বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কায়রো থেকে নাইরোবি

জনসংখ্যা ও বাংলাদেশ-২ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করায় ২৫ বছরে ব্যাপক সাফল্য এসেছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাল পড়ুন শেষ পর্ব অলৌকিক অর্জন

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

‘জনসংখ্যা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর পূর্তি ছিল গত নভেম্বরে। নভেম্বরের ১২-১৪ কেনিয়ার নাইরোবিতে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালের ৫ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর মিশরের কায়রোতে এই সম্মেলন শুরু হয়। ওই সম্মেলনে জাতীয় ও সার্বজনীন উন্নয়ন প্রচেষ্টা হিসেবে যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকারকে কেন্দ্র বিন্দুতে রেখে যুগান্তকারী কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়। এতে সবার সার্বজনীন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়। এর মধ্যে স্বেচ্ছাভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা, নিরপাদ মাতৃত্ব ও প্রসব সেবা এবং যৌনবাহিত সংক্রমণের প্রতিরোধ ও সেবাগ্রহণের কথা বলা হয়।

সম্মেলনে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, প্রজনন স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যা একটি সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অপরিহার্য। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য হলো নারীর মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত। সম্মেলনে আরও গুরুত্ব দেয়া হয়, একজন নারীর জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকলক্ষেত্রে যেমন- অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সমানভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীর প্রতি সকল বৈষম্য দুরীকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অধিক গুরুত্ব দেয়া।

প্রতিশ্রুতির (১৯৯৪ থেকে ২০১৯) ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপি মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রমে লক্ষ্যনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৯৪ সালে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতো। বর্তমানে (এসভিআরএস ২০১৮) তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২৫ বছর আগে ১ হাজার নারীর মধ্যে ৮ জন নারী গর্ভকালীন/প্রসবকালীন সময়ে মারা যেতেন। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে (২০০৪ সালে ছিল ৩ দশমিক ২০ শতাংশ জন যা বর্তমানে (এসভিআরএস ২০১৮) হ্রাস পেয়ে ১ দশমিক ৬৯ হয়েছে।

ওই সময়ে স্বল্প আয়ের দেশে একজন নারী কমপক্ষে ৬টি সন্তান জন্ম দিত যা বর্তমানে ৪-এর নিচে নেমে এসেছে। এসভিআরএস ২০১৮ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এ হার বর্তমানে ২ দশমিক ০৫ শতাংশে এসেছে। আগামীতে এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে অধিদফতর তিন শূন্য নিয়ে কাজ করছি। প্রথমত, পরিবার পরিকল্পনার তথ্য ও সেবার অপূর্ণ চাহিদার হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, কোন নারী সন্তান জন্মদানকালে মারা যাবেন না। অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুহার শূন্যে নামানো। তৃতীয়ত, মেয়ে ও নারীর প্রতি সংহিসতা ও যৌন হয়রানির প্রবণতা বন্ধ হওয়া।

পরিসংখ্যান দেখলেই আচ করা যায় জনসংখ্যা ও উন্নয়নে বাংলাদেশের গত ২৫ বছরে কতোটা সাফল্য এসেছে। তবে এই অর্জনেই আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না বাংলাদেশ। কায়রোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা এনেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি), জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন (আইসিপিডি)-এর বাস্তবায়ন ও দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি)-এর মধ্যে একটি যোগসূত্র নির্ধারণ করে দারিদ্র্য দূরীকরণ, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার ২০১৭ সালে চতুর্থ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) গ্রহণ করেছে।

এ কর্মসূচি ২০২২ সাল পর্যন্ত চলবে। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে অধিদফতর। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আইইএম ইউনিট, আইইসি অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে দেশব্যাপি ব্যাপক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্র প্রদর্শন, টেলিভিশন ও বেতারে বিশেষ নাটক, টিভি স্পট ও টকশো প্রচার, পাশাপাশি সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন কর্মশালায় বিভিন্ন ধরণের মূদ্রনসামগ্রী প্রস্তুত ও বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া ডিজিটাল লাইব্রেরী বা ই-টুলকিট ব্যবহার করে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। সাফল্যস্বরুপ সক্ষম দম্পতিদের মধ্য পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আইইএম ইউনিটের পরিচালক আশরাফুন্নেছা বলেন, গত ২৫ বছরে জনসংখ্যা উন্নয়নে আমাদের অনেক অর্জন। বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে এটা সত্য। কিন্তু আমাদের কাজকে প্রতিদিন কিভাবে আরও উন্নতি করা যায় সে চেষ্টাই করছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, সরকার মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধে সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (এফডবিøউসি) ও কমিউনিটি ক্লিনিকের স্থাপনাগুলো বড় করা হয়েছে। মিডওয়াইফ নিয়োগ, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়ায় পরিবার পরিকল্পনা উপকরণ ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে কাজ করায় দেশ গত ২৫ বছরে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। তবে এখনও প্রতিবন্ধকতা আছে। বেসরকারি হাসপাতালে অধিকমাত্রায় সিজারিয়ান বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন জাহিদ মালেক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন