বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মদদদাতাদের খোঁজে একাধিক সংস্থা

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা ৩৮ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় মানবপাচার ও ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে খুনের ঘটনায় ৩৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং হত্যার অভিযোগে মামলাটি (নং-০১) দায়ের করা হয়। অন্যদিকে লিবিয়ায় পাচার হওয়া ২৬ বাংলাদেশীর নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার পর আইন-শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

একটি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বনানীসহ বিভিন্নস্থানে রয়েছে এক ডজন ট্রাভেল এজেন্ট নামক আদম ব্যবসায়ী যারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। চাঞ্চল্যকর কোন পাচারের ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন হৈচৈ করে কিছু চুনো পুটি ধরা পড়ে। কিন্ত প্রভাবশালী মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রের সদস্যরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মানব পাচারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। মামলা দায়ের করার পাশাপাশি যারা সাধারন মানুষের জীবন নিয়ে অন্যায়ভাবে ব্যবসা করেন তাদের শনাক্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, দেশের বাইরে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানব পাচারকারী চক্রের মদদদাতাদের নিয়েও কাজ করছে সিআইডি। মানব পাচার মামলার পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি উল্লেখ্য করেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, সিআইডির কাছে মানব পাচারের ৩০০ মামলা তদন্তাধীন। মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে এ অপরাধে মৃত্যুদন্ড থেকে সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। মূলত সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার লোকজন এভাবে ইউরোপে যায়। ওই এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানবপাচার চক্রকে চিহ্নিত। ঢাকায় এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র রয়েছে লিবিয়া বা অন্য দেশে তাদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিকভাবে আইনানগ ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।

লিবিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় দালাল চক্র প্রথমে টোপ ফেলে প্রলোভন দেখিয়ে বলে, আগে টাকা দেয়ার প্রয়োজন নেই, ইতালি পৌঁছে তার পরে টাকাপয়সার লেনদেন হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ত্যাগের পরে তাদের তিন থেকে চারবার বিক্রি করা হয়। তাদের লিবিয়া বা অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জিম্মি করা হয়। পরে তাদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। মানব পাচার তদন্ত সংশ্লিস্ট্র একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ডিগ্রি (পাস কোর্স) পরীক্ষায় ফেল করার পর বাড়ি ছেড়ে চলে যান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দ আইলচারা গ্রামের কামাল উদ্দীন (৫৫)। এরপর ঢাকা থেকে সৌদি আরবে কাজ করতে যান। সেখানে প্রায় দুই বছর রাজমিস্ত্রির কাজ করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। জড়িয়ে পড়েন মানব পাচারে। এ কাজের জন্য তার কোনো লাইসেন্স নেই। বড় বড় প্র্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শতাধিক মানুষকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। এসব লোকজনের বেশির ভাগই লিবিয়ায় গেছেন। ঢাকায় টাইলস মিস্ত্রির কন্ট্রাক্টরের কাজের পাশাপাশি বিদেশে মানুষ পাঠানোর কাজ করেন তিনি। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মানব পাচার চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

পল্টন থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সিআইডির এসআই রাশেদ ফজল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামি হিসেবে ৩৮ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০/৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৮ মে লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে খুন এবং আরও ১১ বাংলাদেশিকে আহত করা হয়। যারা কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় হাজী কামালসহ বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন