ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার এবং হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ জন শিক্ষক। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান তারা। বিবৃতিতে তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে চিহ্নিত একটি নিপীড়নমূলক আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগের মাধ্যমে, একের পর এক মামলা ও গ্রেফতার চালিয়ে, জন-জীবনে ভীতি-সঞ্চারের একটি কদর্য প্রচেষ্টা চলছে। এই আইনের আওতায় মহামারী মোকাবেলা ও ত্রাণ-বিতরণে সরকারের দুর্নীতি ও অদক্ষতার ন্যায্য সমালোচনার দায়ে বøগার, কার্টুনিস্ট, সাংবাদিক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, এমনকি জরুরী ত্রাণ-কার্যক্রমে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবী তরুণসহ অনেককে গ্রেফতারর করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃতদের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ায়ও দুরুহ করে রাখা হয়েছে।
বিবৃতিতে শিক্ষক সিরাজুম মনিরার কথা উল্লেখ করে লেখা হয়, ফেসবুকে ক্ষণস্থায়ী একটি পোস্টের বক্তব্যের জের ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ শিক্ষক সিরাজুম মনিরাকে গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ‘অভূতপূর্ব উৎসাহ’ ও পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতা ছিলো লক্ষ্য করার মতো। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের আপামর মানুষের বাক-স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা, এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর ন্যাক্কারজনক রাজনৈতিক হামলার সর্বশেষ উদাহরণ এই গ্রেফতার। শাবিপ্রবি ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও একই প্রেক্ষাপটে দুজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ও অস্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে এই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লিখিত উক্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সুতীব্র তর্ক-বিতর্ক চলছে, যা আমরা স্বাগত জানাই। সেই সাথে পরিষ্কার করে বলতে চাই, সহ-নাগরিকদের এধরনের আলোচনা-সমালোচনার বাইরে কোনো নাগরিকের যেকোনো ভাষায় প্রকাশিত রাজনৈতিক মতামতের বিরুদ্ধে হুমকি, হামলা, মামলা বা গ্রেফতারের মতো নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার সংবিধানের ৩৯ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক, ফলে এ অধিকার রাষ্ট্র, সরকার, বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাই। সামাজিক মাধ্যমে নাগরিকের আচরণের নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র বৃহত্তর সামাজিক অনুশাসনের মধ্য দিয়েই হতে পারে, কোনো অযৌক্তিক ও দূরভিসন্ধিমূলক ফৌজদারি আইন ব্যবহার এখানে অনুচিত।
তারা ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ অনতিবিলম্বে বাতিল করে এই আইনে গ্রেফতারকৃত সকল নাগরিককে সসম্মানে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন