শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাস জীবন

আমিরাত থেকে অবৈধ প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরা শুরু

নতুন পাসপোর্টের জন্য চলছে হাহাকার

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২০, ৪:৩২ পিএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা দেশে ফিরতে শুরু করেছে। কোনো প্রকার জরিমানা ছাড়াই আগামী তিন মাস দেশে ফেরার সুযোগ পাচ্ছে অবৈধ কর্মীরা। দেশটির রাষ্ট্রপতির এক সার্কুলারে এ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে লাখ লাখ বাংলাদেশি কর্মীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে দেশটি থেকে জরিমানা ছাড়াই ২৭৩ জন অবৈধ প্রবাসী কর্মী এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট যোগে ঢাকায় পৌঁছেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশটিতে লাখ লাখ বাংলাদেশি কর্মী ঘরবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশটিতে হাজার হাজার বাংলাদেশি ক্ষুদ্র প্রবাসী ব্যবসায়ীরাও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কনস্যুলেট সেবা বন্ধ থাকায় নতুন পাসপোর্টের জন্য হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীর মধ্যে চলছে হাহাকার। প্রায় তিন মাস দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট না পাওয়ায় অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রবাসী কর্মী চার পাঁচ মাস যাবত কাগজপত্র জমা দিয়েও নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছে না। এসব ভুক্তভোগি কর্মী দূতাবাসে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। তারা বিশেষ ব্যবস্থায় অবিলম্বে নতুন পাসপোর্ট সরবরাহের জোর দাবি জানিয়েছেন। দুবাই থেকে একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিএমইটি’র সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে ১ হাজার ৯৮৯ জন কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। শুরু থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশটিতে ২৩ লাখ ৭২ হাজার ১৭২জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটি থেকে প্রবাসী কর্মীরা ৪০৪ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে ওমান থেকেও একটি ফ্লাইট যোগে ৮জন মহিলা গৃহকর্মীসহ ১৮০ জন অবৈধ কর্মী দেশে ফিরেছে। বিমান বন্দর কল্যাণ ডেস্ক এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল সাবাহ জানিয়েছেন, তারা অভিবাসী অধ্যুষিত দেশ হিসেবে আর থাকতে চাচ্ছেন না। এক ঘোষণায় তিনি জানিয়েছেন, দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে।
কুয়েতে মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ পর্যন্ত অভিবাসী রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের তান্ডব বেড়ে যাওয়া এবং তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে দেশটিতে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন।

আজ শুক্রবার রাতে কুয়েত থেকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট যোগেও প্রায় দু’শতাধিক অবৈধ প্রবাসী কর্মীর দেশে পৌঁছার কথা । উল্লেখিত দেশ তিনটিতে এখনো প্রচুর অবৈধ কর্মী দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে।

উল্লেখ্য, গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এক নতুন আদেশ জারি করায় অবৈধ প্রবাসীরা এ সুযোগ পাচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে এক ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। ঘোষণায় বলা, হয় গত ১ মার্চের পূর্বে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা আগামী ৩ মাসের মধ্যে আমিরাত ত্যাগের সুযোগ পাবেন।
যারা এ সুযোগ গ্রহণ করে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে তারা পুনরায় দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। গত ১৮ মে থেকে তিন মাসের মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশিরা দেশে ফেরার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশ দূতাবাসের আরও এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা ভিসা ট্রান্সফার করতে পারবেন। যারা ভিজিট ভিসায় আমিরাতে অবস্থান করছেন তারা চাকরির ভিসাও নিতে পারবেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভব হলে এই মুহূর্তে দেশে ফিরে না গিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস।
অপর দিকে,অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ওমান সরকারও দেশটিতে অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানীর উচ্চ পর্যায়ে অভিবাসী কর্মীদের চুক্তির মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরের পর আর না বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশটির আদালত। দেশটিতে স্থানীয় নাগরিকদের চাকরিতে বেশি বেশি নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে দেশটিতে ঘরবন্দি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন