বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

মোটরসাইকেল হয়ে উঠছে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও বিকল্প বাহন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২০, ১১:১৬ পিএম | আপডেট : ২:০১ পিএম, ২৩ জুন, ২০২০

সবকিছু খুলে দেওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় গণপরিবহন ব্যবহারের কারণে সংক্রমণ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সাথে সাধারণ যাত্রীদেরকে অতিরিক্ত ৬০% পরিবহন ব্যয়ের বাড়তি চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। সামাজিক সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণপরিবহণসহ সবধরনের চলাচলে এবং নিত্য প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সকলকে কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বরং দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফলে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।সংক্রমণ দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া মুক্তভাবে বাইরে চলাচল এবং ঘোরাফেরা করা। সারাবিশ্বের এবং আমাদের দেশের পরিবহন বিশেষত, ডাক্তার এবং ভাইরাস-বিশেষজ্ঞরা জনগণকে সরকারি গাইড লাইন অনুসরণ করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ-স্টিমারসহ সবধরনের গণপরিবহনে যেন অল্প পরিমাণ যাত্রী বহন করা হয়, যাতে একজন থেকে অন্যজন নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারে। এছাড়া গণপরিবহনগুলোতে যাত্রী এবং কন্ডাক্টর, টিকেট বিক্রেতা, হেলপারসহ সকল কর্মীদের জন্য যথাযথ স্যানিটাইজেশন ও জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে এসব মেনে চলা সত্যিই খুব কঠিন।

পরিবহন খরচ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধিতে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া:

সরকার গণপরিবহনে আসন সংখ্যা বা ধারণ ক্ষমতার থেকে কম যাত্রী নেয়ার শর্তে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এই ভাড়াবৃদ্ধি নিয়ে যাত্রীসাধারণ ও পরিবহন মালিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকজনের অভিজ্ঞতার কথা এখানে তুলে ধরা হলো।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইফুদ্দিন জানান, গণপরিবহনে এখন যেটা চলছে তাকে ডাকাতি বলা যায়। যেখানে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিলো ৭ টাকা, সেখানে এখন ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। তারা যদি ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায় করতো তাহলে কোনোমতে তা ১২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অন্য একজন বাসযাত্রী রফিক জানান, তিনি মিরপুর-কুড়িল রুটে চলাচল করেন। এখানে বেশির ভাগ যাত্রীই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারটিতে সচেতন নয়। তাছাড়া বাসগুলোতে দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেয়া হয়। তিনি বলেন প্রচুর লোকজন বাসে তার কাছাকাছি চলে আসে, তাতে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তাছাড়া বাসের সুপারভাইজার হেলপাররাও বাসের ভিতরে চলাচলের সময় শরীরে স্পর্শ করেন। বাসগুলোতে জীবাণুনাশেরও তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। ফলে এই ধরনের চলাচলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।

একটি দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনিকা তাসনিম বলেন, লকডাউন উঠে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই অফিসে যেতে হচ্ছে। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য প্রতিদিন ট্যাক্সি ভাড়া করে আসা-যাওয়া করতে হয়, ফলে খরচ অনেক বেশি পড়ে। আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আমাকে এই বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে । সেক্ষেত্রে তার মতো অনেককেই বাধ্য হয়ে নিজের নিরাপত্তা এবং যাতায়াত খরচ কমানোর জন্য বিকল্প বাহনের সন্ধান করতে হচ্ছে।

যে হারে দিন দিন সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাধারণ পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হচ্ছে এবং খরচ ৬০শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে, তাতে সচেতন জনগণকে পরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করতে হবে। মহামারীর এই সময়ে মানুষের জীবন এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এবং বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এই মহামারীতে ভিয়েতনাম পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের থেকে শিক্ষা নিয়ে শুরু থেকেই কঠোর লকডাউন এবং আইসোলেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যদিও এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই যে, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহার তাদেরকে সাফল্য প্রদান করেছে কিন্তু এটা ঠিক যে সেখানে বলতে গেলে প্রত্যেকেই নিজস্ব মোটরসাইকেল ব্যবহার করে, যা চলাচলের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের অনেক খবর থেকে জানা যায়, বাহন হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক স্কুটার ভাড়ায় ব্যবহার করা সংক্রান্ত বিশদ পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে জনগণকে। ব্রিটিশ সরকারের পরিবহন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, গণপরিবহন ব্যবহার করার থেকে গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে প্রাইভেট কার ও অন্যান্য বাহন ব্যবহারের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। চলাচলের জন্য ব্যক্তিগত বাহন, যেমন মোটরসাইকেল এবং স্কুটার ইত্যাদি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।

কীভাবে মোটরসাইকেল সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ?

মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী জনৈক নাজমুদ্দিন এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি বসুন্ধরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন মোটরসাইকেল ব্যবহার করি। আমার বাইকে প্রতি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করে ৪৫ কিলোমিটার যেতে পারি। প্রতিদিন আসা-যাওয়া বাবদ আমার মোট খরচ পড়ে মাত্র ৪০ টাকা। প্রতিদিন অন্যান্য জায়গায় আসা-যাওয়ার খরচসহ আমার মাসের যাতায়াত খরচ ১হাজার টাকারও কম পড়ে। অথচ আমি যখন সাধারণ বাহন ব্যবহার করতাম, তখন প্রতিদিন ৮০ টাকা বাস ভাড়া এবং ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগতো। প্রতিদিন মোট খরচ হতো ১২০ টাকা। আমার স্ত্রীসহ কোথাও গেলে, ট্যাক্সির জন্য মাসে আরও ৪ হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হতো। একই দূরত্বের জন্য মোটরসাইকেল অনেক সাশ্রয়ী। আমি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি টাকা বাঁচাতে পারছি। উপরন্ত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারার কারণে সংক্রমতি লোকজনের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকিও কমে গেছে আমার। শুরুতে মনে হতে পারে মোটরসাইকেল কেনা অনেক খরচসাপেক্ষ ব্যাপার কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটা মোটরসাইকেল দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যায়, ফলে সুবিধা অনেক বেশি। কারণ অর্থনেতিকভাবে লাভবান হওয়াতো যায়ই, আবার চাইলে ১০/১২ বছর পরে ভালো দামে বিক্রিও করে দেওয়া যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
md sojeL rana ২৪ জুন, ২০২০, ২:৫৩ পিএম says : 0
Bike হল সবচাইতে নিরাপদ
Total Reply(0)
মোঃ সাইফুল ইসলাম ২৭ জুন, ২০২০, ৭:২৬ পিএম says : 1
ভাই সত্যি বলেছে,জনগণ আরো উপকৃত হতো যদি এই সময়ে সকল মোটরসাইকেল নাম্বার করার জন্য সরকার চাপ না দিয়ে, একটু সুযোগ দিতো, এমন সংকটময় সময়েও পুলিশের মোটরসাইকেল আরোহীদের কে হয়রানি করে,নাম্বার না থাকার কারনে,,,
Total Reply(0)
মোঃ সাইফুল ইসলাম ২৭ জুন, ২০২০, ৭:২৬ পিএম says : 2
ভাই সত্যি বলেছে,জনগণ আরো উপকৃত হতো যদি এই সময়ে সকল মোটরসাইকেল নাম্বার করার জন্য সরকার চাপ না দিয়ে, একটু সুযোগ দিতো, এমন সংকটময় সময়েও পুলিশের মোটরসাইকেল আরোহীদের কে হয়রানি করে,নাম্বার না থাকার কারনে,,,
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন