শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চূড়ান্ত ১৫৭ মেডিক্যাল টেকোনলজিস্ট নিয়োগ

নিয়ম-নীতির বালাই নেই

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ১৫৭ মেডিকেল টেকোনলজিস্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রমার্জনায় এদের নিয়োগের সুপারিশ থাকলেও সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য নয় বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়েগে মনোনীতিদের মধ্যে মাত্র ৯৫ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক রয়েছে। বাকী ৬৩ জনের রয়েছে নানা অসঙ্গতী। এরই মধ্যে আবারো সারাদেশে চাওয়া হয়েছে নতুন তালিকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ১২শ’ টেকনোলজিস্ট নিয়োগের কথা থাকলেও অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার (যাকে অবসরউত্তর কোভিড ১৯ সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত করা হয়) নেতৃত্বে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ১৮৩ জন টেকনোলজিস্টের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে। এসব অনিয়মের পরও বিষয়টি তদন্ত না করে গত রোব ও সোমবার ১৮৩ জনকে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে কাগজ পত্র দাখিল করতে বলা হয়। এদের মধ্যে ১৫৭ জন হাজির হয়ে কাগজ পত্র জমাদেন। জমাকৃত কাগজ পত্র বাছাই করে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাস করা প্রার্থী রয়েছেন ৯৫ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৫০ জন, বিএসসি ইন টেকনোলজি পাস করা ৯ জন, সনদ বিহীন প্রার্থী ২ এবং ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসি পাস করা প্রাথী ১ জন।
তালিকায় ১ জন ফার্মাসিস্ট, যার ল্যাবরেটরি বিষয়ে কোনো শিক্ষা নেই। দু’জনের কোন সনদই নেই। ৫০ জন কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা যাদের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এসব অসঙ্গতি সুরহা না করে এদের চ‚ড়ান্ত নিয়োগ প্রদানে স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গত বুধবার নতুন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সব পরিচালক/লাইন ডাইরেক্টর, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, মেডিকেল কলেজ প্রিন্সিপাল, বিভাগীয় পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের কাছে এ কাজে স্বেছাশ্রমের ভিত্তিতে নিয়োজিত টেকনোলজিষ্টদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যা আগামী সোমবার বিকাল ৫ টার মধ্যে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বিধিবিধান উপেক্ষা করে অসচ্ছ প্রক্রিয়ায় অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিতদেরকে স্বাস্থ্য অধিদফতর তালিকাভুক্ত করে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে অধিদফতরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার স্বীকৃত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিন বছর ডিপ্লোমা পাস চাওয়া হয়। কিন্তু অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) থেকে ২ জুন ১৮৩ জনের নামের প্রস্তৃতকৃত তালিকাটি দৃশ্যমান অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিধি বহির্ভ‚ত। এছাড়া গত ১৬ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫৭ জন টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে প্রেরিত তালিকাটি ক্রুটিপূর্ণ ও বিতর্কিত।
দৃশমান অসঙ্গতি-পরিচালক (প্রশাসন) কার/কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৮৩ জনের নামের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছেন তার প্রেরিত চিঠিতে সে কর্তৃপক্ষ/কোন নির্দেশনার স্মারক উল্লেখ নেই। তালিকায় মহাপরিচালকের অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ নেই। চিঠিতে উক্ত ১৮৩ জনকে সরাসরি স্থায়ী নিয়োগের কোন প্রস্তাব নেই। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার জাকির হোসেন, যুগ্ম সচিব সাহিনারা খাতুন, অতিরিক্ত সচিব শেখ মুজিবর রহমান ৩ জুন সরাসরি স্থায়ী নিয়োগ দিতে প্রেসিডেন্টের অনুকম্পা চেয়ে সারসংক্ষেপ পাঠান। চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে তারমধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান/এনজিও’র নাম রয়েছে। যেমন- বিএসএমএমইউ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক। এ সসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সরকারি ভাবে পদায়নের ক্ষমতা স্বাস্থ্যবিভাগের নেই। অথচ সেব তালিকাও অনুমোদিত হয়েছে।
দেশের হাসপাতাল/চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) পরিচালক (মেডিকেল এডুকেশন) এর তত্ত্বাবধানে। অথচ তালিকায় রয়েছে পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং এনটিপি থেকে।
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রধান হাসপাতাল বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যারা কাজ করেছে তাদের নাম নেই তালিকায়। এছাড়া কুর্মিটোলা হাসপাতালে গত ৪-৫ বছর ধরে দৈনিক ভিত্তিতে প্যাথলজি বিভাগে কর্মরতদের নাম তায়িকায় নেই। এমনকি করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কেন্দ্রস্থল আইইডিসিআর’র কর্মরতদের ও নাম নেই সেখানে।
এ বিষয়ে পরিচালক এনটিপি ও লাইন ডিরেক্টর এমবিডিসি প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ইউএনএফপিএ’র প্রকল্পে তিনি কতজন টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করেছেন সেটি জানতে চাওয়া হলে তিনি তালিকাটি পাঠিয়ে দেন। তবে প্রমার্জনায় এদের সরকারি নিয়োগের বিষয়ে তিনি কিছ্ ুজানতে না। এমনকি তাকে কেউ জানায়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে পরিচালক প্রশাসনের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হন। পরে জানতে পারেন এরসঙ্গে অধিদফতরের কর্মরত নয় এবং উচ্চপদস্থরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের পর্যাপ্ত বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডি থাকতে কারিগরি বোর্ড বা শুধুমাত্র বিচ্ছিন টেকনোলজি বা রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ বহির্ভূত ফার্মাসিস্ট এখানে কিভাবে নিয়োগ হয় জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন জাতির বিবেক এটা কোনদিন মেনে নেবেন না কলঙ্কিত হয়ে থাকবে এই নিয়োগ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট একজন ফার্মাসিস্ট এর কাজ হচ্ছে ঔষধ বিতরণ করা সে কিভাবে করণাৱ রোগীর স্যাম্পল কালেকশন করবে সেটা সে কিভাবে ব্লাড কালেকশন করবে আমার তো মনে হয় একজন ফার্মাসিস্ট বা আপনার সনদ বিহীন ব্যক্তি মানুষের শরীরের ভেইন এবং আটার এর মধ্যে তফাৎ বুঝতে পারবেনা সে কিভাবে রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেবে এসব টেকনোলজিস্ট দিয়ে কি হবে এসব ভুয়া জনবল দিয়ে সরকারি সেবা প্রদান করা সম্ভব নয় অবিলম্বে এসব ভুয়া লোকদের নিয়োগের ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন