শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পবিত্র ভালোবাসা ও আনন্দ বিনিময়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইসলাম সাম্য ও সামাজিকতার ধর্ম। মানবতা ও মানবিকতার ধর্ম। মানবকল্যান এ ধর্মের প্রাণ। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-কে প্রেরণ করা হয়েছে গোটা বিশ্বের কল্যাণকামী হিসেবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)।

তিনি মুসলিম, অমুসলিম, প্রাণিজগৎ এমনকি জড় পদার্থের জন্যও রহমত ছিলেন। একবার তিনি এমন দু’জন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যারা দু’টি উটের ওপর সওয়ার হয়ে কথা বলছিলেন। রাসূল সা. তা দেখে বললেন, ‘তোমরা প্রাণিকে চেয়ার হিসেবে গ্রহণ করো না।’ (মুসনাদে আহমাদ)। এতো গেল প্রাণির কথা। মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য, যেন কষ্ট না পায় সেজন্য তিনি ইহুদী ব্যক্তির দাওয়াতও কবুল করতেন। রাসূলের শিক্ষা হিসেবে মানুষ মানুষের সহযোগিতা করবে, অন্যের মুখে হাঁসি ফুটাবে এটাই উত্তম মানুষের গুণ। তেমনি একটি ঘটনা নিচে উল্লেখ করা গেল।

একলোক প্রতিদিন এক বৃদ্ধার কাছ থেকে আপেল কিনে নিয়ে যেতো। আপেল কেনার পর লোকটি প্রতিদিনের মতো একটা আপেল বের করে ওই বৃদ্ধাকে বলতো, আপনার আপেলগুলো দেখে মনে হচ্ছে আজও পানসে হবে, এই নিন একটা খেয়ে দেখুন, মিষ্টি আপেল বিক্রি করতে পারেন না?
এই কথা বলে নিজের কেনা আপেল থেকে একটি আপেল বৃদ্ধার দিকে বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধা আপেলটি কিছুটা খেয়ে যেই মাত্র বলে, কই মিষ্টিই তো। তখন লোকটি তার প্যাকেটটি নিয়ে চলে যায়। এভাবেই নিয়মিত এ কারবারটি চলে।

প্রতিদিনকার মতো, একবার লোকটির স্ত্রী তার সাথে ছিল। হাঁটতে হাঁটতে স্ত্রী বলল, তুমি প্রতিদিন এই বুড়ি মা’র সাথে মিথ্যে বলো কেন? আমরা তো আপেলগুলো খেয়ে দেখি, বেশ ভালো এবং মিষ্টি।
লোকটি তখন তার স্ত্রী কে বলল, আসলে আপেলগুলো মিষ্টি আমিও জানি। কিন্তু তুমি কি দেখ না কত কষ্টে বুড়ী মানুষটির পেটের খাবার জোটে। আমি না হয় প্রতিদিন মিথ্যা বলে নিজের ভাগের একটা আপেল তাকে দিয়ে দেই।

এদিকে আপেল বিক্রি করা বৃদ্ধা ওই লোকটাকে নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে কিছু আপেল বেশি দেন। তিনি পুত্রসম এ যুবকের ভালোবাসাটুকু হারাতে চান না। আবার তার কৌশলি দানটাও তিনি গ্রহণ করে নিজের হাতের কামাইয়ের পরিচ্ছন্নতা ম্লান করতে চান না। বৃদ্ধা মনে মনে হেসে বলেন, আমি জানি সে প্রতিদিন আমাকে মিথ্যা বলে একটা করে আপেল খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। সে মনে করেছে আমি তা বুঝি না। তাই তার প্রতি ভালোবাসায় এবং তার আদরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, আমার ওজনের পাল্লাটাও তার কেনা আপেলের দিকে ঝুঁকিয়ে দিই। এটা সে ছেলেটি বুঝতে পারে না।

নবী করীম স. বলেন, সবচেয়ে উত্তম নেক আমল মুসলমানের মনে আনন্দ পৌঁছে দেয়া। তাকে ঋণ মুক্ত করা, তার প্রয়োজন পূরণ করা বা জীবিকায় সহায়তা করা অথবা তার বিপদ দূর করার মাধ্যমে। (বোখারী ও মুসলিম)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৩ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
ইসলাম সাম্য ও সামাজিকতার ধর্ম। ব্যক্তিগত ইবাদতের চেয়েও সামাজিক ইবাদতের পরিধি অনেক বিস্তৃত। কোরআন ও হাদিসের বেশির ভাগ অংশজুড়েই রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার তাগিদ।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৩ জুন, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
মানবতা, মানবিকতা ও মানবকল্যাণ এ ধর্মের প্রাণ। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে গোটা বিশ্বের হিতাকাঙ্ক্ষীরূপে পাঠানো হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ১৩ জুন, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো সহমহির্মতার জন্য হাসি-ঠাট্টা করতেন। কখনো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে, কখনো দাওয়াতি কাজ হিসেবে, কখনো বিপদগ্রস্তকে সহমর্মিতা জানাতে, কখনো বহির্বিশ্বে ইসলামী সংস্কৃতি প্রচারের নিমিত্তে। এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Total Reply(0)
বারেক হোসাইন আপন ১৩ জুন, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
আমরা অন্য ভাইকে আনন্দদানের জন্য অনেক কিছু করতে পারি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আনন্দ-ফুর্তি, আন্তরিকতা মানুষের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহই হাসান এবং কাঁদান।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৪৩)
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১৩ জুন, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
ইসলাম হাসি ও আনন্দে পরিপূর্ণ একটি ধর্ম। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসা সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)
Total Reply(0)
চাদের আলো ১৩ জুন, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
ইসলামী ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে অতীতে মুসলিম সমাজে মসজিদের পাশে অনেক (ওয়াক্ফকৃত) আওকাফ তথা সহায়তাকেন্দ্র (কেয়ার সেন্টার) ছিল। সেখানে শুধু অসুস্থ ও গরিবদের জন্য নামে ওয়াক্ফকৃত বিশেষ সেন্টার ছিল। সেখানে নিয়মিত কিছু কারি ও সাধারণ ধর্মীয় বই পাঠক থাকতেন। তাঁদের বেতন-ভাতা নির্ধারিত ছিল। এঁরা অসুস্থ ব্যক্তির আপনজন ছিলেন না। এঁদের কাজ ছিল অসুস্থ ব্যক্তির সামনে এশার পর থেকে ফজর পর্যন্ত এবং দিনের অবসর সময়ে শুধু কোরআন তিলাওয়াত বা অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবাদি পাঠ করা। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন রোগীরা সারা রাত কোরআন তিলাওয়াত শুনতে পারেন। বিছানায় শায়িত অবস্থায়ও ধর্মীয় পুস্তকপঠন শুনে শুনে ইসলামী জ্ঞানার্জন করতে পারেন। ফলে রোগীরা রোগযন্ত্রণা ও বিষণ্নতার কথা ভুলে যেতেন এবং আনন্দিত উপভোগ করতেন।
Total Reply(0)
Mohammad Tanvir ১৩ জুন, ২০২০, ১০:৫০ এএম says : 0
Eto chamotkar article .satty ebhabi jadi Islam er chamotker dik gulu bivinno mahfile /khutbai tule dharto parto . Thank you so much .very attractive and informative article . I would have love to share it on face book
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন