ওপর আক্রমণ করেন। এতে হান্নানের এক ছেলের মাথা ফেটে যায়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল দল নিয়ে উপস্থিত হন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার মো. ইলিয়াছ হোসেন। পরে বাসার মালিক রাজু আহমেদ ও তার ভাতিজা সোহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় রাতেই চকবাজার থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়।
ঝালমুড়ি ও পিঠা বিক্রেতা হান্নান মিয়া জানান, ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ির মালিক কর্তৃক যে অপমান ও নির্যাতনে শিকার হয়েছিলেন তাতে তার এবং তার পরিবারের মন ভেঙে যায়। ঈদের আগের দিন মন খুব খাপার ছিল কারণ হাতে কোন টাকা ছিল না ঈদের বাজার করার মতো। পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও উপহার আমার এবং পরিবারের মন ভাল করে দিয়েছে। আমরা খুব খুশি। বাড়ি ওয়ালার দেয়া কষ্ট অনেকাংশেই আমরা ভুলে গেছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
লালবাগের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ইলিয়াছ হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ সাধারণ মানুষের যেকোনো প্রতিক‚ল পরিবেশে সবসময় পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। পুলিশের কাজ শুধু আইন-শৃংখলা রক্ষা বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণই নয়, বরং যে কোন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকাই পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ভাড়াটিয়া ঝালমুড়ি ও পিঠা বিক্রেতা হান্নান মিয়া পরিবারের ওপর বাসা মালিকের হামলার পর সেই বাসার মালিক ও তার ভাতিজাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হান্নানের পরিবারকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানসহ দুই মাসের বাড়িভাড়া মওকুফ করে ওখানে থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পবিত্র রমজান মাসে একজন অসহায় মানুষের পাশে থাকার বিষয়টি মানবিক। হান্নান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা এক দিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং অন্যদিকে মানসিক চাপের মধ্যেও ছিল। ঈদে তাদের পাশে থাকতে পারায় পুরো পরিবারটি তাদের উপর যে নির্যাতন ও অন্যায় করা হয়েছে তার থেকে কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি তারা (ওই পরিবার) পাবেন এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পাশে দাঁড়ানো বলে মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন।
চকবাজার জোন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপহার সামগ্রী হিসেবে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি লবণ, ২টি সাবান ও ২ কেজি পিঁয়াজ এবং ফলমূল হিসেবে তরমুজ, কলা, বাঙ্গি, লেবু, পেঁপে, মাল্টা, আনারস, আপেল ও নাসপাতি ইত্যাদি দেয়া হয়েছে হান্নান পরিবারকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন