শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চতুর্থ দিনেও কারফিউ ভেঙে চলছে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২০, ১২:২০ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে গত সোমবার নির্মমভাবে খুন হন জর্জ ফ্লয়েড নামে এক আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক। তার মৃত্যুর এ ঘটনার প্রতিবাদে টানা চতুর্থ দিনে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। শনিবার (৩০ মে) বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
শুক্রবার (২৯ মে) হোয়াইট হাউসের বাইরে হাজার হাজার মানুষ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এদিন বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে মিনেসোটা, নিউইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়া।
জানা গেছে, নিহত জর্জ ফ্লয়েডকে (৪৬) হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভের সময় মিনেসোটা, নিউইয়র্ক এবং আটলান্টায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে কেন্টাকি, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও। এদিকে মিনেসোটায় কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভের খবরও পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলস থেকে শুরু করে নিউইয়র্কেও শুরুর দিকে বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। তবে সিএনএনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের জেরে পুলিশ স্টেশনে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ এভাবে কারো সঙ্গে নির্মম আচরণ করতে পারে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল কৃষ্ণাঙ্গের ওপর এ ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
মিনেসোটা গভর্নর টিম ওয়ালেজ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাময়িকভাবে কারফিউ জারি করেছেন। সে অনুসারে কেউ রাত ৮টার পর রাস্তায় বের হলে কিংবা জনপরিসরে থাকলে জেল এবং এক হাজার ডলার জরিমানা করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৫ মে) শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিনিয়াপোলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। এসময় ফ্লয়েড বলেছেন, ‘প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, ‘আমাকে মারবেন না।’
ফ্লয়েডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০ ডলারের একটি জালনোট ব্যবহার করেছিলেন। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার আগে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, হাতকড়া পরাতে বাধা দিচ্ছিলেন তিনি। তবে পুলিশের সঙ্গে ফ্লয়েড কীভাবে সংঘর্ষে জড়ালেন তা ভিডিওতে দেখা যায়নি।
এ ঘটনায় ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু রাখা ৪৪ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনসহ চারজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে ডেরেক শভিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১ জুন) তার আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন। এ ঘটনাকে তিনি ‘ভয়ানক, ভয়ানক জিনিস’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মিনেসোটায় বিক্ষোভ মেনে নেবেন না তিনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। এসময় তাদের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের ছবি ছিল এবং তারা স্লোগান দেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’
বিক্ষোভের ঘটনায় হোয়াইট হাউস সাময়িকভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয় এবং এর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রবল বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার ও শনিবার দু’দিন রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয় মিনিয়াপোলিস এবং সেইন্ট পল শহরে। কিন্তু শুক্রবার কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। এসময় একাধিক ভবন এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, শিকাগো, ডেনভার, হাউসটন, লুইভিল, ফিনিক্স, কলাম্বাস এবং মেমফিসসহ অনেক শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সহিংস সংঘর্ষ হয়।
আটলান্টায় সংবাদমাধ্যম সিএনএনের দপ্তরের পাশেই ভবনে ভাঙচুর এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৮ মে) মিনিয়াপোলিসের একটি পুলিশ স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন