শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেই তমা কনস্ট্রাকশনের মাস্ক কেলেঙ্কারি!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। রাজধানীর একাধিক ওভারব্রিজ নির্মাণ করে কাজের মান নিয়ে নানা কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে। ভুল ডিজাইনে ওভারব্রিজ নির্মাণসহ প্রতিষ্ঠানটির অনেক কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় খরব বের হয়েছে। সেই তমা কনস্ট্রাকশন এবার জোচ্চুরি-জালিয়াতি শুরু করেছে স্বাস্থ্যখাতে। করোনার প্রাদুর্ভাবে মানহীন মাস্ক সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা; আবার সংখ্যায় কম দিয়েও বেশি বিল উত্তোলন করছে। কেলেঙ্কারি ধরা পড়ায় অন্যের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।

স¤প্রতি সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর ডিপার্টমেন্টে (সিএমএসডি) এন৯৫ মাস্ক সরবরাহের সময় কার্টনে চুক্তির তুলনায় কম মাস্ক পেয়েছে সরকারের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানায়, গত ২ মে সিএমএসডিতে ৩ লাখ পিস এন৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায় তমা কনস্ট্রাকশন। কর্যাদেশের বিপরীতে পরদিন প্রথম ধাপে ২৫২ কার্টনে ৬০ হাজার ৪৮০ পিস মাস্ক এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১১ কার্টনে ২৬ হাজার ৬৪০ পিস মাস্ক সরবরাহ করে। প্রতি কার্টনে ১২ বক্স আর প্রতি বক্সে ২০ পিস করে মাস্ক সরবরাহের চুক্তি ছিল।

এনএসআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তমা কনস্ট্রাকশনের পক্ষ থেকে সিএমএসডিতে সরবরাহ করা মাস্কের প্রতিটি লটে কম থাকার অভিযোগ আসতে থাকে। পরে গত বুধবার পুনরায় ৪২০ কার্টনে মোট এক লাখ ৮০০ পিস মাস্কের সরবরাহ আসে। এ সময় তমা ট্রান্সপোর্টেও পিকআপ ভ্যান জব্দ করে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে মাস্কের ২০টি কার্টন তল্লাশি করা হয়। ২০টি করে মাস্ক থাকা ৫টি কার্টনে এক থেকে দুটি করে বক্স কম পাওয়া যায়। পরে গোয়েন্দা সংস্থাটির পক্ষ থেকে সিএমএসডি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তমা কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি মো. মতিউর রহমানকে ডেকে পাঠানো হয়।

পরে প্রতি কার্টনে মাস্ক কম থাকার বিষয়টি জানিয়ে তমা কনস্ট্রাকশনে চিঠি পাঠিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ডেস্ক অফিসার (স্টোর) ডা. সাব্বির আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চালান অনুযায়ী আপনাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া এক লাখ ৮০০ পিস এন৯৫ মাস্ক গ্রহণ করার সময় দৈবচয়নের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণে ২০টি কার্টনের মাঝে ৫ থেকে ৬টি কার্টনে ১ থেকে ২টি বক্স কম পাওয়া যায়। এ ভাবে কার্টনে বক্স না থাকলে আনুপাতিক হারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাস্ক কম পাওয়া যাবে, যা অনভিপ্রেত ও চুক্তিশর্ত লঙ্ঘন। এ কারণে প্রাথমিকভাবে মালামাল গ্রহণ করা হল না।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারী (মেডিক্যাল টিম) মো. মতিউর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবার মালামাল নেয়ার আগে সিএমএসডি কার্টন ও প্যাকেট গুণে নেয়। এসময় যে পরিমাণ মালামাল থাকে, সেটি উল্লেখ করে চালানে স্বাক্ষর করে দেয়া হয়। এবারও সে অনুয়ায়ী প্রথম দুই লটের মাল তারা নিয়েছেন। পোর্ট থেকে আনা পণ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই কম-বেশি বোঝা যায় না। তাই সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ পণ্য গ্রহণ করার সময় যে পরিমান পণ্য তারা পেয়েছেন, তার ওপর চালান গ্রহণ করে থাকেন।

এরআগে, কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানিতে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহারের ঘটনায় এলান করপোরেশনের মালিক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আমিনুল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক।

মামলায় এলান করপোরেশনের লাইসেন্স ব্যবহার করে এসব মাস্কের আমদানিকারক ঢাকার হাজারীবাগের তাজুল ইসলাম ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধেও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। আমিনুলের বিরুদ্ধে গত ২৯ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম। মামলায় ৪৬৮, ৪৭১ ও ১৯৮ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন