শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের হক রয়েছে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ৭ জুন, ২০২০

পবিত্র কোরআন রক্ত ও বংশ সম্পর্কের মতো ঈমান ও ইসলামকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক সম্পর্ক সাব্যস্ত করেছে এবং এ সম্পর্কের দিক দিয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে অন্য মুসলমানের ভাই বলে উল্লেখ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সমস্ত মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)

অতঃপর এই আধ্যাত্মিক ও ঈমানী সম্পর্কের দরুন প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমান ভাইয়ের কিছু বিশেষ হক আরোপিত হয়। যেমন, তাদের পারস্পরিক সহমর্মিতা ও দয়া, তাদের পারস্পরিক আচারাচরণে বিনম্রতা ও বিনয়, পারস্পরিক কল্যাণকামিতা, সেবা মানসিকতা ও দয়ার্দ্রতা। যেমন এক জায়গায় ঈমানদারদের মহিমা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তারা পারস্পরিক সদয় মমতার আচরণ করে থাকে। (সূরা ফাতহ : আয়াত ২৯)।

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তারা ঈমানী ভাইদের সামনে বিনয়ী ও বিনম্র হয়ে থাকে।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৫৪)। তাছাড়া যেসব বিষয় সম্পর্কের অবনতি ঘটায় এবং অন্তরে পঙ্কিলতা সৃষ্টি করতে পারে কোরআন সেগুলোকে মুসলমানদের জন্য কঠোরভাবে বারণ করেছে। যেমন, কারও সাথে হাসি-মস্করা করা, করও প্রতি উপহাস করা, তামাশা করা এবং কারও প্রতি দোষারোপ করা। কাউকে কোনো মন্দ নামে স্মরণ করা। কারও পেছনে নিন্দা করা। কারও দোষ খোঁজা কিংবা শুধু অনুমান বা ধারণার ভিত্তিতে তেমনিভাবে বিনা যাচাইয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দাঁড় করানো প্রভৃতি এমনি বিষয়, যে ব্যাপারে মানুষ তেমন সতর্কতা অবলম্বন করে না।

যেহেতু এসব বিষয়ে মানুষের অন্তরে কষ্ট ও দুঃখ সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তাই কোরআন মাজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় তাকিদের সাথে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে কোনো মুসলমান তার অন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের সাথে কস্মিনকালেও এ ধরনের আচরণ না করে এবং এ ব্যাপারে যেন পুরোপুরি সতর্কতা অবলম্বন করে।

বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, না পুরুষদের জন্য জায়েজ যে, সে অপর পুরুষদের উপহাস করবে। এমনটি আশ্চর্য নয় যে, (যেসব লোকের প্রতি উপহাস করা হয়, আল্লাহর নিকট) তারা উপহাসকারীদের চাইতে উত্তম হয়ে থাকবে। আর এমনিভাবে কোনো মহিলা অপর মহিলাদের প্রতি উপহাস করবে না। এমনটি আশ্চর্য নয় যে, সেসব উপহাসকারিণী মহিলাদের চাইতে তারাই উত্তম হয়ে থাকবে। আর তোমরা পারস্পরিক একে অপরকে খোঁটা দেবে না। আর মন্দ নামেও ডাকবে না।

ঈমান আনার পর গোনাহর নাম লাগাই দোষণীয়। আর যারা (এই সতর্কতার পরও এসব আচরণ থেকে) বিরত হবে না, তারা অতি বড় ধরনের জালেম। হে ঈমানদারগণ, নানাবিধ ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, কোনো কোনো ধারণা পুরোপুরি পাপ। আর কেউ কারও ছিদ্রান্বেষণ করবে না (তার দুর্বলতা ও ত্রæটি খুঁজে বেড়াবে না) এবং কেউ কারও গীবত (অগোচরে দোষচর্চা) করবে না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ এ কথা পছন্দ করবে যে, নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? অবশ্যই তোমরা একে ঘৃণা করো। অতএব, আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনেক ক্ষমাশীল, অত্যন্ত করুণাময়। (সূরা হুজরাত : আয়াত ১১-১২)।
মুসলমানদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে কোরআন মাজীদ একটি পথ-নির্দেশনা এ-ও দিয়েছে যে, প্রত্যেক মুসলমান তার ভালো দোয়ায় সমস্ত মুসলমান ভাইদেরও শরীক করবে। কোরআনের শেখানো অধিকাংশ দোয়ায় বহুবচন ব্যবহারের এটাও একটা তাৎপর্য। কোরআন মাজীদে এমন বহু দোয়া রয়েছে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে আমার পরওয়াদেগার, আমাদেরকে দান কর দুনিয়াতে কল্যাণ ও এবং আখেরাতের কল্যাণ। আর আমাদেরকে রক্ষা কর আগুনের আযাব থেকে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৭ জুন, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তাআলা ‘আকমালতু লাকুম দ্বী-নুকুম’ বলে পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেই হিসেবে ইসলাম কেবলই ধর্ম নয়; বরঞ্চ পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। আর জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতায় পূর্ণ। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই” (তিরমিজি-১৯২৭)।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৭ জুন, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
ইসলাম প্রত্যেক মুসলমানের ওপর পিতামাতা থেকে শুরু করে প্রতিবেশী, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সকলের প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করেছে। সেই ধারা অনুযায়ী এক মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অপর মুসলমানেরও বেশকিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ৭ জুন, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
প্রত্যেক মুসলমান অন্য মুসলমান ভাইয়ের সাক্ষাতে তার সাথে সালাম বিনিময় করতে হবে। পরস্পর কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে সুখ-দুঃখের খবরা খবরা নিতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় দেখতে যেতে হবে। প্রয়োজনে সেবাশুশ্রূষার নজিরও রয়েছে মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম জীবনাদর্শে। দাওয়াত করলে অযথা ব্যস্ততা না-দেখিয়ে তা সাদরে গ্রহণ করাও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কোনো বিশেষ কাজে যদি কেউ পরামর্শ চায় তবে তাকে সাধ্য অনুযায়ী উত্তম পরামর্শ দিতে হবে।
Total Reply(0)
হৃদয় আমার বাংলাদেশ ৭ জুন, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না ও ভাই।’
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ৭ জুন, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
সজল মোল্লা ৭ জুন, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
প্রত্যেক মুসলমানের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের (জীবনের) উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলমানের উপর হারাম।
Total Reply(0)
নাসিম ৭ জুন, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আলোচ্য বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে এ সমস্ত বিষয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো ইসলামী অনুশাসন মেনে পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা ও সর্বোচ্চ সদ্ভাব রক্ষা করে চলা।
Total Reply(0)
সফিক আহমেদ ৭ জুন, ২০২০, ৮:৫৭ এএম says : 0
এই সুন্দর প্রবন্ধটি লেখার জন্য লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
নাসির ৭ জুন, ২০২০, ৮:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে অপর মুসলমানের হক আদায় করার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
Hosain Ahamed ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৪ এএম says : 0
Masha allah
Total Reply(0)
Byazed Hasan ২১ মে, ২০২১, ১০:০২ এএম says : 0
মা শা আল্লাহ্ । খুব সুন্দর আর্টিকেল
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন