শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চালের বাজারে সিন্ডিকেট

আন্তর্জাতিকে কমলেও দেশে বাড়ছে দাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যস্ত। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ সময় প্রধান খাদ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে গেছে। দেশেও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তারপরও দেশের চালের বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ধানের বাড়তি দামের অজুহাতে মিল মালিকরা বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার মধ্যেই গত ১০ দিনের ব্যবধানে চিকন, মাঝারি, মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকার ৪৫টি এলাকা চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে রেড জোন, দেশের ১০ জেলা এবং বিভিন্ন জেলার কিছু এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন দেয়া হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট গত ১৪ জুন থেকে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়।
জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সারা বিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে নিমজ্জিত। এটাকে পুঁজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ন্যূনতম ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা থাকলে কোনও অবস্থায় এই সমস্যাকে পুঁজি করে মিল মালিক ও ব্যবসায়ী দাম বাড়াতে পারে না। সরকারের মনিটরিং চলছে, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা যায়, করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই চাল বিক্রি বেড়ে যায়, এতে দামও বাড়ে। নতুন চাল বাজারে এলে ঈদের আগে দাম কিছুটা কমে। এখন আবার দাম বাড়ছে।

এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে মোট ৪৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। এর বাইরেও স্থানীয় জাতের নানা ধানের আবাদ হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪ দশমিক ২০ টন করে মোট দুই কোটি লাখ টন।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরিবের চাল হিসেবে পরিচিতি মোটা চালের দাম বেড়ে কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে।

চালের দাম বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চিকন চালের দাম ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মোটা চলের দাম ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজির চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৬৮ টাকা; যা আগে ছিল ৫২ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা; যা আগে ছিল ৪৪ থেকে ৫২ টাকা। আর মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা; যা আগে ছিল ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। দেশের বাজারে চালের এমন দাম বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে চালের দাম কমছে। গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমেছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

দেশে ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁয়ের ন্যাশনাল রাইস মিলের কর্ণধার মোহাম্মদ হাসান রাজু বলেন, ছোট ছোট মিলগুলো এখন চলে না। বাজারজাতের জন্য উৎপাদিত চাল শুধু বড় বড় অটো মিলে মজুত আছে। চালের দাম বাড়ার এটা একটা কারণ। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বড় বড় অটো মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে দুই হাজারের বেশি মিল মালিকের নাম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও দীর্ঘদিনেও কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিমত সিন্ডিকেটধারী ও কালো তালিকাভুক্ত মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এভাবে যখন তখন চালের দাম বাড়িয়ে দেয়ার সাহস পেত না।
বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও নওগাঁর রাজু অটো রাইস মিলের কর্ণধার এরফান আলী বলেন, আমাদের কাছে চালের দাম বাড়েনি। খুচরা বাজারে উল্টাপাল্টা করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন