করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা ‘ষোলকলা পূর্ণ করেছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সারাদেশে শুরু হয়ে গেছে লাশের মিছিল। এবার সবিনয়ে জানতে চাই, ‘কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপ কে পাবে? তিনি বলেন, এখন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না, তার উপর এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি গোষ্ঠী কিংবা সংস্থার জন্য একপ্রকার দখলে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, অসুস্থ অবস্থায় এসে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে ঘুরে ঘুরেই জীবন দিতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। করোনা উপসর্গে অসুস্থরা দিনরাত ঘুরেও পরীক্ষাটি পর্যন্ত করাতে পারছে না, এদিকে মর্গে লাশের হিসেবের সংখ্যার সাথে মিলছেনা সরকারি হিসেব। কবরস্থানে সারিবদ্ধ ভাবে খোঁড়া হচ্ছে গণকবর। সত্যিই এক ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে চারিপাশে। তাই মৃত্যুর হার কমাতে এখনি সর্বসাধারণের জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ বেড ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করুন। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গেলেই শোনা যায় আইসিইউ’র জন্য স্বজনদের হাহাকার। দেখা যায় হাতে পায়ে ধরে মিনতির চিত্র। সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হন চিকিৎসকরা। কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদেরও। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে রোগীকে মরতে দেখার চিত্র এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। খোদ চিকিৎসকরাই পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলেই আইসিইউ পাননি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) হেড অব অ্যাকাউন্ট মো. মনিরুজ্জামান একই কারণে মারা যান। শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে ভর্তি হতে হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে কোনও আইসিইউ বেড না থাকায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পরই তিনি মারা যান।
তিনি বলেন, এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আরও আছে, কিডনির জটিলতায় অসুস্থ অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারকে নিয়ে একের পর এক (মোট আটটি) হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করতে হলো। অপরদিকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যিনি হর্তাকর্তা, স্বয়ং তিনি এবং তার পরিবারই পেলেন না যথাযথ চিকিৎসা! করোনা আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতাল ঘুরেও সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আলমদী গ্রামের মেধাবী ছাত্রী ইসরাত জাহান উষ্ণ। প্রচ- শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার বিকালে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, প্রতিনিয়ত অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও আইসিইউ প্রয়োজন হয়, কিন্তু হাসপাতালগুলো ঘুরে এলেই বোঝা যায় আসলেই কতজন সেবা পায়। প্রত্যেকটি কোভিড হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয় একাধিক রোগীকে। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতেও চলছে একপ্রকার দখলে রাখার প্রতিযোগিতা, কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে শুধুমাত্র বিশেষ মানুষের জন্য, আবার কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে বিশেষ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এভাবে যদি এক এক করে হাসপাতালগুলো বিভিন্ন বেড়াজালে আটকে ফেলেন তবে চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষগুলো কোথায় যাবে?
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, করোনা পরীক্ষার নামে আমরা দেখছি নাটক। যে করোনা পরীক্ষা আমরা করাতে পারতাম মাত্র ৩০০ টাকায়, সেখানে এখন ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকায় করাতে হচ্ছে। যদি চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত তবে সাধারণ জনগণের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো। কিন্তু সেটাও আজ আপনারা একটি গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন।
রাজধানীতে শুধু পাঁচটি জায়গায় করোনা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে কেন প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, এখানে ধরেই নেয়া যায় এই মহামারীতেও কমিশন বাণিজ্যের কথা! তাই অনেক কষ্ট নিয়েই আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, যদি সবকিছুতেই ব্যবসা আর মুনাফা খুঁজেন, তবে এবার দয়া করে জানিয়ে দিবেন, কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপটা কাকে দিবেন। যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের কাফনের কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ে দাফন করতে মানুষ না পারে! তাহলে এখান থেকেও একটা ভালো ব্যবসা হবে!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন