শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যায় ডুবতে পারে ঢাকা

রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা বাড়ছে নদ-নদীর পানি : নদীগুলো দখলে দূষণে ভরাট : পূর্বাঞ্চল অরক্ষিত, নেই কোনো বাঁধ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ ঝুঁকিতে এবার ঢাকা। রাজধানীর চারপাশের নদীগুলো দূষণ ও দখলে ভরাট হয়েছে। নদীগুলোতে নেই পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। ঢাকার ভেতরের খালগুলোও দখলমুক্ত ও সংস্কার করা হয়নি। গত কয়েক বছর যাবত উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে রাজপথ থেকে অলি-গলি সব তলিয়ে যায়। এছাড়া ঢাকার চারপাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেরও চরম দুরবস্থা। বিশেষ করে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে কোনো বাঁধই হয়নি। ফলে পূর্বাঞ্চল একেবারেই অরক্ষিত। ফলে বৃষ্টিপাত বাড়লে এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই ঢাকা তলিয়ে যাবে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার প্রভাবে আগামী দু’তিনদিন বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়বে। সেই সাথে চলতি মাসে প্রবল বৃষ্টিপাতের কথাও বলা হয়েছে। গত মে মাসে দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুন-জুলাই-আগস্টেও অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা। তাছাড়া পরপর এই তিন মাসেই বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী নিম্নচাপের আভাস রয়েছে। এরফলে দেশে অধিক বৃষ্টিপাত হবে। এমনিতে সমান্য বৃষ্টি হলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমে হাঁটু পানি। অলি-গলি সবখানে পানি থৈ থৈ করে। এ অবস্থায় টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতার পাশাপাশি আশপাশের নদীর পানি ঢুকে রাজধানী তলিয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

এদিকে, টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সারা দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের অনেক নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি ইতোমধ্যে গত ৩২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় জুন মাসে যমুনায় যে পরিমাণ পানি ছিল এবার তার চেয়েও বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সেই ’৮৮ সালের চেয়েও ভয়াবহ বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারি দুর্যোগের ভেতরেই বন্যাকবলিত হতে পারে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। আর দেশের মধ্যাঞ্চল বন্যাকবলিত হলে তলিয়ে যাবে রাজধানী ঢাকা।

পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আসলে বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে, নদ-নদী পানিতে পূর্ণ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ঢাকাসহ সারা দেশের প্রধান প্রধান নদীর পানির প্রবাহের গতি পথগুলো সংস্কারের অভাবে দিনের পর দিন ভরাট হয়ে গেছে। কোনো সরকার খনন করার উদ্যোগ না নেয়ায় নদীগুলো মৃত। এগুলোতে নেই পানির প্রবাহ। বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। নদীগুলো দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে সামান্য পানি বৃদ্ধি হলেই বন্যায় রূপ নেয়। এ ক্ষেত্রে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ বন্যার কবল থেকে রাজধানীকে রক্ষা করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয় না। ঢাকার পূর্বাঞ্চলে কোনো বাঁধই নির্মাণ হয়নি। ফলে বৃষ্টিপাত বাড়লে এবং নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলে রাজধানী ঢাকা বড় ধরনের বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানী ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল এবং প‚র্বাঞ্চল শহর রক্ষা বাঁধের এখন বেহাল দশা। সংস্কারের অভাবে ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধের ১৪ কিলোমিটারজুড়ে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মাটি ধসে গেছে। ফলে এই বাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মুখে। অন্যদিকে, রাজধানীর প‚র্বাঞ্চল একেবারেই অরক্ষিত। ‘ঢাকা পূর্বাঞ্চলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বাইপাস’ প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যার পানি বৃদ্ধি হলে যেকোনো সময় রাজধানী ঢাকা খুব সহজেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে বলে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন।

শুধু বেড়িবাঁধের কারণেই নয় ঢাকা সিটির পানি বের হওয়ার জন্য যেসব খাল ছিল সেগুলো অস্তিত্বহীন। যে কয়টা খালের সামান্য অস্তিত্ব আছে সেগুলোও দখলে দূষণে মৃত প্রায়। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও এখন বেহাল অবস্থা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করেও কোনো লাভ হয় না। পরিবেশ দূষণের প্রধান বস্তু পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানী সড়কগুলো পানিতে থৈ থৈ করে।

ঢাকার অনেকগুলো খাল যেমন দখলে দূষণে বিলীন হয়ে পড়েছে তেমনি এর চার পাশের নদীগুলো এখন মৃত প্রায়। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা এগুলো নিষ্প্রাণ। দখলে দূষণে এগুলো প্রবাহহীন। এ ছাড়া দখলের ফলে বালুনদী এখন প্রায় মৃত। এ সব নদী দিয়ে ঢাকার পানি প্রবাহিত হয়। এসব নদীর প্রবাহ না থাকায় রাজধানীর পানি সহজে বের হতে পারে না।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন দুই কোটি পলিথিন জমছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পলিথিনকে ঢাকার পানিবদ্ধতার জন্যও দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছে পবা। পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবার সদস্য মো. আবদুস সোবহান বলেন, সারা দেশে প্রায় ১২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকায় প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয় যেগুলো পলিথিন বর্জ্য। এ বর্জ্য সামান্য বৃষ্টিতে নগরে পানিবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া এসব পলিথিন ঢাকার চারপাশের নদীগুলো তলদেশও ভরাট করছে। তিনি বলেন, পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর ২০০২ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও পরিবেশ অধিদফতরের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ সেই আইন কার্যকর হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫৮টি খাল চিহ্নিত করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩৭টি খালের অংশ বিশেষ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) তিনটি সরকারি ও সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং ২৪৮ জন ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে। ফলে খালগুলোর প্রবাহ আর স্বাভাবিক নেই। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২২টি খালের মধ্যে একমাত্র ধোলাইখালের একটা অংশ (সূত্রাপুর লোহারপুল থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত) ও মেরাদিয়া খাল সচল আছে। বাকি সব ক’টি খালের জায়গায় এখন রাস্তা। প্রতিবেদনে এমনটা বলা হলেও নন্দীপাড়া খাল এখনো সচল আছে। প্রবাহ আছে কুতুবখালী খালেও। যে খালগুলো এখনো টিকে আছে সেগুলোর অধিকাংশ ময়লা-আবর্জনার চাপে স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে পারছে না। দখল আর ভয়াবহ দূষণের ফলে ঢাকার পানি প্রবাহ মারাত্মক ব্যাহত হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকার রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
তাসফিয়া আসিফাHarun Cox ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
সম্ভবত কিছুদিন পরে ঢাকার মহা সড়কে নৌকা দেখা যেতে পারে
Total Reply(0)
Hossain Khokon ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
এইসব শুনতে ভালো লাগে না বষাকাল আসলে এই নিউজ ছাড়া আর অন্য নিউজ করতে পারে না
Total Reply(0)
Abdullah Al Mamun ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
ইহাকেই উন্নয়নের জোয়ার বলে।
Total Reply(0)
Abul Basar ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
আগামী ১০বছর পর ঢাকার রাস্তাঘাটে বাস,রিস্কা এর বদলে নৌকা,লঞ্চ,ভেলা চলবে,তখন হবে বাংলাদেশের ডিজিটাল যুগ।
Total Reply(0)
Sobujar Bok A Siser ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
আমাদের রাজধানী একটু খানি বৃষ্টি হলে হাডু সমান হয় পানি
Total Reply(0)
নাজমূল হাসান নাজমূল হাসান ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
ডিজিটাল বাংলাদেশ, গলাফাটানিতে নাম্বার ওয়ান,কাজের বেলায় জিরো।
Total Reply(0)
Alam Khan ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
আমার তো মনে হয়। সরকার ঢাকা আর চট্রগ্রাম কে লনডন শহর বানানোর পরিকলপনা নিয়াছেন। যার কারনে শহর দোটির চারপাশেই বৃষটি এলে পানি জমে যায়। যেন পর্যটকেরা শহর দোটি নৌকা দিয়া ভ্রমন করে ১০০% ভাগ আননদ উপভোগ করেন।
Total Reply(0)
ash ১৮ জুন, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
OPODARTHOO
Total Reply(0)
jack ali ১৮ জুন, ২০২০, ৫:২৬ পিএম says : 0
Muslim is the custodian of this world but we muslims are destroying the environment.. Not a single so called muslim country ruled by the Law of Allah as such such we are facing all sort of problems and our life become turned into hell.
Total Reply(0)
Md sayed siddiqe ১৯ জুন, ২০২০, ৪:৪৭ এএম says : 0
আস্সালামুআলাইকুম, 4 real, who r we have become, এটা সর্বপ্রথম বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। now if we really tkink about, we has become our own enemy, what we see,happily we denied. Dont know for who's good, or bad, it will turn at
Total Reply(0)
MOMINUL ISLAM ১৯ জুন, ২০২০, ৫:২০ এএম says : 0
Amader Dhaka shohorer bloody nogor pitara ara kothai,Bastard ra boro kotha bole r kajer kaj kesu e korena.Protita rainy season ashle e shona jay,Dhaka town flood e tolia jabe.R bhai amra jonogon ke korbo?Shudu dur-vaiggo sadaron jonogoner.Selfish netader ei desh.Ame mone kore dhaka city corporation er netader daette obohela e onek bristite Dhaka flood er karon.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন