শ্বাসতন্ত্রের রোগের সঙ্গে ধূমপানের সমানুপাতিক সম্পর্ক থাকার প্রমাণ কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে। কভিড-১৯ রোগটিও শ্বাসতন্ত্রের এবং ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এই রোগের মাত্রা কঠিন হওয়ার অনেকগুলো দৃষ্টান্ত রয়েছে। ধূমপায়ীদের কাছাকাছি যারা থাকেন তাদেরও এ রকম বিপদ রয়েছে।
যারা ধূমপান করেন তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ধূমপায়ীদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কারণে করোনার সংক্রমণ খুব তাড়াতাড়ি ঘটে। সমীক্ষায় দেখা যায়, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীরা প্রায় তিনগুণ বেশি জটিল অবস্থা নিয়ে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে। এর ফলে ধূমপায়ীদের মধ্যে ক্রমেই ভীতি বাড়ছে।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনে করোনার ভয়ে তিন লাখেরও বেশি ধূমপায়ী সিগারেট, গাঁজা বা ই-সিগারেট সেবন ছেড়ে দিয়েছেন।
ইউগোভ এবং ধূমপান বিরোধী ক্যাম্পেইন গ্রুপ অ্যাকশন অন স্মোকিং হেলথের (অ্যাশ) যৌথ জরিপে উঠে এসেছে, আরও ৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এরই মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য তাদের মধ্যে কতোজন সফল হয়েছেন, তা জানা না গেলেও ২৪ লাখ ধূমপায়ী ধূমপান কমিয়ে দিয়েছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে।
১ হাজার ৪ জনের মধ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই নমুনার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মোট ধূমপায়ী জনসংখ্যা সম্পর্কে আনুমানিক হিসাব করা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রণকারীদের ২ শতাংশ জানিয়েছেন করোনাভাইরাসের কারণে তারা ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। ৮ শতাংশ ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেছেন; ৩৬ শতাংশ ধূমপান কমিয়ে দিয়েছেন, আর ২৭ শতাংশ বর্তমানে ছেড়ে দেয়ার পর্যায়ে আছেন।
এছাড়া ধূমপান ছেড়ে দেয়া লোকদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ বলেছেন, তাদের নতুন করে ধূমপান শুরু করার আর সম্ভাবনা নেই। যদিও ৪ শতাংশ বলেছেন, এই মহামারীর কারণেই তারা মূলত ছেড়ে দিয়েছেন। এটা সাময়িক বিরতিও হতে পারে।
অ্যাশের চেয়ারম্যান ড. নিক হপকিন্স ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একজন শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ধূমপান রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সব ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ এর রোগীদের মধ্যে ধূমপায়ীদের অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে- এমন তথ্য-উপাত্ত দিন দিন বাড়ছেই।
তিনি আরো বলেন, ধূমপান ছেড়ে দিলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসের সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে এ অভ্যাস ছেড়ে দেয়া জরুরি। কারণ এখন হাসপাতালে যেতে পারাটা কঠিন হয়ে পরেছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ডিরেক্টরস অব পাবলিক হেলথের তামাকজাত পণ্য বিষয়ক প্রধান রুথ টেন্যান্ট বলেন, ধূমপান ছেড়ে দেয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কখনো আসেনি। সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি চাইলে একমাত্র ধূমপান ছেড়ে দিলেই অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৮ হাজার মানুষের। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে ৩ লাখ ব্রিটেনবাসী।