আল্লাহ পাক বলেন, ‘তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’-(সূরা শূরা, আয়াত ৩০)। ইবনে আবি হাতেম (রহ.) হজরত হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, যে ব্যক্তির গায়ে কোন কাঠের আঁচড় লাগে, অথবা কোন শির ধরফড় করে অথবা পা পিছলে যায়, তা সবই তার গোনাহর কারণে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক গোনাহর শাস্তি দেন না, বরং যেসব গোনাহর শাস্তি দেন না, সেগুলোর সংখ্যাই বেশি।-(তাফসিরে ইবনে কাসির)। প্রত্যেক মানুষের জীবনে অনেক বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়। কখনো আনন্দ থাকে। কখনো কষ্ট ঘিরে নেয়। কখনোও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রিজিক দান করা হয়। কখনো ক্ষুধা-অনাহারে কষ্ট করতে হয়। কখনো সুস্থতার নেয়ামতে বান্দা তৃপ্ত থাকে। কখনো আবার অসুস্থতা জীবন চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, বান্দার যে কোন রকমের বিপদ আসে তা তার কর্মের কারণেই আসে। তবে আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ পাক এও বলেন, তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। অর্থাৎ যে কোন রকমের বিপদে বান্দা আপতিত হোক, সেটা তার গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে।
অসুস্থতা আল্লাহর রহমত: বিপদ কয়েক ধরনের হয়। এর মধ্যে একটি হলো অসুস্থতা। অসুস্থতা চাই ছোট হোক বা বড় সেটা বান্দার জন্য কষ্টকর নিঃসন্দেহে। অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করাও তখন তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কোন কোন অসুস্থতার কারণে তো কয়েক মাস কখনো এক বছর পর্যন্ত বিছানা ছেড়ে ওঠা যায় না। জিন্দেগির অধিকাংশ বয়েস শেষ হয়ে যাওয়াটাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অসুস্থতার কারণ বানিয়ে দেন। অসুস্থতা বাহ্যত দুঃখ-কষ্টের বিষয়। তবে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে অসুস্থতা একটি রহমত যার মাধ্যমে বান্দা গোনাহ থেকে মুক্তি পায়। ত্রু টিগুলোকে নেকআমল দ্বারা মিটিয়ে দেয়া হয়। আখেরাতের আজাব থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কিছু হাদিস দ্বারা বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যার জন্য নেকির ইচ্ছে করেন তাকে কষ্ট ও বিপদে ফেলেন।’-(মিশকাত, হাদিস ১৫৩৬)। অর্থাৎ নিজের, সন্তানের, সম্পদের ওপর কোন মুসিবত এলে তার জন্য বিনিময় ও সওয়াব পাওয়ার কারণ হয়। গোনাহের কাফফারা এবং মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যম হয়। বিপদ-আপদ সব সময় আল্লাহর অসুন্তুষ্টির কারণে হয় না বরং কখনো তার দয়া ও মেহেরবানির কারণেও হয়। যখন বান্দা এ বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে। আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। আর যদি বান্দা বিপদে পড়ে অনেক হায় হুতাশ করে। অধৈর্য হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে এ বিপদ আল্লাহর অসুন্তুষ্টির আলামত। মিশকাত শরিফের অন্য একটি হাদিসে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন বান্দার গোনাহ অনেক হয়ে যায়। তার আমলও এ পরিমান নাই যে এটা দ্বারা তার গোনাহের কাফফারা হবে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে কিছুটা দুঃখ-কষ্টে নিপতিত করেন যাতে তার গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়।’-(মিশকাত, হাদিস ১৫৮০)। উল্লেখিত হাদিসগুলো দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে মাফ করতে চান। মাফ করণের বাহানা তালাশ করেন, কিভাবে বান্দাকে মাফ করা যাবে। মাফ করণের একটি মাধ্যম হলো অসুস্থতা। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে অসুস্থতা দিয়ে তাঁর গোনাহগুলো মাফ করে দেন। তবে যদি কোনো মুনাফেক অসুস্থ হয় তখন এই অসুস্থতা তার জন্য রহমত নয়। আর ঐ মুনাফেক একে গোনাহ মাফের কারণ মনে করে না। এই অজ্ঞতার দরুণ অসুস্থতাকে সে এক কঠিন বোঝা মনে করে। অভিযোগ অনুযোগ করে। যার কারণে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়ে যায় সে।
কাঁটা বেঁধার ফজিলত: ছোট থেকে ছোট এমনকি সেটা যদি পায়ে কাটা ফুটাও হয়। যদি বান্দা আল্লাহর কাছে বিনিময়ের আশা করে। তখন এই অতি ছোট কষ্টের কারণেও আল্লাহ পাক এর প্রতিদান দিয়ে দেন। পার্থিব কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে সওয়াবের আশা করা এর এত বিশাল প্রতিদান যে, কিয়ামতের দিন যখন তার প্রতিদান দেখানো হবে। তখন বান্দা আকাঙ্খা করবে, যদি দুনিয়ার জীবনটা শুধু কষ্টেরই হতো! আর এই কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে আজ এই বিশাল প্রতিদানের উপযুক্ত হতাম। হজরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাওহিব বলেন, আমি হজরত আবু হুরাইরাকে (রা.) বলতে শুনেছি, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে কোনো মুমিন বান্দার পায়ে কোনো কাঁটা বিধে এবং এর কারণে সে সওয়াবের আশা রাখে। তাহলে এর মাধ্যমে কিয়ামতের দিন তার গোনাহগুলো মার্জনা করা হবে।’-(আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৫০৯)।
জ্বরের ফজিলত: হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত নবী কারিম (সা.) হজরত উম্মে সায়েবের কাছে গেলেন। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন