বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আইসিইউ’র জন্য হাহাকার

করোনা চিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার চলছে। একটা আইসিইউ বেড যেন সোনার হরিণ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কান পাতলেই এখন শোনা যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য রোগীর স্বজনদের হাহাকার।
সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। কেবল চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের কিছুই করার থাকে না। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে রোগীকে মরতে দেখার চিত্র এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে আগে থেকেই আইসিইউর সঙ্কট ছিল। গত কয়েক সপ্তাহে রোগী যেমন বেড়েছে, তেমনই বাড়ছে আইসিইউর চাহিদা। তিনি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আসাদুল মজিদ নোমান বলেন, এখানে প্রতিটি আইসিইউর জন্য ভীষণ চাপ থাকে। নিদেনপক্ষে একেকটি বেডের জন্য অপেক্ষায় থাকেন পাঁচজন করে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার বণিক বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা থাকে না বললেই চলে।
পরিস্থিতি এতোই সঙ্কটপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে রোগীদের চিকিৎসা করে চিকিৎসকরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তারাই পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলে আইসিইউ পাননি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) হেড অব অ্যাকাউন্ট মো. মনিরুজ্জামান মারা গেছেন আইসিইউয়ের অভাবেই। তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে কোনও আইসিইউ বেড খালি না থাকায় অন্যত্র নিতে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পরই তিনি মারা যান।

খন্দকার সাহিদুল ইসলাম নামের একজন শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২১ মে ঢামেকে ভর্তি হন। পরে তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তিনি ৩১ মে মারা যান। তার ভাই খন্দকার মনিরুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘চিকিৎসকরা তাকে বারবার আইসিইউতে নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। অনেক মানুষের কাছে ধরনা দিয়েছি। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা নিজেরাও আইসিইউর জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন, তবুও পাওয়া যায়নি। আইসিইউর অভাবেই মারা গেছে আমার ভাই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৩৯৯টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২১৮টি। ঢাকা বিভাগের অন্য জেলায় রয়েছে ৪৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪টি, রাজশাহী বিভাগে ২৮টি, খুলনা বিভাগে ১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৮টি, সিলেট বিভাগে ১৬টি এবং রংপুর বিভাগে রয়েছে মাত্র ১৩টি আইসিইউ বেড।
রাজধানীতে করোনা চিকিৎসা দেয়া হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ২৬টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭টি, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৮টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১৬টি, রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ৩টি, একই হাসপাতালের মিরপুর শাখায় ৩টি, সাজিদা ফাউন্ডেশনে ৪টি, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি ইমপালস হাসপাতালে রয়েছে ১৪টি আইসিইউ।

মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে ৫ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। করোনা রোগীর চিকিৎসার হাসপাতাল চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কারণ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে রোগীদের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা বিল নেয়ার খবর দেশে-বিদেশের মিডিয়াগুলোতে ফলাও করে প্রচার হয়। অতপর সে বিল রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও করোনা বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুর রহমান বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে রাতারাতি আইসিইউ বেড বাড়ানো সম্ভব নয়। এটাই বাস্তবতা। যত আইসিইউ বেড আছে সেগুলোর সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশ থেকে যা যা পারা যায় তা আনার প্রক্রিয়া চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন