শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

করোনা মহামারিতে দান-সাদাকাহ : ইসলামের নির্দেশনা

মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

এ ভাবে দান-সাদাকাহ নিয়ে আরো বলা হয়েছে যে কেয়ামতের বিপদে দান দাতাকে চিন্তামুক্ত করবে। তবে শর্ত হলো দান করে খোঁটা বা কটু কথা বলা যাবে না। আজ আমরা দেখি কোয়ারান্টাইনে আবদ্ধ গরিব মানুষকে ত্রাণের প্যাকেট দেওয়ার সময় ভিডিও করছে, সেল্ফি উঠাচ্ছে, দানের মাল গ্রহণের সময় ক্যামেরার দিকে তাকানো হয়নি- এ জন্য ধমকাচ্ছে। এসব সত্যিকারভাবে সাদাকাহ বা দানের আদাব বা শিষ্টাচার নয়। ইসলামে অনেক ভদ্রতার সাথে দান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা তাদের মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, অতঃপর দান গ্রহিতার প্রতি কোন প্রকার খোঁটাও দেয় না অথবা কটু কথাও বলে না, স্বীয় প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে। কেয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন প্রকার চিন্তাযুক্তও হবে না।’ (২: ২৬২)
দান হলো পরোপকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নির্ভেজাল ভাবে দান করার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহকে খুশিকরার মাধ্যমেই ব্যক্তির তাকওয়ার প্রকাশ ঘটে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন- ‘এবং তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের তরফ হতে ক্ষমা প্রাপ্তির দিকে এবং এমন জান্নাতের দিকে দৌড়াতে থাক, যার প্রশস্ততা হবে সাত আসমান ও জমীনের সমতুল্য, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এমন সব মোত্তাকীনদের জন্য যারা সুখ-দুঃখ উভয় হালতেই আল্লাহর রাস্তায় দান খয়রাত করে থাকে এবং রাগ আসলে উহা হজম করে লয়; মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা পরোপকারী লোকদের ভাল বাসেন।’ (৩:১৩৩-১৩৪। যারা আল্লাহ তায়ালার পথে স্বীয় অর্থ সম্পদ ব্যয় করতে অভ্যস্ত, তাদের ব্যাপারে এখানে বলা হয়েছে। তারা স্বচ্ছল হউক কিংবা অভাব –অনটনে থাকুক, সর্বাবস্থায় তারা সাধ্যানুযায়ী মানুষের জন্য ব্যয় করে থাকে। বেশী হলে বেশী এবং কম হলে কমই ব্যয় করে। এতে এক দিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, দরিদ্র ও নিঃস্ব ব্যক্তিও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে নিজেকে মুক্ত মনে করবে না এবং সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবে না। এর বরকতে আল্লাহ তায়ালা আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। অসহায়দের দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমার সৌভাগ্যও হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘শয়তান তোমাদিগকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ তাআলা দান করার বিনিময়ে ক্ষমা করা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার ওয়াদা করেন। বস্তুতঃ আল্লাহপাক সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী। (২:২৬৮)। যখন কারো মনে এ ধারণা জন্মে যে, দান-সাদাকাহ করলে ফকির হয়ে যাবে, বিশেষতঃ আল্লাহ তায়ালার তাক্বীদ শুনেও স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করার সাহস না হয় এবং আল্লাহর ওয়াদা থেকে মুখ ফিরিয়ে শয়তানি ওয়াদার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন বুঝতে হবে যে, এ প্ররোচনা শয়তানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি মনে ধারণা জন্মে যে, দান-সাকাহ করলে গুনাহ মাফ হবে, সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং বরকত হবে, তখন মনে করতে হবে এ বিষয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ। আল্লাহর ভান্ডারে কোনো কিছুর অভাব নেই। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন- ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ রাত্রে এবং দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে দান করে থাকে তাদের প্রতিদান আপন প্রতিপালকের নিকট সুরক্ষিত থাকবে, আর তারা ভয়শূন্য ও চিন্তা মুক্ত থাকবে ‘। (২: ২৭৪) তবে শর্ত হলো খাঁটি নিয়্যাতে দান করতে হবে। নাম যশের নিয়্যাত থাকলে চলবে না। প্রকাশ্য দান করার কোনো প্রয়োজন দেখা না দেওয়া পর্যন্তই গোপনে দান করার শ্রেষ্ঠত্ব সীমাবদ্ধ। যেখানে এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয়, সেখানে প্রকাশ্যে দান করাই শ্রেয়। (মারিফুল কোরআন)
যে যেখানে আছি, যার যা আছে সাধ্যমতো অসহায় প্রতিবেশীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো দরকার। অল্প হউক, বেশী হউক। ইচ্ছা ও পরিশুদ্ধ আন্তরিকতাই গুরুত্বপূর্ণ ও আল্লাহর দরবারে কবুলের অন্যতম শর্ত । কেননা কোন সাদাকাহ উত্তম তা বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূল (সা.) এর নিকট আরজ করেন, ইয়া রসূলুল্লাহ (সাঃ)! কোন সদকা উত্তম? তিনি বললেন, সে সদকা উৎকৃষ্টতম সদকা, যা গরীব ব্যক্তি আপন উপার্জন থেকে করে। আর প্রথমে তাদের উপর ব্যয় করে সে যাদের জিম্মাদার (অর্থাৎ আপন স্ত্রী ও সন্তানাদির উপর) (সুনানে আবু দাউদ, মাআরিফুল হাদীস) এ ছাড়াও দানের গুরুত্ব ও কোন অবস্থার দান উত্তম এ সম্পর্কে রাসূলের আরো অনেক নির্দেশনা রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! কোন অবস্থায় দান ফলাফলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম? রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার সুস্থ ও উপার্জনক্ষম অবস্থার দান। যখন তোমার দরিদ্র হওয়ারও ভয় থাকে এবং ধনী হওয়ারও আশা থাকে। তুমি নিয়তই দান-খয়রাত করতে থাকবে। এমনকি তোমার প্রাণ গ্রীবাদেশে পৌঁছা পর্যন্ত বলতে থাকবে অমুকের জন্যে এটা, অমুকের জন্যে এটা; আর তোমার বিশ্বাস আছে যে, তা পৌঁছান হবে। (বুখারী, মুসলিম)
এ বিপদেও যারা সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়াবে না তাদের উদ্দেশ্যে শুধু এ টুকু বলতে চাই, আসলে দাতা ও কৃপণ ব্যক্তি সম্পর্কে হাদীসে অনেক বক্তব্য এসেছে। আপনি ভাবলে অবাক হবেন। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেন- ‘যখনই আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দুজন ফিরিশতা অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন