শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুরস্কে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ডিক্রি জারি

প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড বাহিনী বিলুপ্ত স্বপদেই থাকছেন সেনা ও
গোয়েন্দা প্রধান
ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি ডিক্রি জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। গত বুধবার তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারির পর এটি এরদোগানের প্রথম ডিক্রি জারি। গত শনিবার জারি করা ওই ডিক্রির মাধ্যমে তুরস্কে এক হাজারের বেশি বেসরকারি বিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই বিদ্যালয়গুলো ফেতুল্লাহ গুলেনের প্রতিষ্ঠিত হিজমত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে সরকার। জরুরি অবস্থার মধ্যে সরকার ও প্রেসিডেন্ট যে কোনো আইন চালু করতে পারেন। এক্ষেত্রে পার্লামেন্টে আইনটি পাসের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ক্ষমতাবলে সরকার প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো অধিকার ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান ১ হাজার ৪৩টি বেসরকারি স্কুল, ১ হাজার ২২৯টি দাতব্য সংস্থা ও ফাউন্ডেশন, ১৯টি বাণিজ্যিক ইউনিয়ন, ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩৫টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি।
এছাড়া এরদোগান একটি আইনের অনুমোদন দিয়েছেন, যার মাধ্যমে বিচারকের কাছে হাজির করার আগ পর্যন্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ৩০ দিন পর্যন্ত আটক রাখা যাবে। আগে সর্বোচ্চ চারদিন পর্যন্ত আটক রাখার বিধান ছিল। মূলত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে অধিক তদন্তের সুযোগ তৈরির জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদিকে তুর্কি সরকারের উদ্যোগটির সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা। সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর গত বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে টানা ৫ ঘণ্টা বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। বৈঠক শেষ করে স্থানীয় সময় মধ্যরাতের কিছু আগে তিনি তিন মাসের জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন। ন্যাটো সদস্য তুরস্কে গত দেড় দশকে এটাই প্রথম জরুরি অবস্থা জারি। অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের ক্ষমতা বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, পুলিশ, গণমাধ্যম, শিক্ষা খাতসহ ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফেতুল্লাহ গুলেনের সমর্থক সন্দেহে হাজার হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে তুর্কি সরকার। ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক, বহিষ্কার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের কর্মী রয়েছেন প্রায় ২১ হাজার।
অপর খবরে বলা হয়, তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে না পারলেও সেনাবাহিনী প্রধান হালুসি আকার এবং গোয়েন্দা বাহিনী প্রধান হাকান ফিদান তাদের দায়িত্বে বহাল থাকছেন। গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছিলেন গোয়েন্দাপ্রধান ফিদান অভ্যুত্থানচেষ্টা ভুন্ডুলে যথাযথভাবে কাজ করেননি। পদত্যাগ করবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষাপটে ফিদান প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনীয় সব কিছু তিনি করতে প্রস্তুত। তবে ফিদানের সাথে বৈঠকের পর এরদোগান বলেছেন, তিনি হাকান ফিদান এবং চিফ অব স্টাফ হালুসি আকারকে পদত্যাগ করতে বলবেন না। তারা তাদের দায়িত্বে বহাল থাকবেন। এরদোগান বলেন, ফিদান ও আকার তাকে বলেছেন তারা থাকবেন না পদত্যাগ করবেন সেটা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এরদোগান বলেন, মাঝপথে ঘোড়া বদলানো ঠিক নয়। তিনি এর মাধ্যমে অভ্যুত্থানচেষ্টার পর পুনর্গঠন কাজ শেষ করার ওপর জোর দেন বলে খবরে বলা হয়। অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় বিদ্রোহীরা জেনারেল আকারকে আটক করেছিল। পরে তাকে মুক্ত করা হয়। আর ওই সময় এরদোগান চেষ্টা করেও ফিদানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি। ডেইলি সাবাহ।
এদিকে, তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর এ বাহিনীর প্রায় বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করে সরকার। প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্য সংখ্যা ২৫০০ ওপরে হলেও ২৮৩ জনকে আটক করেছে সরকার। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম রাষ্ট্রীয় এক গণমাধ্যমকে জানান, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনী আর থাকছে না। এ রেজিমেন্ট রাখার আর কোনো প্রয়োজন নেই। সামরিক এ অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই তুরস্কে ব্যাপক ধরপাকড়ের খবরে পাওয়া গেছে। গত বুধবার জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এ ছাড়া এরদোগানের গত শনিবার জারি করা আদেশ প্রকাশ করেছে আনাদলু বার্তা সংস্থা। এতে সন্দেহভাজনদের আটকের মেয়াদ চার দিন থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ দিন করা হয়েছে। অভ্যুত্থানচেষ্টার পূর্ণ তদন্তে এটা সাহায্য করবে বলে ওই আদেশে বলা হয়েছে। আনাদোলু, বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন