সাম্প্রতিক ভায়াল ঘূর্ণিঝড় আম্পান’এর বয়ে আনা জলোচ্ছাস ও জোয়োরের তোড়ে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকুলীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা বোরো ও আউশ সহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসলের ব্যপক ক্ষতি অনেক কৃষককেই সর্বশান্ত করে দিয়েছে। আম্পানের ছোবল হানার সময় দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ১লাখ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধানে মাঠে ছিল। এছাড়া রোপা ও বোনা আউশ সহ এর বীজতলারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাথে বিভিন্ন ধররনের শাক-সবজি সহ রবি ফসলের ক্ষতিও ছিল ব্যপক। বরিশাল ও ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় ফসলের ক্ষতির পরিমান প্রায় ১শ কোটি টাকারও বেশী বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। তবে কৃষি পূণর্বাশন কর্মসূচী এখনো খুবই সিমিত।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি উপক’লীয় জেলার প্রায় সাড়ে ৪শটি স্থানে প্রায় ১শ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ সহ বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমান অন্তত ৫শ কোটি টাকা বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।
তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিপূর্ণ মূল্যায়ন ও পূণর্বাশনে অর্থের চাহিদা নিরূপনের কাজ চলছে। জলোচ্ছাসের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো অবিলম্বে পূণর্বাশন করতে না পাড়লে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ফসলহানি সহ জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পরতে পাড়ে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবীদগন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্পূর্ণ উন্মুক্ত বাঁধগুলো জরুরী ভিত্তিতে মেরামতে নিবিড় কর্মসূচী গ্রহন করেছে বলে জানিয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে উন্মুক্ত বাঁধগুলো পূণর্বাশন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল। তবে এর মধ্যেই বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় সেকাজ কতটুকু মানসম্মতভাবে সম্পন্ন হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর রাতে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’এর ভয়াল থাবার পরে ২০০৯-এ মে মাসে ‘আইলা’ ও ২০১৩’র মে মাসে ঘূর্নিঝড় ‘মহাশেন’এর ছোবলে দক্ষিনাঞ্চল সহ দক্ষিনÑপশ্চিমের উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ এবং বিভিন্ন নদী সংরক্ষন বাঁধের ব্যপক ক্ষতি চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সেসব বাঁধের পরিপূর্ণ পূূণর্বাশন ও মেরামত সম্পন্ন হবার আগেই গত বছর নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ও ২০মে রাতে আরেক ঘূর্নিঝড় ‘আম্পান’ দেশের দক্ষিণ উপক’লে আছড়ে পড়ায় উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ সহ বিভিন্ন নদী তীর সংরক্ষন বাঁধের ব্যপক ক্ষতি করল। যা গোটা উপকুল যুড়ে কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সহ চরম মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলেও শংকিত কৃষিবীদ সহ পরিবশবীদ গন।
ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পটুয়াখালীর বিভিন্ন নদী তীর সংরক্ষন বাঁধের ১৯০টি স্থানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভোলার প্রায় ৪৮টি পয়েন্ট প্রায় ১৩ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বরগুনার ১২৫টি পয়েন্ট ৩৩ কিলোমিটার, বরিশালে ৩০টি স্থানে প্রায় ৩ কিলোমিটার, পিরোজপুরের ১৪টি স্থানে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং ঝালকাঠী জেলার ৪০টি পয়েন্ট প্রায় ৬ কিলোমিটার বণ্যা নিয়ন্ত্রন ও নদী তীর সংরক্ষন বাঁধ সহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপক’লীয় এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক পানি নিয়ন্ত্রন অবকাঠামো সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। উপকূলীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, নদী তীর সংরক্ষন বাঁধ, রেগুলেটর ও ফ্লাশিং স্লুইস সহ বিভিন্ন পানি নিয়ন্ত্রন অবকাঠামোর এ ক্ষয়ক্ষতি মেরামত পূণর্বাশনে যে অর্থের প্রয়োজন তা অবিলম্বে সংস্থানের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহল মহল। পাশাপাশি নিবিড় কর্মসূচী নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকার বাঁধসহ সব পানি অবকাঠামো মেরামত ও পূণর্বাশনের তাগিদ দয়ো হয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এ লক্ষে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে বোডের্ দাখিল করা হয়েছে। সরকারী সিদ্ধান্তের আলোকে সম্ভব স্বল্পতম সময়ে সবকিছু করতে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন