বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অবসান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২০, ১২:৫৬ পিএম

চলে গেলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। শনিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।

তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ছিলেন। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।

তার পিতা অন্যতম জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন। পারিবারিক জীবনে নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৪-১৮ সরকারে নাসিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।

ছাত্রজীবনের প্রথম দিকে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। পরে অল্প কিছু দিন ছাত্রলীগের রাজনীতিও করেন। ছাত্ররাজনীতি ছাড়ার পরে যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের একমাত্র সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন।

মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতে অত্যন্ত সফল। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি নাসিম। ওই নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমকে আবার মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। রোষানলের শিকার হয়েছিলেন ১/১১ সরকারেরও। সে সময় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে কাটান তিনি। পাশাপাশি এই সময়ে চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ১৩ জুন, ২০২০, ৯:৪৭ পিএম says : 0
মোহাম্মদ নাসিম সাহেব প্রথম মন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন পরে ওনাকে অতিরিক্ত হিসাবে গৃহায়ন ও গ্ণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। অবশ্যই ওনার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে পরবর্তীতে ওনাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। তার এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার উপর বিচার করলে বলতে হয় অবশ্যই ওনার ভাল কাজের পুরুষ্কার উনি পেয়েছেন। এরপর মামলার কারনে তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি। কিন্তু তিনি পরে নির্বাচনে ২০১৪ সালে আবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পান। আমি প্রবাস থেকে সেসময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখেছি আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে সরকার গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। পরবর্তী বিএনপি-জামাত সরকার এই পরিকল্পনাকে অকার্যকর করে রেখেছিল সেটাকে আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ওনার মন্ত্রী থাকা কালে সম্পূর্ণ ভাবে বাস্তবায়িত করে প্রচুর সংখ্যক ডাক্তার, নার্সদের নিয়োগ দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ কমপ্লেক্স গুলো চালু করতে সক্ষম হয়েছিল। এখন তিনি কাজ করেছেন এজন্যে ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক, এখনে বিচারের বিষয় হচ্ছে ভুলটা কে করেছে বা কিভাবে ভুলটা হয়েছে। এখন ঢালাও ভাবে মন্ত্রীকে দোষারুপ করাটা কি ঠিক??? জনাব নাসিম সাহেব করোনা মহামাড়িতে আক্রান্ত হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এখন যদি বলা হয় ওনাকে চিকিৎসা জগতের কেরামতিতে কয়েক দিন জীবত রাখা হয়েছিল তার শরীর থেকে করোনা ভাইরাস অপসারিত (করোনায় আক্রান্ত মৃত্যু ব্যাক্তির শরীরে ৩ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত ভাইরাস মরে যায়) করার উদ্দেশ্যে তাহলে কি ভুল বলা হবে। আর সেটাই যদি হয় তাহলে বলেতে হবে তার প্রকৃত মৃত্যু হয়েছে করোনা মহামারিতে। তাহলে ইসলামের প্রথা অনুযায়ী তিনি শহিদের মত করেই মৃত্যু বরন করেছেন, সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহ্‌ ওনাকে পৃথিবীতেই ক্ষমা করে ওনার (আল্লাহ্‌র) কাছে নিয়ে গেলেন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন