বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও ভারতের বন্ধুত্ব

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী যে ভারত, সে কথা সবারই জানা। যারা ভূগোল সম্পর্কে যৎসামান্য জ্ঞান রাখেন তারা জানেন যে ভারতের সাথে ৬টি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। এ দেশগুলো হল পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। আর ভারতের সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে শ্রীলংকার সাথে। আমরা এও জানি, এই সবগুলো দেশের সীমান্তেই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ মোতায়েন আছে। তারা হচ্ছে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী। তাদের চোখ এড়িয়ে কোনো মানুষ তো দূরের কথা, পাখিও ভারতে ঢুকতে পারার কথা নয়। এখন তো বিশ্বজোড়া জঙ্গিদের তা-বের কারণে সীমান্তে নজরদারি আরো কঠোর হয়েছে। ফলে চোরাচালান বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ভারত ভূখ-ে কারো প্রবেশ অসাধ্য বললে অত্যুক্তি হয় না। যাহোক, আমাদের কারো কারো স্মরণশক্তি বেশ দুর্বল। তাদের কথা বাদ দিলাম। যাদের স্মরণশক্তি খুব ভালো, তারা কেউ কি বলতে পারেন গত দশ বছরে বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের সাথে আর ৬টি দেশের সীমান্তে (কাশ্মীর সীমান্ত বাদে) বিএসএফের গুলিতে কোনো লোক নিহত হওয়ার কোনো খবর তারা শুনেছেন বা পড়েছেন?
এবার আসুন ভারতের সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার ইতিপূর্বে তাদের ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রেকর্ড উদ্ধৃত করে বলেছিল যে, ওই ১০ বছরে বিএসএফের হাতে ৯৯৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এদিকে দৈনিক ইনকিলাবে গত ২৪ জুলাই ‘ফের বেপরোয়া বিএসএফ’ শিরোনামে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে পরিবেশিত তথ্যে দেখা যায়, সর্বশেষ ২৩ জুলাই যশোর জেলাধীন বেনাপোলে এক বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে। এ নিয়ে শুধু জুলাই মাসেই ৫ বাংলাদেশিসহ গত ৭ মাসে ২১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। আর গত দশ বছরে বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮৪।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বিএসএফের হাতে শুধু বাংলাদেশিরাই নিহত হচ্ছে কেন? আরো ৬টি দেশের সীমান্তে একজন লোকও বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় না কেন? ওই সব দেশের সাথে কি তাহলে ভারতের চোরাচালান হয় না? বুঝলাম যে, ভারতের সাথে নেপালের সীমান্ত উন্মুক্ত বলে দু’দেশের মানুষের চলে অবাধ যাতায়াত। সম্ভবত ভুটানের সাথেও তাই। অতএব এ ক্ষেত্রে চোরাচালানের প্রশ্ন নেই। কিন্তু শ্রীলংকা, পাকিস্তান, চীন ও মায়ানমারের সাথে কি ভারতের কোনো প্রকার চোরাচালানই চলে না? ধরে নিলাম, ভারতীয়রা কেউই কোনো রকম চোরাচালানের সাথে যুক্ত নয়। সাধু-সন্ন্যাসীর দেশের মানুষরা এসব নোংরা কাজে জড়িত হতে পারেন না। কিন্তু বাকি দেশগুলোর মানুষও কি সব ভিক্ষু-দরবেশ হয়ে গেছে? তাই তারা কেউ অবৈধ কাজে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারায় না? কিন্তু বাংলাদেশের অসৎ মানুষগুলোর ভাগ্য মন্দ বলেই কি দিন নেই রাত নেই, বলা নেই কওয়া নেই, সতর্কতা জারি নেই হুঁশিয়ারি নেই, তাদের সোজা গুলি করে বা ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ! নাকি ওসব দেশের কর্তৃপক্ষ বড় শক্ত বলে ধরাধরির মধ্যেই বিএসএফ নিজেদের সামলে রাখে? পুরনো বাংলা প্রবাদ কে না জানে, শক্ত মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায় না। এ ক্ষেত্রেও বিষয়টি কি তাই?
বিএসএফের হাতে নিহত এসব বাংলাদেশি কারা অর্থাৎ কারা বিএসএফের হাতে মারা যাচ্ছেন? ইতিপূর্বে আমরা যতটুকু জেনেছি তাতে দেখা গেছে যে নিহতদের বেশির ভাগ মারা গেছেন ভারত থেকে গরু আনার সময়। কেউ মারা গেছেন বাংলাদেশ সীমানায় নিজের ক্ষেতে কৃষিকাজ করার সময়। আর কিছু লোককে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তর থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এর বাইরেও মানুষ নিহত হয়েছে। যেমন ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেলানি হত্যা। ভারত থেকে চোরাপথে বাংলাদেশে আসতে কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর সময় কিশোরী ফেলানিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফের এক সদস্য। অন্যদিকে সংবাদপত্রের তথ্যানুযায়ী এ মাসে যারা নিহত হয়েছেন তাদের নিহত হওয়ার কারণের দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। ২৩ জুলাই বেনাপোলের পুটখালি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন শহিদুল ইসলাম ওরফে ফনি। ভোরবেলায় তিনি এবং আরো কয়েকজন ভারত থেকে গরু নিয়ে আসার সময় বিএসএফ তাদের উপর গুলি চালালে ফনি নিহত হন। ২২ জুলাই গোদাগাড়ি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আবুল কালাম আজাদ। তিনিও ভারত থেকে গরু নিয়ে আসছিলেন। ২০ জুলাই দিনাজপুরের ফুলবাড়ি সীমান্তে সাইফুল ইসলামকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ। ১৪ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারিতে একটি ব্রিজের উপর থেকে পাথর ছুঁড়ে বিএএসএফ খুন করে রাশেদুল ইসলাম নামে এক যুবককে। ১০ জুলাই নওগাঁর ধামইরহাটের চকিজিলা সীমান্তে গোলাপ হোসেন নামে আরেক যুবককে গুলি করে হত্যা করে তারা। তিনি সীমান্তের ২৬৫ নং মেইন পিলারের কাছে গেলে তাকে গুলি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে যা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় তা হলো এ ৫টি খুনসহ প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশি হত্যার ঘটনাই ঘটেছে বাংলাদেশের মাটিতে। অর্থাৎ নিহতদের কেউই কিন্তু ভারতে অনুপ্রবেশকালে নিহত হননি। সুতরাং বিএসএফের এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই যে তারা ভারতে নাশকতা চালাতে অনুপ্রবেশ করছিল বা ভারতের প্রতি কোনোভাবে হুমকি সৃষ্টি করেছিল। তাই কোনো যুক্তিতেই তাদের এ রকম নৃশংসভাবে খুন করার কোনো যুক্তি নেই। তারা বড়জোর গরু চোরাচালানের কাজে লিপ্ত ছিল। আর দু’ চারটি গরু চোরাচালানের অপরাধে কি মানুষকে গুলি করে মারা যায়? বরং তারা কীভাবে ভারতে গিয়েছিল এবং গরু নিয়ে বৈধ না অবৈধভাবে আসছিল তা অনুসন্ধান করে দেখা যেত। তাদেরকে গ্রেফতার করে প্রচলিত আইন মোতাবেক শাস্তি দেয়া যেত। ধরা যাক, তারা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল। তাহলে কোন পথে গেল, কখন গেল, সীমান্তে ভারতের অতন্দ্র প্রহরীরা তখন ঘুমিয়ে ছিল, না অসতর্ক ছিল ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তাদের অনুপ্রবেশ যদি অবৈধ হয়ে থাকে, ধরে নেয়া যাক তখন বিএসএফের গুলি চালানো বৈধ। কিন্তু ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকালে তারা ভারতের প্রতি হুমকি হতে পারেন না। তাই বিএসএফ তাদের আটক করতে পারে, গুলি চালাতে পারে না। এখানে এই গুলি করার পিছনে হয়তো আসল কারণ হতে পারে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বঞ্চনাজনিত প্রচ- ক্রোধ। সোজা কথা, অবৈধ লেনদেনের অর্থ যখন হাতছাড়া হয়ে যায় তখন বঞ্চিত ব্যক্তি ক্রুদ্ধ হয়ে গুলি করে খুন করে অথবা সে ক্রোধ নিবারণ করতে নিরীহ বাংলাদেশিদের উপর টার্গেট প্র্যাকটিস করতে গুলি চালায়। এতো গেল গরু ব্যবসায়ী হত্যার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা। কিন্তু ক্ষেতে কর্মরত কৃষক বা মাঠ দেখতে যাওয়া নিরীহ মানুষকে গুলি করে খুন করা কেন? এর একটা ব্যাখ্যা হতে পারে যে এর আগে বিএসএফ ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বাহিনী বলে কুখ্যাতি অর্জন করে। শোনা যায়, কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালিয়ে তারা অনেককে হত্যা করার পর সে সব খুনী ইউনিটের কোনো কোনোটিকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৪০৯৬ কি. মি. বিস্তৃত সীমান্তে বদলি করা হয়। কাশ্মীরে মানুষ মেরে অভ্যস্ত হওয়ায় হয়তো মানুষ হত্যা করা তাদের নেশা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে গরু ব্যবসায়ে লিপ্তদের গুলি করে তারা হয়তো সে নেশা মিটায় বা হাতের টিপ ঝালিয়ে নেয়। কিন্তু লোকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে বা পাথর ছুঁড়ে হত্যা, লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া কেন? এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে কিছু কিছু বিবেকশূন্য ও মনুষ্যত্ব বর্জিত মানুষ নামক জন্তুর দেখা সমাজে মেলে। তারা শক্তি-দম্ভে নিরপরাধ, অসহায় মানুষের উপর স্বভাবগত কারণেই পাশবিক নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে থাকে। বিএসএফের এরা হয়তো সেই তারা। অনেকের ধারণা, বাংলাদেশের বিজিবি সীমান্তে নির্জীব ভূমিকা পালন করে বলে বিএসএফ দেড় দশকাধিকালেরও বেশি সময় ধরে শঙ্কাহীনভাবে এ হত্যাকা- চালিয়ে আসছে। বিজিবি যদি এক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা নিত তাহলে এ রকম হত্যা হতো না।
সীমান্তে পাখি হত্যার মতো বাংলাদেশি হত্যা বন্ধের বহু চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে বহু সভা-বৈঠকে বিএসএফের কর্তা ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে বহুবার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার না করার কথাও বলেছেন তারা। হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রুতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তবে কোনো আশ্বাস-প্রতিশ্রুতিই কাজে আসেনি। বিএসএফ যেন কানে দিয়েছে তুলো আর পিঠে বেঁধেছে কুলো। তাদের কাজ তারা নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগে সম্পন্ন করে চলেছে। বাংলাদেশিদের জীবন তাদের কাছে এত মূল্যহীন যে তুচ্ছ কারণে বা খেলাচ্ছলেও তারা গুলি চালিয়ে এক একটি জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। আর এ জন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় বলে মনে হয় না। জবাবদিহিতা থাকলে এ রকম পৈশাচিক হত্যাকা- হওয়ার কথা নয়। তাই সীমান্তে বিএএসএফের হাতে খুন হওয়া বাংলাদেশিদের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত এই যে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা ঘটছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে। নয়াদিল্লীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় পর্যন্ত বিষয়টি ভালোভাবেই জ্ঞাত। ইতোমধ্যে জঙ্গি হামলার ভয়াবহতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পরমবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, এই লড়াইয়ে বাংলাদেশ একা বা নিঃসঙ্গ নয় এবং শেখ হাসিনা নিজেকে যেন কখনোই একা না ভাবেন। জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে ভারতকে সব সময়ই বাংলাদেশ পাশে পাবে। দেশের এ সংকট মুহূর্তে মোদি পরম বন্ধুর মতই কথা বলেছেন। তার কথায় সরকারের মনোবল জোরদার হয়েছে। কিন্তু হায়, প্রতিনিয়ত সীমান্তে পাখির মতো বাংলাদেশিদের যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, তা বন্ধের ব্যাপারে কোনো আশ্বাসই মোদির মুখে ধ্বনিত হয় না। তিনি বাংলাদেশি হত্যা বন্ধে কোনো নির্দেশনা জারি করেন না। বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হাতে খুন হওয়া শত শত নিরীহ নিরপরাধ মানুষের অসহায় পরিবারের করুণ আহাজারি বন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছে না। তাই সীমান্ত হত্যা চলতেই থাকে। এ যেন চলছেই, চলবেই।
প্রতিবেশী বন্ধু দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক ও বন্ধন বড় নিবিড়। বন্ধুই তো প্রিয় বন্ধুর জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। বাংলাদেশ ভারতের জন্য যা ত্যাগ স্বীকার করা সম্ভব তার সবই ইতোমধ্যে করেছে ও আরো করছে। সে কথা থাক। আমরা জানি, বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে প্রদর্শনের কোনো উপায় নেই। তাদের আইন এমনই কড়া। তবে আমাদের দেশে তাদের তাবৎ টিভি চ্যানেল প্রদর্শিত হতে পারে। আমাদের আইনে তাদের জন্য কোনো বাধা নেই। আমাদের সিনেমা সে দেশে দেখানো হয় না। তাদের সিনেমা আমাদের দেশে আমদানির পথে কোনো বাধা নেই। জানা যায়, ‘বাংলাদেশের ছবি আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীতিমালা ২০১৫-২০১৮ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি আমদানি করতে হলে সমান সংখ্যক ছবি রপ্তানি হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ছবি রপ্তানি করার পর আমদানি করতে হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে প্রথমে কোনো ছবি রপ্তানি হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে এটি প্রদর্শন হতে হবে। বাংলাদেশের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে মর্মে ভারতের সেন্সর বোর্ড ও ফিল্ম বোর্ডের লিখিত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি আমদানি ও প্রদর্শন করা যাবে।’ তবে এ শর্ত সংশ্লিষ্টরা মানছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, ‘কেলোর কীর্তি’ নামক একটি ভারতীয় বাংলাছবি বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য ক’দিন আগে আমদানি করা হয়। কিন্তু সাফটা চুক্তিতে আমদানি ও রফতানির যথার্থ নিয়মকানুন না মানার কারণে সিনেমাটি বাংলাদেশে প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত ১৮ জুলাই একটি রিট আবেদন করা হয়। আবেদনের শুনানি শেষে ১৯ জুলাই এ সিনেমা প্রদর্শনে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই সিনেমা প্রদর্শন করা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করা হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করলে ২৪ জুলাই হাইকোর্টের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন নিয়মিত বেঞ্চ। ফলে বাংলাদেশে ছবিটি প্রদর্শনের আর কোনো বাধা রইল না। এদিকে পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শিল্পী, পরিচালক ও কলাকুশলীরা এটাকে বাংলাদেশের সিনেমা বাজার দখলের একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশের উদার ও আন্তরিক বন্ধুত্বের বার্তা যে ভারতের সর্বত্র আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি তার সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে আসামের বিধান সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব। খবরে বলা হয় যে, ২২ জুলাই আসামের বিধান সভায় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব দেন জুনিয়র বিধায়ক আব্দুল খালেক। তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, যে দেশের স্বাধীনতায় ভারতের অবদান সবচেয়ে বেশি, যে দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকাংশে ভারতের ওপর নির্ভরশীল, সে দেশে ক্রমাগত হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হবে, এটা মানা যায় না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে আব্দুল খালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন শক্তিশালী নেতা। তিনি প্রয়োজনে শক্তি প্রদর্শন করে নিশ্চিত করুন যে বাংলাদেশে বসবাস করা কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের মুখে না পড়ে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে শেখ হাসিনা সরকার ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে যুদ্ধ হোক। বাংলাদেশকে উপযুক্ত ‘শিক্ষা’ দিতে হবে যাতে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হয়।
বাংলাদেশ সরকার ভারতের একটি রাজ্যের বিধান সভায় উত্থাপিত এ প্রস্তাব বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কিনা জানি না। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হতেও পারে আবার নাও বলা হতে পারে। যদি কিছু বলা হয় তা কূটনৈতিক চ্যানেলেই বলা হবে। আমরা সাধারণ মানুষ কিন্তু উদ্বিগ্ন। বন্ধুদেশের সাথে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হবে তো বটেই, তা মর্যাদাপূর্ণও হতে হবে। পরস্পরের প্রতি মর্যাদাবোধের ব্যাপারে সচেতন থাকলে ভারতের একটি বিধান সভার সদস্যের বন্ধুদেশের ব্যাপারে এ রকম আপত্তিকর ও অমর্যাদাকর কথা বলার কথা নয়। ভারতীয় কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নিশ্চয়ই দেখবেন বলে আমরা আশা করতে পারি।
য় লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
abdul awal ২৮ জুলাই, ২০১৬, ৯:০২ এএম says : 0
বদ্নু বলে আমাদের হত্যা করে ভারতীয় সিমান্ত রক্ষী বাহিনী । বিজি পি তাকিয়ে দেখে কিচু করার বা বলার নেই ।
Total Reply(0)
ইমরান ২৮ জুলাই, ২০১৬, ২:৩৭ পিএম says : 0
সুন্দর এবং বাস্তবধর্মী লেখা । লেখকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন