বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বন্যায় রাজধানী ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনা মহামারীর ক্রমবর্ধমান বিস্তারের মধ্যেই ঢাকাসহ সারাদেশে বড় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই তিস্তা নদী উপচে অন্তত ৬২টি চরের ফসলি জমি ও জনপদ ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারত ও নেপালের পাহাড়ী অঞ্চলে অতি বৃষ্টি বা পাহাড়ী ঢলের পানির চাপ সামলাতে গজলডোবা বাঁধের ¯øুইস গেটগুলো খুলে দেয়ার কারণে আকস্মিক বন্যার সম্মুখীন হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের মাঝারি বৃষ্টিতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ঢাকায় পানিবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগের অভিজ্ঞতা কোনো নতুন বিষয় নয়। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় পানিবদ্ধতার কারণগুলো নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বুড়িগঙ্গার দূষণ থেকে শুরু করে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ-দখলমুক্তি, সংস্কার ও সংরক্ষণের নানাবিধ উদ্যোগও দেখা গেছে। এখন করোনাকালীন সংকটের কারণে অনেক কিছু বন্ধ থাকলেও শহরের পানিবদ্ধতা, নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করার অগ্রাধিকার ভিত্তিক উদ্যোগগুলো থেমে থাকার কথা নয়। যে কোনো প্রতিকূল বাস্তবতার মধ্যেও ঢাকা নগরীর বাসযোগ্যতা, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভূ-প্রাকৃতিক নিরাপত্তা এবং সুপ্রাচীন ঐতিহ্যসহ যে কোনো বিচারে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বাসযোগ্য নগরী হয়ে ওঠার সব সম্ভাবনা ঢাকা নগরীর রয়েছে। চারপাশে চারটি নদী দ্বারা বেষ্টিত উর্ব্বর উচ্চভূমি এবং দক্ষিণের বুড়িগঙ্গা তীর থেকে উত্তরে ক্রমবিস্তৃত এই শহরটি সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি। মোঘলরা ঢাকাকে গার্ডেন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। পাকিস্তান আমলের নগর পরিকল্পনাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া এবং স্বাধীনতা পর ঢাকা নগরীর পুনর্গঠনে কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আজকের অপরিকল্পিত, আন্তর্জাতিক জরিপে বসবাসের অযোগ্য, নিত্য যানজট ও সামান্য বৃষ্টিতে পানিজটে জনদুর্ভোগের ঢাকা নগরীর সৃষ্টি। ১৯৮৮ সালের বন্যায় ঢাকা শহরসহ সারাদেশ পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর গত তিন দশকে ঢাকার পানিবদ্ধতা নিরসন, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গগুলোর উন্নয়নে সব সরকারের পক্ষ থেকেই নানা প্রতিশ্রæতিসহ অনেক উদ্যোগ দেখা গেলেও সময়োপযোগী উন্নয়নের বদলে অবস্থার ক্রমশ অবনতিই দেখা গেছে।

এমনিতেই করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চরম সংকটে পড়তে চলেছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তখনি বড় বন্যায় রাজধানী ঢাকা শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। আর যখনি ঢাকার পানিবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ পরিবেশগত নিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগের কথা আসে, তখনি উঠে আসে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ, দখলমুক্তির বিশেষজ্ঞ প্রস্তাবনা, জনআকাক্সক্ষা ও সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রত্যাশা ও ব্যর্থতার কথা। দীর্ঘদিনের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার আলোকে এখন বিকল্প উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পানিবদ্ধতা নিরসন করে রাজধানী ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব বিশ্বমানের আধুনিক বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে গতানুগতিক ব্যবস্থার বদলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বিদেশি নগর পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে দ্রæত বাস্তবায়নযোগ্য একটি উদ্যোগ নিতে হবে। ১৯৮৮ সালে সমগ্র ঢাকা শহর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর যে নামমাত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল তার বেশিরভাগ এখন অস্তিত্বহীন। এবার তার চেয়েও বড় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশব্যাপী সম্ভাব্য বন্যায় ঢাকা এখনো অরক্ষিতই রয়ে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানির সমস্যা নিরসনসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দূষণ, দখলমুক্ত করে নদীর নাব্যতা ও পানি ধারণক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার নদীগুলোকে ঘিরে সার্কুলার ওয়াটারওয়ে, সার্কুলার রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের যে সব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে হবে। গত কয়েকদিনে বৃষ্টিতে ঢাকার যে সব এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে তা দূর করার জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন ও খোঁড়াখুড়ি বন্ধ করে সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলায় এখনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন