শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিতে নতুন উপসর্গ

উৎকণ্ঠায় হোস্টেল মেসের ছাত্রীদের অভিভাবক

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:২২ এএম, ২৯ জুলাই, ২০১৬

স্টালিন সরকার : দেশের উন্নয়নে নারী শিক্ষা অপরিহার্য। কিন্তু হোস্টেলে ও মেসে থেকে লেখাপড়া করা মেয়েদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়ে গেছে অভিভাবকরা। ঢাকা ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজ ও কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের হোস্টেল থেকে পর্দানশীল ছাত্রীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতারের পর অভিভাবকদের মধ্যে এই দুচিন্তা দেখা দেয়। এমনিতেই অভিভাবকরা মেয়েদের মেসে ও হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করায় চিন্তুামুক্ত থাকতে পান না। তারপর হোস্টেলে থাকা মেয়েদের জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার তাদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে এমন অনেক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্রই পাওয়া গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী মনে করেন হেজাব-বোরকা পড়লেই ছাত্রীরা চরমপন্থী হবে এমন কথা নেই। তবে মেস ও হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করা চরমপন্থী ছাত্রীদের গ্রেফতারের সময়ও হিসেব-নিকেষ করা উচিত। কারণ অভিভাবকরা ভীতির কারণে মেয়েদের হোস্টেলে রেখে পড়ানোর আগ্রহ হারাবে। এতে নারীর শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আর সব ধর্মীয় বইকে জিহাদী বই মনে করার উচিত নয়।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে ৩ ছাত্রীকে (কাজিন ফারজানা বাতুল, আরজিনা আক্তার চম্পা, সালমা আক্তার) আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হোস্টেলে অভিযান চালায় র‌্যাব ও পুলিশ। একটি কক্ষে ৪ ছাত্রী থাকতেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে রাজধানীর ইডেন কলেজের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল থেকে ৫ জন পর্দানশীল ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাড্ডায় ফটোকপি করার সময় হেজাব পরিচিত এক ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জিহাদী বই পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ খবরগুলো ছোট্ট এবং অনেকের কাছে গুরুত্বহীন মনে হলেও সামাজিক বাস্তবতায় খবরগুলোর ‘ভয়াবহতা’ গুরুত্বর। এর প্রভাব পড়বে সুদূরপ্রসারী। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা কিশোর-তরুণদের জঙ্গি হয়ে উঠার কাহিনী মানুষ শুনেছে। এখন ছাত্রীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে একই অভিযোগে।
সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক হওয়া দরকার। সন্দেহের বশবতী হয়ে যে ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে; পরবর্তীতে তারা যদি নির্দোষও প্রমাণ হন তাহলেও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ জঙ্গির তকমা গায়ে লাগলে এই সমাজে সে মেয়েদের বিয়ে দেয়া কঠিন। আর বোরকা বা হেজাব পড়লে মেয়েরা জঙ্গি হবে বা কোরআন, হাদিস, ইসলামী সাহিত্যের বইকে জিহাদী বই হিসেবে আখ্যা দেয়া অনৈতিক।
দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নারীর ভূমিকা অপরিহার্য। লেখাপড়ায় দেশের মেয়েরা বেশ এগিয়েছে। সব ক্ষেত্রে নারীরা সাফল্য দেখাচ্ছে। সামাজিক অবস্থা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে এক সময় মেয়েরা হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করবে এটা কল্পনাও করা যেত না। ছেলেদের মেসে বা হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতে দিলেও বাবা-মা কখনোই মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একা ছাড়তেন না। হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতে দিতেন না। পরিস্থিতির পাল্টেছে এবং মেয়েরা এখন হোস্টেলে থেকে এবং মেসে থেকে লেখাপড়া করছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এ চিত্র বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে রয়েছে। লাখ লাখ ছাত্রী হোস্টেলে থেকে এবং মেস বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকরা এতোদিন কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত ছিলেন। দু’টি ঘটনার পর তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
ছাত্রদের মধ্যে জঙ্গি হয়ে ওঠা এবং জঙ্গি ইস্যুতে ছাত্রদের গ্রেফতার, অভিযানে হত্যার খবর পুরনো। কিন্তু ছাত্রীদের বেলায় টো সংবেদনশীল। ইডেন কলেজ ও ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রীদের গ্রেফতারের পর হোস্টেলে থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। অনেক জঙ্গির (পুরুষ) বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যরা এতো বিক্ষুব্ধ যে পুত্র জঙ্গি হয়েছে এ লজ্জায় ছেলের লাশ গ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেদের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছেন। সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারছে না। অনেক জঙ্গির গ্রামের মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেছে শান্তশিষ্ট মেধাবী ছেলেটির পথভ্রষ্ট হয়ে জঙ্গি হয়ে যাওয়ার খবর শুনে। ছাত্রদের নিয়েই বাবা-মায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। আর মেয়ের বাবা-মা? হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতে গিয়ে মেয়েরা জঙ্গি কানেকশনে পড়েন কিনা আশঙ্কায় অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। উৎকণ্ঠায় প্রহর গুণছেন হাজার হাজার অভিভাবক।
আমাদের সমাজে পুরুষদের যেভাবে দেখা হয় নারীদের সেভাবে দেখা হয় না। মেয়েদের ব্যাপারে সবকিছুই দেখা হয় সংবেদনশীলতায়। ব্যাচেলর পুরুষরা বাসা ভাড়া নিয়ে ঝামেলায় পড়লেও ব্যাচেলর নারীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। ঢাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে নারীরা মুখোমুখি হন নানান ধরনের বিড়ম্বনার। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত এক নারী বাড়িভাড়ার বিড়ম্বনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, কিছুদিন আগেই বাসায় ওঠার এক মাসের মধ্যে তাঁকে তা ছাড়তে হয়েছিল নারী হওয়ার কারণেই। বাড়ির মালিক তাদের হুট করেই বাসা ছাড়তে বলেন। ওই নারীর মতে ঢাকার কর্মজীবী নারীদের ভাড়া নিতে গেলে তো শুনতে হয় অনেক অযাচিত প্রশ্ন। বেশির ভাগ মালিকই মেয়েদের ভাড়া দিতে চান না। আর ভাড়া পেলে মানতে হয় হাজার নিয়মকানুন। অবস্থা দেখে মনে হয়, নারীদের বিনা মূল্যে বাসায় থাকতে দেয়া হচ্ছে। ঢাকায় কেন ঢাকায় আত্মীয় নেই, এমন প্রশ্ন শুনতে হয় বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে।
ঝামেলায় পড়তে পাড়েন এমন আশঙ্কা থেকে জঙ্গির অভিযোগ ছাত্রীদের গ্রেফতার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে অপরাধ বিশেষজ্ঞ, সমাজ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কৌশলে এড়িয়ে যান। তবে যারা কথা বলেছেন তারা নিজেদের মতো করেই ব্যাখা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বলেন, জঙ্গি ইস্যুতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আমাদের দেশে নতুন স্বাভাবিক অবস্থা। এ অবস্থা থেকে দেশ পিছনে যাবে বলে মনে হয় না। এটা এক সময় মানুষের কাছে সহনীয় তথা নর্মাল অবস্থা হয়ে যাবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। নিজেরা কিভাবে এটাকে মোকাবিলা করবো সে সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পুলিশকে সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে। পুলিশিং বলে একটা কথা আছে। যেমন চোর, ডাকাত ধরা। সেই পুলিশিং এ নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে জঙ্গি ধরা। প্রশ্ন হলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। কিছু তথ্য পেলেই ধরে নিয়ে আসা এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে না পারলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে। আর জঙ্গিদের গ্রেফতার তবা জঙ্গি মেরে সমস্যার সমাধান হবে না। কেন মানুষ জঙ্গি হচ্ছে সে কারণ চিহ্নিত করে সংকটের সমাধান করতে না পারলে সমস্যা থেকেই যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, আমাদের দেশে ছেলেদের সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়; মেয়েদের প্রতি তেমন আচরণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয় না। দাড়ি-টুপি দেখলেই জঙ্গি হিসেবে সন্দেহের সে বাতিক সৃষ্টি হয়েছে; তেমনি নারীরা বোরকা-হেজাব পড়লে সে দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। এটা উচিত নয়। ইসলামী নিয়ম মেনে চলতে যে নারীরা অভ্যস্ত হতে চান তারা হেজাব পড়েন। মূলত হজরত ওমর (রা.) স্ত্রীর দিকে কেউ টিপ্পুনি কাটার পর তিনি মহানবীকে বিষয়টি অবহিত করেন। মহানবী তার স্ত্রীকে হেজাব পড়ার উপদেশ দেন। তখন থেকে মুসলিম নারীদের মধ্যে হেজাব পড়ার ঝোঁক বাড়ে। যারা বোরকা বা হেজাব পড়েন তাদের মধ্যে ধর্মীয় চরমপন্থীর সংখ্যা সীমিত। নারী শিক্ষা নারী জাগরণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। কোনো নারীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। তবে বাছ-বিচার না করে যদি বোরকা, হেজাব পড়া দেখে বা ধর্মীয় বই পুস্তুক দেখে নারীদের গ্রেফতার অভিযান চলে তাহলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষ সেটা ভালভাবে মেনে নেবে না। এতে সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ বাড়বে। মানুষ সরকারকে ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে অভিযুক্ত করার প্রয়াস পাবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে তদারকি করতে হবে। কারণ কোনো মেয়েকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারের পর সেই মেয়ে যদি জঙ্গি না হয় তাহলে সমাজিকভাবে ওই মেয়ে অচ্ছুত হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, পুলিশ যে কোনো বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী ধারার বই পেলে পরিবারের সবাইকে গ্রেফতার করছে। ইসলামী বই মানেই জিহাদী বই নয়। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের কাছে যে বই পাওয়া গেছে তা জেহাদী বই নয়। দেশে কি কোরআন-হাদিস নিষিদ্ধ? পর্দানশীল ছাত্রীদের কাছে যা পাওয়া গেছে তা মুদ্রণ, পঠন ও বিপণনে বিধি নিষেধ নেই। কাজেই ইসলামী বইকে জেহাদী বই বলে অপপ্রচার করা উচিত নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের তথ্য অনুসারে ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা সত্ত্বেও এতোগুলো লোক বেশ কিছুদিন একসাথে ছিল। এতে মনে হয়, যে জেএমবি’কে আমরা ২০০৫ সাল থেকে ২০১০/২০১১ সাল পর্যন্ত জানতাম, তাদের পুনরুত্থান ঘটেছে। এই পুনরুত্থানের ফলে নতুনরূপে তারা সামনে আসছে। মনে হচ্ছে এদের বিস্তৃতি-পরিসর অনেক বেশি। যদি কেবল ঢাকা শহরেই এই অবস্থা হয় তবে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। যেটা বেশ উদ্বেগ এবং আশঙ্কার বিষয়। তবে এমন কিছু করা উচিত নয় যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়।
প্রশ্ন হলোÑ এই যে জঙ্গি সমস্যা এ দায় কার? কথা প্রসঙ্গে অনেকেই বলেছেন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলেদের জঙ্গি হয়ে ওঠা বা কলেজের পর্দানশীল ছাত্রীদের জঙ্গি সন্দেহে ধরে নিয়ে যাওয়ার দায় সমাজ এড়াতে পারে না। সমাজে দুর্নীতি আর দখলের মাধ্যমে যে পাপ জমা হয়েছে তাতে উপর তলার প্রতিটি পরিবারই মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করছে। নিজেদের নীতিহীনতার বীজ জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তারাই বুনে দিচ্ছে তরুণ-কিশোরদের মধ্যে। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা শিক্ষার অভাব এবং অনৈতিকতার চর্চা দেখে দেখে তরুণ-তরুণীরা ভুল আদর্শের টানে ভুলে যাচ্ছে মানবিকতার ন্যূনতম শর্ত। যাদের বলছি আগামীর ভবিষ্যৎ, তাদেরকে চালনা করতে অক্ষম আমাদের বর্তমান, দিশা দেখতে পারছে না কোনো উজ্জ্বল অতীত। রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং সমাজের যারা হর্তাকর্তা তারা লালসা, অত্যাচার, রাজনীতির দলাদলি বা ধর্মবিদ্বেষ যেভাবে ছড়িয়েছে এবং ছড়াচ্ছে তারই ছোঁয়া পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তাই আজ যখন তারুণ্যের এমন পথভ্রষ্ট হওয়া নানা আলোচনায়, তখন গভীরে যেতে হবে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই নীতিহীনতার প্রাধান্য। নীতিহীনতা বা হিংসা রাতারাতি উবে যাবে না। কিন্তু নীতি নির্ধারকরা সীমার মধ্যে ছোট করেও তো চেষ্টা করতে পারেন, যেসব সাধারণ মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছি সেগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনতে। ছোট ছোট চেষ্টাগুলোই একত্রিত হয়ে অনেক বড় চেহারা নিতে পারে। সময় এখনই। আর নারী শিক্ষার যে অগ্রগতির পতাকা উড়ছে জঙ্গি দমনের নামে তা থামানো হবে আত্মহত্যার নামান্তর। সমাজ এখনো নারীদের সংবেদনশীল দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারীর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, সমাজ পুরুষদের যে চোখে দেখতে অভ্যস্ত নারীদের সে চোখে দেখতে অভ্যস্ত নয়। কাজেই পর্দার নামে নারীরা চরমপন্ত্রী হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে নেয়া উচিত। তবে অভিভাবকরা মেয়েদের হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এমন কোনো কর্ম করা রাষ্ট্রের উচিত নয়।

ভিক্টোরিয়া কলেজ হোস্টেল থেকে তিন ছাত্রী আটক
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ফয়েজুন্নেসা হোস্টেল থেকে তিন ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে হোস্টেল সুপারের উপস্থিতিতে কোতয়ালী থানা পুলিশ ওই ছাত্রী হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে তিন ছাত্রীকে আটক করে। তাদের রুম থেকে পুলিশ জিহাদী বইসহ জাকির নায়েকের লেকচার গাইড উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, আটক তিন ছাত্রীর বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাথে জড়িত। তাদের কাছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কারো ক্ষতি করার মতো বই, উদ্দেশ্যমূলক কর্মকা- পরিচালনার লক্ষ্যে বিস্তারিত লেখা ডায়েরি পাওয়া গেছে। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে জিহাদী বইসহ জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্র, মতিউর রহমান নিজামীর লেখা বই ও ইসলামী রাষ্ট্র ও সংবিধান এবং যুদ্ধাপরাদের অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট উদ্দেশ্য প্রণোদিত এরকম লেখা বই উদ্ধার করা হয়।
কোতয়ালী থানার ওসি আবদুর রব এবং ওসি (তদন্ত) সামসুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকায় ভিক্টোরিয়ার ডিগ্রি শাখা অভ্যন্তরে ছাত্রী হোস্টেল ফয়েজুন্নেসায় অভিযান চালিয়ে যে তিন ছাত্রীকে আটক করেছে তারা হলেন- মাস্টার্স হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের মতিউর রহমানের মেয়ে কানিজ ফারহানা রাতুল ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী এলাকার মোশাররফ হোসেনের মেয়ে আরজিনা আক্তার চম্পা। সে মাস্টার্স ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ে এবং অনার্স সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ইলিয়াছ মিয়ার মেয়ে সালমা আক্তার। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Prof. M. Hoque ২৯ জুলাই, ২০১৬, ৬:১২ এএম says : 0
To become a religious person and to become an Islamic Jongi are two different ball-games. Why a college/university student, all of a sudden, becomes a killer is difficult to answer, - perhaps to "imitate" the Syrian Islamic Jongi. The slow psychological transformation of a potential jongi should be noticeable to his/her close friends. Very likely, they may have discussed this "slow transformation of one of their friends" among themselves in private, though they were clueless! Parents may also have noticed, - but again they were also clueless. Most, if not all, of these Jongis come from upper Middle-class families. How to prevent it, - perhaps nobody knows ! Perhaps, this is a just a "phase" in the social character of a section of the community, - at times, it will be remembered just as a bad-dream ! - Prof. M. Hoque (USA).
Total Reply(0)
Sonia ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:৫০ পিএম says : 0
সব ধর্মীয় বইকে জিহাদী বই মনে করার উচিত নয়।
Total Reply(0)
Sakib ২৯ জুলাই, ২০১৬, ৪:০০ পিএম says : 0
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক হওয়া দরকার।
Total Reply(0)
সুফিয়ান ২৯ জুলাই, ২০১৬, ৫:২০ পিএম says : 0
প্রমাণ ও ওয়ারেন্ট ছাড়া কাইকে গ্রেফতার করা ঠিক না।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন