করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ও মৃত্যু সত্ত্বেও পাকিস্তানে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। অর্থনীতি বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বাস্তবতা মেনে নিয়ে ‘ভাইরাসের সাথেই বেঁচে থাকার’ জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে জনগণের কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে ইমরান খান বলেন, ‘করোনায় মৃত্যুহার বাড়লেও লকডাউন প্রত্যাহারে পাকিস্তান সরকারের নেয়া পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। কারণ, লকডাউনের কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা অন্যান্য দেশের মতোই তার ভার বহন করতে পারবে না পাকিস্তান।’
দেশটির দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ৫ কোটি ও দিনমজুর শ্রেণির আড়াই কোটি মানুষের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকার নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু এত ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে এই সহায়তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’ লকডাউনের কারণে দেশের ১৩ থেকে ১৫ কোটি মানুষ সরাসরি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে অবস্থা তাতে এই নগদ অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারছি না। আমরা তাদেরকে কত সময় এই অর্থ দিতে পারবো?’ তিনি দেশের জনগণকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান।
ইমরান খান বলেন, ‘এই ভাইরাস আরো বেশি ছড়াবে। দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, দেশে অনেক মানুষ মারা যাবে। কিন্তু মানুষ যদি একটু সতর্ক হয়, তাহলে তারা ভাইরাসটিকে সঙ্গী করেই বাঁচতে পারবেন।’
প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে করোনাভাইরাসের কারণে জারিকৃত লকডাউনের সব নিষেধাজ্ঞা প্রায় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। খুব শিগগিরই দেশটির পর্যটন খাত তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে সিনেমা হল, থিয়েটার ও স্কুল বন্ধই থাকবে।
ইমরান খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনের পক্ষে নই। এতে ১৫ কোটি পাকিস্তানির দুর্ভোগ বাড়বে। ২৫ লাখ অনিবন্ধিত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই লকডাউন পাকিস্তানের নিম্ন আয়ের শ্রেণি-পেশার মানুষদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে চলেছে। তাছাড়া এই লকডাউন দেশের রফতানি, রাজস্ব খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে লকডাউনের শিথিলতার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘গোটা বিশ্ব এই সিদ্ধান্তে এসে একত্রিত হয়েছে যে, ভ্যাকসিন আবিস্কার না হওয়া পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে ছাড় পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আপনাদেরকে এটা মেনেই নিতে হবে যে, এই ভাইরাসের সঙ্গেই আমাদের জীবন চালিয়ে নিতে হবে।’ সূত্র: ডন, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন