৬৫ দিনের প্রজনন মৌসুমের ১৪ দিনের মাথায় শত শত মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্রে। এসব অসাধু ট্রলার মালিক ও আড়ৎদার সমিতি কোটি টাকার লেনদেনে জেলেদের সমুদ্রে নামতে বাধ্য করেছে বলে প্রোতাশ্রয়ে আশ্রয় নিয়ে জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যস্ত অন্তত ২০ জেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এসব তথ্যের সত্যতাও মিলেছে। গত মঙ্গলবার শেষ বিকেলে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় ১০-১২টি মাছ ধরার ট্রলার আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরের দিকে ফিরতে দেখা গেছে।
দেখভালের দায়িত্বে থাকা নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য অফিসের টহলরত কর্মকর্তাদের সামনে দিয়েই সমুদ্রে যাওয়া-আসা করছে জেলেরা। প্রজনন মৌসুম উপেক্ষা করে সমুদ্র থেকে ধরে আনা সামুদ্রিক মাছ প্রকাশ্যে দিবালোকে মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুর ও কুয়াকাটা আড়ৎঘাটে ক্রয়- বিক্রয় করা হয়। আহরণকৃত মাছ পিকভ্যান ও যাত্রীবাহী পরিবহনে দেশের বিভিন্ন এলকায় বাজারজাত হয়। মাছ ধরা থেকে বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই চলমান রয়েছে গোপন ম্যানেজ প্রক্রিয়া। আহরণকৃত মাছ মজুদ ও সংরক্ষণের জন্য মৎস্য বন্দরে একাধিক বরফকলে উৎপাদন হয় বরফ। নদী ও খালে সংরক্ষণের মত মাছ ধরা না পড়লেও নদীর মাছ সংরক্ষণের অজুহাতে কলগুলো বরফ উৎপাদন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরফকল বন্ধের কোন নির্দেশনা নেই জানিয়ে এমন অবাস্তব অজুহাতে এতে সহযোগিতা করছেন উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কোটি টাকার লেনদেনে প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরাসহ বিপণনের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসব বিষয়ে নিয়ে প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়ন কমিটির কলাপাড়া উপজেলা প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, উপজেলা মৎস্য অফিসার মনোজ কুমার সাহা, নৌ-পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ এসআই মাহমুদ ও কোস্টগার্ড নিজামপুর কন্টিনজেন্ট অফিসার নাজমুল আহসান পিপিওসহ মৎস্য অধিদফতরের টহলরত ক্ষেত্র সহকারী নেছার উদ্দিনের সাথে সাংবাদিকদের ধারাবাহিক কথা হলেও প্রত্যেকের ভ‚মিকা ছিল রহস্যজনক। প্রজনন মৌসুম উপেক্ষা করে অসাধু জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সমুদ্রে না গিয়ে প্রজনন মৌসুম পালনকারী সাধারণ জেলেরা। লোক দেখানোর জন্য নৌ-পুলিশ দুয়েকটি ট্রলার জব্দ করলেও বেশিরভাগ মাছধরা ট্রলার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার শেষ বিকেলে কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের প‚র্ব ও পশ্চিমের সমুদ্রে তাকালে দিক-বিদিক ছুটতে দেখা গেছে অন্তঃত ২০টি মাছ ধরার ট্রলার। পূর্নিমা জোঁর প্রাদুর্ভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সৃষ্ট ঊত্তাল সমুদ্র থেকে এসব ট্রলার আন্ধারমানিক মোহনা আসতেছিল।
নির্ভরযোগ্য একাধিক জেলে সূত্র জানিয়েছেন, গত দুইদিনে মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুর ও কুয়াকাটা থেকে বরফ ও প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে অন্তঃত ৫০টি ট্রলার মাছ ধরার উদ্দেশে রাতের অন্ধকারে গভীর সমুদ্রে ছেড়ে গেছে। ট্রলারের আকার আকৃতি ও ধরণ অনুযায়ী (লাল জাল) প্রতিটি ট্রলার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকায় চুক্তিতে সমুদ্রে নেমেছে ওইসব মাছ ধরার ট্রলারগুলো। বর্তমানে যেসব জেলে সমুদ্রে রয়েছে প্রত্যেকেই মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুরের প্রভাবশালী ট্রলার মালিক ও আড়ৎদারদের ছত্রছায়ায় সমুদ্রে নেমেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ও প্রজনন মৌসুম শুরুর দিকে ৫ শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুরের শিববাড়িয়া নদীর পোতাশ্রয়ে নিরাপদ আশ্রয় ছিল। গত দুইদিন ধরে সেখানকার প্রভাবশালী ট্রলার মালিক-আড়ৎদারদের ট্রলার প্রোতাশ্রয়ে দেখা যায়নি। যেসব ট্রলার এখনও পোতাশ্রয়ে রয়েছে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে সমুদ্রে যাবার জন্য। পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন সুযোগ মতো যে কোন সময় সমুদ্রে নামবে।
গত দুইদিনে সাংবাদিকদের একটি অনুসন্ধানী টিম মৎস্যবন্দরে গেলে দেখা যায়, মহিপুরে মজনু গাজীর বরফকল, সুন্দরবন বরফকল, আলীপুরে আনোয়ার খানের বরফকলসহ কুয়াকাটা, আশাখালী এলাকায় কয়েকটি বরফকলে উৎপাদন হচ্ছে বরফ। আর এসব বরফকল থেকে বরফ নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছে জেলেরা। কোস্টগার্ড জানায়, গত সোমবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বরফ উৎপাদনের দায়ে মজনুগাজীর মালিকাধীন গাজী আইসপ্লান্টে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপরও থেমে নেই বরফ উৎপাদন। এ চিত্র শুধু মহিপুর-কুয়াকাটা বন্দরেই নয়। পায়রা বন্দর, রাঙ্গাবালী, মৌডুবী, ফকিরহাট, পাথরঘাটাসহ সমুদ্র উপক‚লের সবর্ত্র একই চিত্র বলে জানা গেছে।
কোস্টগার্ড নিজামপুর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার নাজমুল আহসান পিপিও বলেন, তাদের নৌযান স্বল্পতার কারণে গভীর সমুদ্রে অভিযানে যেতে পারেন না। তবে আলীপুর-মহিপুর বন্দর থেকে কোন মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে দেখেননি বলে দাবি করেন। এসব বিষয়ে কথা হয় কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কান্তির সাথে। তিনি বলেন, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অধিদফতরের একটি ভ্রাম্যমাণ টিম প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়নে টহলরত আছে, বিষয়টি তাদের অবহিত করতেছি।
প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসব বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কলাপাড়া মৎস্য বিভাগ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। তবে তিনি এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এমনটাই জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন