শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেনা নামিয়ে বিক্ষোভ দমনের হুমকি ট্রাম্পের

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা গভর্নরদের প্রতিবাদ পুলিশের গুলিতে চোখ হারালেন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে ফ্লয়েডকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ক্ষুব্ধ করেছে আমেরিকাবাসীকে। ফলে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ভুলে দেশজুড়ে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন প্রতিবাদীরা। ন্যাশনাল গার্ডও এই বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হওয়ায়, রাজপথে সেনা নামিয়ে সেই বিক্ষোভকে ‘ঠান্ডা’ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছেন কয়েকজন গভর্নর। এর মধ্যেই মঙ্গলবার অগ্নিগর্ভ বিক্ষোভের ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছেন এক সাংবাদিক। এদিকে, এ দিনই প্রকাশ হয়েছে ফ্লয়েডের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। ফ্লয়েডকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাতে জানানো হয়েছে।

‘আই কান্ট ব্রিদ’, ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ এই দুই স্লোগানই এখন আমেরিকাবাসীর প্রতিবাদের ভাষা। এই অশান্তির আঁচ ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও। কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডের মৃত্যু অকুতোভয় করে তুলেছে আমেরিকাবাসীকে। হোয়াইট হাউসের বাইরের চত্বরের অশান্তি আঁচ উত্তপ্ত করল অন্দর মহলকেও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের কিছু আগেই বিক্ষোভকারীদের দমাতে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে হয় পুলিশকে। পুলিশ ও মিলিটারির সঙ্গে রীতিমতো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উত্তেজিত জনতা। কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভের আগুন নেভাতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। বিক্ষোভ থামাতে শেষ অস্ত্র ব্যবহার করতে চান ডনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রসিডেন্ট বলেছেন, ‘প্রতিটি স্টেটের গভর্নরকে বলছি, আপনারা রাস্তায় বিপুল পরিমাণে ন্যাশনাল গার্ড নামান। আপনারা যদি তা না করেন, তা হলে আমি সশস্ত্র সেনা ও আইনরক্ষকদের রাস্তায় নামাতে বাধ্য হব। তারা এই দাঙ্গা, লুঠতরাজ, হিংসা, সম্পত্তি নষ্ট বন্ধ করবেন।’

একাধিক গভর্নর ট্রাম্পের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির গভর্নর জে ইন্সলি বলেছেন, ‘বারবার প্রমাণিত হয়েছে, ট্রাম্প শাসন করতে পারেন না। তিনি অযোগ্য। তিনি কেবল মিথ্যা বীরত্ব দেখাতে পারেন। নিজের ভীরুতা ও অযোগ্যতা ঢাকার জন্য তিনি চরম ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন।’ ওরেগনের গভর্নর কেট ব্রাউন বলেছেন, ‘আমি বিক্ষোভ থামাতে ন্যাশনাল গার্ড নামাবো না। রাস্তায় সেনা নামিয়ে হিংসা থামানো উচিত নয়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই হুঁশিয়ারি টলাতে পারেনি প্রতিবাদীদের। দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুঁড়া মরিচ দিয়ে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন শহরে দফায় দফায় চলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ। মঙ্গলবার অকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়ায় কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অগ্নিগর্ভ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভের ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে চোখ হারিয়েছেন এক সাংবাদিক। দুই সন্তানের মা লিন্ডা টিরাদো নামে ৩৭ বয়সী ওই সাংবাদিকের দাবি, বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়েছে। সে সময় রাবার বুলেট তার চোখে আঘাত করেছে। ফলে চিরদিনের মতোই তার ওই চোখ দৃষ্টি হারালো বলে জানিয়েছেন লিন্ডা।

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিক্ষোভ কভার করতে শুক্রবার ন্যাশভিল থেকে মিনিয়াপলিসে যান ওই চিত্র সাংবাদিক। বিক্ষোভের নানা মুহ‚র্ত ক্যামেরাবন্দি করার সময় হঠাৎ করেই একটি রাবার বুলেট ছিটকে এসে তার চোখে লাগে। লিন্ডা বলেন, ওই মুহ‚র্তে মনে হয়েছিল আমার মুখ বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। অস্ত্রোপচার করে তার চোখ থেকে গুলি বের করা হলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, তিনি ওই চোখে ভবিষ্যতে আর দেখতে পাবেন না।
রাবার বুলেটে লিন্ডার চোখ হারানো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুক্রবার পুলিশের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে আরও অনেক সাংবাদিককে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন দিনে অন্তত ৯০ জন সাংবাদিক পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকরা তাদের পরিচয় পত্র দেখালেও পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। পরিচয় পত্র দেখালে পুলিশ জানায়, এতে তাদের কিছু যায় আসে না। এছাড়া রয়টাসের আরও দুই সাংবাদিক জানান, পুলিশের রাবার বুলেটে তারা বিদ্ধ হয়েছেন। সাংবাদিকরা জানা, পুলিশ তাদের সরাসরি লক্ষ করে হামলা চালিয়েছে।

এরই মাঝে ফ্লয়েডের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণিত করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, ক্রমাগত হাঁটুর চাপে ঘাড়ে ও পিঠে সংকোচনের কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড। মিনিয়াপলিসের এক পুলিশ অফিসার নিরস্ত্র ফ্লয়েডকে মাটিতে ফেলে, হাঁটু দিয়ে ঘাড় চেপে ধরেন। আট মিনিটের উপর এই ভাবে হাঁটুর চাপেই শ্বাসরোধ হয়ে প্রাণ হারান ফ্লয়েড। জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী বেন ক্রাম্প এই রিপোর্ট সামনে এনেছেন। যদিও সরকারি ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে এই রিপোর্টের কোনও মিল নেই। সূত্র: বিবিসি, ডেইলি মেইল, নিউইয়র্ক টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
নাবিল ৩ জুন, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
ট্রাম্পের কারণেই দাঙ্গা বাড়ছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন