বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

তিন সাহাবীর তাওবা কবুলের কাহিনী

মোঃ কায়ছার আলী | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

তাওবা অর্থ হচ্ছে খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসা ও বিরত থাকা। এর শুরু হয় অনুশোচনা দিয়ে এবং শেষ হয় সৎকাজ ও আনুগত্যের মাধ্যমে। এই পরিপূর্ণ তাওবার মধ্য দিয়েই হৃদয় গুনাহ ও কলুষমুক্ত হয় এবং মানুষকে সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। এটাই হচ্ছে “তাওবাতুন নাসুহা” তথা খাঁটি তাওবা যা হৃদয়কে ক্রমাগত সতর্ক করে এবং কখনো আর গুনাহের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেয় না। সূরা আত-তাহরীমের আট নং আয়াতে “তাওবাতুন নাসুহা” এর কথা বলা হয়েছে। ধন-সম্পদ ও সন্তানাদির মোহ মানুষেকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করে দেয়। মহান আল্লাহ তায়ালা নবী ও মুমিনদের ভালোবাসেন, তাই তাদেরকে অপমানিত করতে চান না। মুমিনরা ভুল করলেও তাদেরকে ভুল-ত্রু টি শোধরানোর সুযোগ করে দেন। নবম হিজরীর জিলক্বদ মাসে বা এর কাছাকাছি সময়ে সূরা আত্-তাওবা নাযিল হয়। এই সুরায় তাবুক যুদ্ধে না যাওয়া বা পিছনে পড়ে থাকা তিন সাহাবীর তাওবা কবুল হওয়ার সোনালী অতীত উজ্জ্বল ঘটনা আজকের লেখার মূল বিষয়। যা বাস্তবিকই খুবই মর্মান্তিক এবং শিক্ষাপ্রদ। সে সময়কার বাস্তব অবস্থা বা কঠিন দুঃসময় মহান রাব্বুল আলামীনের জানা ছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে সমাজের বাস্তবতা বা প্রেক্ষাপট ও বই পুস্তক পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করা একরকম নয়। সেই সময়টা ছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের, গরম ছিল অসহনীয়, যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম ও পানির পরিমান ছিল অপ্রতুল। মুনাফিকী কিংবা ঈমানের দুর্বলতা অথবা অবসাদ ও গাফলতির কারণে তাদেরকে ভৎসনা করা হয়েছে। ভীষণ ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কষ্ট ও খাদ্যের অভাবে তারা দুজন মানুষ অর্ধেক অর্ধেক করে একটি খেজুর ভাগ করে খেতেন। আবার কখনো কখনো একটা খেজুর ভাগ করে খেতেন। একজন একটু চুষে কিছু পানি পান করে নিতেন। আবার দ্বিতীয়জন তার কিছু অংশ সামান্য চুষে তার পানি খেয়ে নিতেন। পিপাসায় কাতর হয়ে তারা মনে করল ঘাড় বুঝি ভেঙ্গে যাবে। কিছু কিছু লোক নিজেদের উট জবাই করে থলিতে জমা করে রাখা পানি পান করত। কিছু পানি বুকের সাথে জড়িয়ে পরের জন্যে বাঁচিয়ে রাখত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে, “তাদের মধ্যকার একটি দলের মন বাঁকা হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল”। তারা রাসূলের দ্বীনে সন্দেহ পোষন করতে শুরু করল। যে কষ্ট তারা ভোগ করছিল তার কারণে এবং সফর ও যুদ্ধের কষ্টের কারণে তাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি হচ্ছিল। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর করুণার দৃষ্টি দিলেন। তারা দ্বীনের ওপর আবার দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এই কঠিন পরিস্থিতিতে মুসলিম জনগোষ্ঠির মাঝে যে বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষের জন্ম হয় তার চিত্র আমাদের সামনে আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সেসব মানুষের ঈমানের বিভিন্ন পর্যায়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরে আমাদেরকে পাকাপোক্ত ঈমানদার বানানো। ইসলামের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা, দ্বিধাসংশয় সৃষ্টি, জিহাদ থেকে আরামে থাকা, মুনাফিকীতে ভরপুর এবং কেউ কেউ নিজেদের গুনাহের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। কা’আব ইবনে মালেক, হিলাল ইবনে উমাইয়া ও মুরারা ইবনে রুবাই (রাঃ) এরা তিনজনই ছিলেন সাচ্চা মুমিন। ইতোঃপূর্বে তারা নিজেদের নিষ্ঠা ও সততার প্রমান বহুবার দিয়েছেন। দ্বীন ইসলামের জন্য তারা কুরবানীও করেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয়জন বদরে সাহাবী। বদরের ঘটনা মানুষের মনে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছে। যদিও বদরের যুদ্ধে শরিক না হওয়ার জন্য কাউকে শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়নি। প্রথমজন বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহন না করলেও “বাইয়াতে আকাবা” রাতে নবীর পাশে উপস্থিত ছিল। রাসূলের পাশে বসে আনুগত্য ও অঙ্গীকারের শপথ করেছিল। বদর ছাড়া আর সবকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এই তিন সাহাবীর ব্যাপারে নবী (সাঃ) তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে অনুপস্থিতির জন্য সিদ্ধান্ত মূলতবী রাখলেন। কা’আব ইবনে মালেক (রাঃ) তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহকে বার্ধক্য অবস্থায় অন্ধ হয়ে গেলে পথ প্রদর্শনের সময় নিজের দুঃখভরা কাহিনীটি বলতে লাগলেন, “আমি তখন এত সম্পদের অধিকারী ছিলাম যে অন্য কোন সময় আমার হাতে এত মালসম্পতি ছিল না। আল্লাহর কসম তখন দুটো সওয়ারীর উট মজুদ ছিল। নবী (সাঃ) যখন কোন যুদ্ধের জন্য বের হতেন তখন তিনি ভিন্ন এক কৌশল অবলম্বন করতেন। যেদিকে যাবার এরাদা করতেন সেদিকে না গিয়ে অন্য দিক দিয়ে মদীনা থেকে বের হতেন। কিন্তু তিনি তাবুকের যুদ্ধে এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করেননি। পরিস্কার করে বলে দিলেন তিনি সিরিয়া অভিমুখে রোমানদের সাথে যুদ্ধে করার জন্য যাবেন। প্রচন্ড গরম, দীর্ঘ রাস্তা, পথে ছিল পাহাড় মরুভূমি এবং শত্রু র সংখ্যা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। নবী (সাঃ) বললেন, “সবাই যেন দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করে।” মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা ছিল অনেক এবং নাম সংরক্ষনের জন্য কোন খাতাপত্র ছিল না। যদি কোন মানুষ অনুপস্থিত থাকতে চাইত, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তা প্রকাশ করার জন্য কোন ওহী না আসত সে অনুপস্থিত থাকতে পারত। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন