মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনায়ও ভয়ঙ্কর অপরাধ

চট্টগ্রামে খুন গণধর্র্ষণ অস্ত্রবাজি চলছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ও

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

স্বামীর সাথে বাপের বাড়ি থেকে শ^শুরবাড়ি যাচ্ছিলেন নববধূ। পথে তাদের দুজনকে জোর করে তুলে নেয় এক দল দুর্বৃত্ত। স্বামীকে গাছের সাথে বেঁধে স্ত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণ করে তারা। ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও এলাকায়। বাঁশখালীতে রাতের আঁধারে তরুণীকে রাস্তা থেকে তুলে আমবাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করে একদল পাষন্ড। ফটিকছড়িতে প্রকাশ্যে রাস্তা থেকে দুই কিশোরী স্কুলছাত্রীকে তুলে পাহাড়ে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায় আট সন্ত্রাসী। পালাক্রমে ধর্ষণের পর অচেতন দুই খালাতো বোনকে ফেলে যাওয়া হয় নির্জন পাহাড়ে।

করোনা মহামারীর মধ্যেই এমন সব ভয়ঙ্কর অপরাধের ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রামে। ধর্ষণ, গণধর্ষণের সাথে খুনোখুনি, অস্ত্রবাজি, চুরি ডাকাতি এবং মাদকের কারবারও থেমে নেই। তুচ্ছ ঘটনায় মানুষ খুন হচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিক কলহ বিরোধেও রক্ত ঝরছে। স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্বজনের হাতে স্বজন খুনের ঘটনাও ঘটছে। গেল তিনমাসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে অন্তত ৬০টি খুনের ঘটনা রের্কড হয়েছে।

বাঁশখালী এবং ফটিকছড়ির ওই গণধর্ষণের দুই মূলহোতা র‌্যাব-পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। তার আগে বোয়ালখালী ও বাঁশখালীতে খুনোখুনিতে জড়িত দুইজনও বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। সর্বশেষ শনিবার ভোরে পতেঙ্গায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ যায় এক মাদক কারবারির। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে এক লাখ ইয়াবাসহ অস্ত্র গুলি। তবে কথিত এসব বন্দুকযুদ্ধেও থামছে না অপরাধীদের তান্ডব। এতে জননিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
নববধূকে তুলে নিয়ে স্বামীর সামনে ধর্ষণের ঘটনায় গেল ১৪ জুন পটিয়া থানায় মামলা হয়। ঘটনার সাত দিন পরে মামলা হলেও পুলিশ আসামিদের খুঁজে পায়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার র‌্যাব ওই ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে পাকড়াও করে। তারা হলো মো. জুয়েল (২৮) ও মো. মিন্টু (৩৩)। তাদের সহযোগীরা এখনও অধরা।

১৫ জুন ভোরে বাঁশখালীর জলদি এলাকায় র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আবদুল মজিদ (২৯)। বিগত ২৭ এপ্রিল উপজেলার বৈলছড়িতে দলবল নিয়ে এক তরুণীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে মজিদ ও তার সহযোগীরা। এই ঘটনায় জড়িত অপর আসামিরাও ধরা পড়েনি। ফটিকছড়ির ভুজপুরে ২৩ মে প্রকাশ্যে দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের মূলহোতা হেলাল উদ্দিন (৩০) ওই রাতে পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে মারা যান। গত ১১ জুন ধর্ষণ মামলার দুই আসামি মোহাম্মদ শাহজাহান (২১) ও মো. মিজানকে (২০) ছটিকছড়ি থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে গত ৭ জুন নগরীর অক্সিজেন মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষমান এক পোশাক কর্মীকে তুলে রাস্তার পাশে পার্র্কিং করা একটি বাসে আটকে রেখে ধর্ষণ করে।

মহাগর এবং জেলায় খুনের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। গত ১৮ জুন সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করে ইপিজেড থানা পুলিশ। ১১ জুন রাতে ফটিকছড়ির নানুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা রাশেদ কামালকে (৩৮)। তবে খুনিচক্রের সদস্যরা ধরা পড়েনি। একই উপজেলার খিরামে আওয়ামী লীগের বিরোধে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপি সদস্য জব্বারকে।

১৫ মে রাতে বোয়ালখালীতে বাসায় ঢুকে পুত্রকে হত্যা আর পিতাকে গুলি করার ঘটনায় মূল আসামি শওকত পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে মারা যান। পরদিন ভোরে বাঁশখালীতে পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে প্রাণ হারান জোড়া খুনের প্রধান আসামি নুরুল আনসার কালু (৪০)। তার দুই দিন আগে উপজেলার বাহারছড়ায় আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষের সংর্ঘষে মারা যান দুই মাদরাসা ছাত্র।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী করোনামুখী ব্যস্ততায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তবে র‌্যাব পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন প্রতিটি অপরাধের ঘটনা গুরুত্বে সাথে নিয়ে তদন্ত এবং আসামিদের পাকড়াও করা হচ্ছে। অস্ত্র, মাদকদ্রব্য উদ্ধারেও অভিযান চলছে। প্রতিনিয়তই ধরা পড়ছে অস্ত্র গুলি, মাদক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন