শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এখনো অন্ধকারে ১২ লাখ গ্রাহক

পল্লী বিদ্যুতের ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। দেশের প্রায় ১২লাখ গ্রাহক এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বাসাবাড়িতে কাটাচ্ছেন। এদিকে সঞ্চালন এবং বিতরণ মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের। বিদ্যুৎ বিভাগের ইতোমধ্যে ক্ষতির হিসাব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুতের অবকাঠামোও। আরইবি বলছে, এখনও তাদের ৯ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সব বিতরণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তবে যশোর ও সাতক্ষীরার কিছু এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু বেশি সময় লাগবে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, আম্পানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের। তাদের ৪ থেকে ৫ হাজার বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে, ট্রান্সফরমার এবং মিটার পুড়ে গেছে। এছাড়া, লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে তা জানিয়েছে। বিতরণ কোম্পানিকে ক্ষতির হিসাব দেওয়ার জন্য একটি গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী হিসাব তৈরি করে কেউ কেউ পাঠিয়েছিল। তবে তাতে কিছু ঘাটতি থাকায় আবারও হিসাব তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানা গেছে, আম্পানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের। দেশের বিভিন্ন আরইবির দুই হাজার ৭০০ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে, ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে ৭৬০টি, বিদ্যুতের ১৯ হাজার মিটার পুড়ে গেছে। এছাড়া, ৩৩ হাজার ৬০০ জায়গায় সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে বলে জানানো হয়।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পরিচালক জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আম্পানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের। প্রাথমিক ভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডেও ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে। কারণ এখনো সাতক্ষীরা ও খুলনা এলাকার সঠিক হিসেব করা যায়নি।
পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর। ওজোপাডিকো জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণকারী এই কোম্পানির ৭৮১টি পোল ভেঙে গেছে। আর এক হাজার ৭১৬টি পোল হেলে পড়েছে। ৪৯০ কিলোমিটার লাইনের ক্যাবল ছিঁড়ে পড়েছে। এছাড়া, ১১৪টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের ক্ষতির পরিমাণ ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে।
নেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা নেসকোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার মতো হতে পারে। তিনি বলেন, ‘হিসাব এখনও চ‚ড়ান্ত হয়নি। এদিকে কুষ্টিয়ায় পিজিসিবির একটি সাবস্টেশন পুড়ে গেছে। এই সাবস্টেশনের জন্য নতুন ট্রান্সফরমারের দাম ২০ কোটি টাকা বলে পিজিসিবি জানিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের (আরইবি) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অঞ্জন কান্তি দাশ ইনকিলাবকে বলেন, আম্পানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হলাম আমরা। আমাদের গ্রাহক বেশি। উপকূলের অধিকাংশ জেলা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। আমরা ঝড় কমার পর ভোর থেকেই মেরামতের কাজে নেমে গেছি। কিছু কিছু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। আরইবির গ্রাহকদের মধ্যে ঢাকার আশপাশ ছাড়া কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন জানান, এই ধরনের ঝড় আসলে আমাদের কেউ দেখেনি। প্রায় সারারাতই ঝড় হয়েছে। ফিডারগুলো একটা পর্যায়ে এক এক করে সব বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি গ্রিডও বন্ধ হয়ে গেছিল। কোথাও ১৩২ লাইন ট্রিপ করে, কোথাও ওভার ভোল্টেজে ট্রান্সফরমার ট্রিপ করে। এতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর আমাদের অসংখ্য খুটি ভেঙে গেছে। প্রায় ১২ লাখ গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্ত। সকাল থেকে টিমগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ শুরু করেছে। আস্তে আস্তে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক করা হচ্ছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আমাদের সমস্যা হয়েছে। ভোলা থেকে শুরু করে সুন্দরবন পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়েই চলেছে ঝড়ের তান্ডব। ফলে ক্ষতিও হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন