ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতের জের এখনো বয়ে চলেছে উপকূলবাসী। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, রোয়ানুর আঘাতে প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট ভেঙে যাওয়ার পর এখনো তা মেরামত না করায় কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় এখনো চলছে জোয়ার ভাটা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন ল-ভ- হয়ে যাওয়া এ বাঁধের কারণে দিনদিন নতুন নতুন এলাকা নোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়ছে সেখানকার হাজার হাজার পরিবার। বেড়েই চলেছে জনদুর্ভোগ। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের জোয়ারে পানিতে গোসল করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কুতুবদিয়া উপজেলায় তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, রোয়ানুর তা-বে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পোল্ডারে অন্তত ৩৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের জন্য অর্থবরাদ্দ চেয়ে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দপ্তরে লিখিত সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টের বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। তিনি মনে করছেন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করা যাবে।
উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধের ভাঙা-গড়ার প্রসঙ্গ অনেকদিনের পুরনো। এর সাথে রয়েছে নদীভাঙন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব কাজে যত অর্থ ব্যয়িত হচ্ছে তাতে কাজের কাজ যা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি হচ্ছে অপচয়। এই অপচয় যেন এক ধরনের অনিবার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একটি কায়েমি স্বার্থবাদী মহল যেন গেড়ে বসে আছে। দেখা যায়, বর্ষা এলেই নদী ভাঙন প্রতিরোধে যেমন তৎপর হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্টরা, তেমনিভাবে উপকূলীয় বাঁধের সংস্কারও শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় হলেই দেখা যায় বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে আর সেই সাথে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে, আর কিছু মানুষের ভাগ্য খুলছে। পত্র-পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি ইতোমধ্যেই হয়েছে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছু হয়েছে বা হবে এরকম কোন আলামত স্পষ্ট নয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম নেই। রোয়ানুর পর অনেকদিন কেটে গেছে। মানুষের দুর্ভোগের কোন অবসান হয়নি। এখন পর্যন্ত কাজ শুরুই করা যায়নি। এখন চলছে বর্ষাকাল। স্বাভাবিকভাবেই সাগরে চলছে উত্তাল অবস্থা। এখন সেখানে কাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরপর দেখা যাবে কাজ শেষ হতে না হতেই সাগরের জোয়ারের টানে সব ভেসে গেছে। তখন আবার শুরু হবে পুরনো অপসংস্কৃতি, টাকা বরাদ্দ, পুনঃনির্মাণ। প্রতি বছরের মত এবারেও ১৯ জুলাই প্রকাশিত এক সচিত্র খবরে বলা হয়েছে, রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় শহর রক্ষাবাঁধের সংস্কার কাজ চলছে প্রায় পানির ভেতর। বাঁধের ঢালে জিও টেক্সটের ওপর ব্লক বসানো হচ্ছে। এক মাথায় ব্লক বসানো হচ্ছে আর অন্য মাথা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। পানির মধ্যেই আন্দাজে ব্লক বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশেই আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙন ঠেকানোর কোন তৎপরতা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, পানি নেমে গেলে খারাপ জায়গাগুলো ঠিক করে দেবে। সঙ্গত বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, পানি যখন ছিল না তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড কি করেছে? দেশজুড়েই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের অবস্থা একই রূপ। এটাতো সকলেরই জানা, প্রতিবেশীর বৈরী পানিনীতির কারণে শুষ্ক মওসুমে পানি শূন্যতা এবং বর্ষায় বন্যা যেন বাংলাদেশের নিয়তি লিখনে পরিণত হয়েছে। সরকারের উদ্যোগের অভাব পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। এই বাস্তবতায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ বা নদীভাঙন ঠেকানো কাজকে কেবলমাত্র বর্ষা মওসুমের জন্য রেখে দেয়ার যৌক্তিকতা কি সেটিও বোঝা কষ্টকর।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাঁধ নির্মাণ বা নদী রক্ষার জন্য যে টাকা খরচ হচ্ছে তা জনগণেরই টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও কর নির্ধারণ করেই এসব টাকা তোলা হয়। সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি অনিয়মের নামে কারো কারো পকেটে এ অর্থের একটি অংশ চলে যায় বা যাচ্ছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অবশ্যই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলকে যথেষ্ট সতর্ক ও যতœবান হতে হবে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের নামে তামাশা করার কোন সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ অগ্রধিকার দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদীভাঙন রোধ করতে হবে। জনগণের অর্থের অপচয়রোধ এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সকলে আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন