শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই নদীগর্ভে ঘর বাড়ি, জমি-জমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন মানুষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে তীব্র হচ্ছে ভাঙন। বিভিন্ন স্থানে নদী কেড়ে নিচ্ছে মানুষের আশ্রয়স্থল। নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন মানুষ। ভয়াবহ নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে, রাস্তা-ঘাট, গাছপালা, মসজিদ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। হারিয়ে যাচ্ছে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত।
নদীভাঙন কবলিত নিঃস্ব মানুষের বুক ফাটা আহাজারি শোনার কেউ নেই। তাদের দুঃখ-দুদর্শা দেখার কেউ নেই। ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে এমন আশ্বাসের বাণী প্রতিবারই শোনায়। তবে বছরের পর বছর যায় ভাঙন প্রতিরোধে কোন কার্যকর উদ্যোগ আর দেখা যায় না। আর যেসব স্থানে বাঁধ বা স্পার নির্মাণ করা হয় সেগুলো দুর্নীতির কারণে নিম্নমানের হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে তা ভেঙ্গে যায়।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিমলায় যমুনার স্পার বাঁধের প্রায় ২১ মিটার ধ্বস নেমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে ক্রমেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি হাট-বাজার বিভিন্ন স্থাপনা। কিন্তু ভাঙন রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া-জাজিরা এলাকা ভয়াবহতম নদীভাঙনের কবলে পড়ে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার ভাঙন রোধে ১ বছরেরও বেশি সময় আগে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প একনেকে চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের পরিপূর্ণ নকশা সম্পন্ন হয়নি। ভাঙন রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এখন জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর কাজও শুরু হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় জনগণের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, টানা বর্ষণে রাক্ষসী যমুনায় তীব্র গতিতে পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিমলা যমুনার স্পার বাঁধের প্রায় ২১ মিটার ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে ক্রমেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি হাট-বাজার বিভিন্ন স্থাপনা। এদিকে যমুনায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর, বেলকুচি উপজেলাসহ চলনবিল অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পাট, সবজি, তিল, পাকা ধানসহ শত শত বিঘার বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে করোনা মহামারীর চেয়ে নদীভাঙনের আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙন রোধে এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলার লৌহজং ও টংগীবাড়ী উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে মসজিদ, বসতবাড়ি ও ফসলিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙন তীব্র্র আকার ধারণ করবে। তখন অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ইতোমধ্যে লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে পদ্মার ভাঙনে ৪/৫টি বসতবাড়ি ও মসজিদ ও ফসলিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খড়িয়া গ্রামের জামে মসজিদটিও নদীগর্ভে বিলীন হবার পথে। হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের কয়েকটি বাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া, গাওদিয়া, শামুরবাড়ি এবং কুমারভোগ এলাকা। এছাড়া টংগীবাড়ী উপজেলার দিঘীড়পাড়, হাসাইল ও বানরী এলাকায়ও পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। দিঘীড়পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বাঁধ চলতি বর্ষা মৌসুমের পূর্বে শেষ করতে না পারলে এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।

শরীয়তপুর থেকে হাবীবুর রহমান হাবীব জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা এলাকা ইতিহাসের ভয়াবহতম নদী ভাঙনের শিকার। ভাঙনের ফলে এলাকার বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি জমি জমা হারিয়ে নিঃস্ব। ভাঙন রোধে প্রায় দেড় বছর আগে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ একটি প্রকল্প একনেক অনুমোদন লাভ করে। তবে এখনো সম্পন্ন হয়নি প্রকল্পের পরিপূর্ণ নকশা। ভাঙন রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর কাজ শুরু হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

নেত্রকোণা থেকে এম আব্দুল্লাহ জানান, নেত্রকোনার খালিয়াাজুরী উপজেলায় খরস্রোতা ধনু নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনের ফলে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের ৫৭টি পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক মাস পূর্বে এ নদীর ভাঙনে গ্রামটির আরও অর্ধশত পরিবার বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এছাড়া গত কয়েক মাস আগেও নদীর ভাঙনে গ্রামের আরও অর্ধশতাধিক বাড়ি বিলীন হয়। ভাঙন ঠেকানো না হলে প্রায় ৬শ’ পরিবারের পুরো গ্রামটিই নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে ১২শ’ মিটার এলাকা বাদ রেখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে দু’দিকে প্রায় ৫ কিলোমিটারব্যাপী এলাকায় স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণ কাজ অনুমোদন পেয়ে কাজ শুরু করেছে। মাঝখানে ১২শ’ মিটার এলাকা উন্মুক্ত রাখায় ওই এলাকার ৪টি গ্রামের শতশত মানুষকে সর্বশান্ত করে ফেলেছে। গত ৫ বছরে এই গ্রামগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বারবার নদী ভাঙনের ফলে নিঃস্ব হয়েছে পরিবারগুলো। এতে দেড় হাজার পরিবার তাদের ২ হাজার একর জমি ও সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। অসময়ে অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। ভাঙনে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ গ্রামে শতাধিক একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজারো একর ফসলি জমি। একদিকে করোনাভাইরাস, অন্যদিকে রমজান মাসের শেষ থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে বেসামাল হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। মানবেতর জীবনযাপন করছে ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো। বিশেষ করে কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলে বেগুন, মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ডাটা, বাদাম, ধান পাটসহ নানাবিধ ফসলের আবাদ করেছে চরবাসী। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তার পেটে চলে যাচ্ছে সেসব ফসল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Wahab Talukdar ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
পুরাতন বাড়ির কথা মনে পরলে মনের ভিতর খুবই কষ্ট দেয় ।
Total Reply(0)
Md. Mofazzal Hossain ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
নদীভাঙন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সব আনন্দ শেষ করে দেয়।
Total Reply(0)
Naim Ul Islam ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ সহায় হোক
Total Reply(0)
Naim Ul Islam ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ সহায় হোক
Total Reply(0)
Abu Talha Jr. ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহতায়ালা আমাদের ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন
Total Reply(0)
Mithen Khan ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
i just lost my word to say..
Total Reply(0)
Tanvir Ahasan ৬ জুন, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
খুবই খারাপ অবস্থা
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ৬ জুন, ২০২০, ১১:৫৬ এএম says : 0
ঘড় যদি চুরি হয় ভিটা থাকে ঘড় থাকে, ঘর যদি জ্বলে যায় কত কস্ট কিন্তু ভিটেমাটি থাকে কিন্ত যদি নদীয়ে ভাংগে তবে ভিটে উচ্ছেদ, আল্লাহ তা'আলার গজব। তাই আসুন আমরা মোসলমান আল্লাহ উয়ালা হই। ইনশাআল্লাহ। আমরা বিপদ থেকে মুক্ত থাকিতে পারিবো। ইনশাআল্লাহ। আমাদের গ্রামের ও অবস্থা নাই নদীয়ে ভাংগিয়া সব নিয়াছে। দীঘলবাক,নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ, সিলেট।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ৬ জুন, ২০২০, ১:৩২ পিএম says : 0
ঘড় যদি চুরি হয় ভিটা থাকে ঘড় থাকে, ঘর যদি জ্বলে যায় কত কস্ট কিন্তু ভিটেমাটি থাকে কিন্ত যদি নদীয়ে ভাংগে তবে ভিটে উচ্ছেদ, আল্লাহ তা'আলার গজব। তাই আসুন আমরা মোসলমান আল্লাহ উয়ালা হই। ইনশাআল্লাহ। আমরা বিপদ থেকে মুক্ত থাকিতে পারিবো। ইনশাআল্লাহ। আমাদের গ্রামের ও অবস্থা নাই নদীয়ে ভাংগিয়া সব নিয়াছে। দীঘলবাক,নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ, সিলেট।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন