শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশি গরুতেই কোরবানি

ভারত থেকে আমদানি বন্ধ দেশে যে পশু আছে তা উদ্বৃত্ত হবে : প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক করোনায় আয় কমেছে কোরবানি কম হবে: বদিউল আলম মজুমদার

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

কোরবানির ঈদে ভারত থেকে গরু আমদানি করা হবে না। দেশিয় গরু দিয়েই এবারের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তাই ঈদুল আযহার আগে সীমান্তে ‘বিট খাটালের’ অনুমতি দেয়নি সরকার। আসন্ন ঈদুল আযহায় দেশিয় খামারিরা যাতে গবাদিপশুর ভালো দাম পান, তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় গরু আনা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে খামারিরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে শুধু কোরবানি উপলক্ষে নয় সারাবছরই ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধের দাবি করেন তারা। এতে দেশের খামারিরা উৎসাহিত হবেন এবং গরু পালন আরও বৃদ্ধি পাবে।

দেশিয় খামারিদের কথা চিন্তা করেই সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা মহামারিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট বসবে। রাজধানীতে দুই সিটি কর্পোরেশনে মোট ৪৩টি স্থানে কোরবানি হাটের প্রস্তুতি চলছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ইতোমধ্যে বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার হাট বসবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, পশুর হাটে প্রতিবার যেভাবে মেডিকেল টিম স্থাপন করা হয় এবারও দুই সিটি কর্পোরেশনে তেমনি মেডিকেল টিম থাকবে। তবে এবার পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থাও থাকবে।

তবে প্রতিবার কোরবানির সময় যে রকম জমজমাট হাট বসে এবার তা সম্ভব হবে না বলে অনেকে মনে করেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে ভিড় ঠেলে বাজারে যেতে চাইবে না। এছাড়া শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা। গত চার মাসে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা একবারেই নাজুক। তাই প্রতিবছর যেখানে একজন একাই একটা পশু কোরবানি দিতেন এবার শেয়ারে দেবেন। এতে পশু কোরবানি অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু এবার দেশের পরিস্থিতিটা অস্বাভাবিক, সে কারণে অনলাইনে বিক্রির পরিমাণ অন্য বছরগুলোর তুলনায় বাড়তে পারে। এখন অনলাইনে গরুর চেহারা দেখা যায়, ওজন জানা যায়। এমনকি একটি পশুর গোশত কতখানি হবে সেটাও জানা সম্ভব। তাই অনলাইনে কোরবানির গরু বেশি বিক্রি হতে পারে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব মতে, গত দু’তিন বছরের ঈদুল আযহায় দেখা গেছে প্রতি ঈদে গড়ে ১ কোটি ৬ লাখের মতো পশু কোরবানি দেয়া হয়। গতবছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে কোরবানিতে জবাই করা হয়েছিল এক কোটি ৬ লাখ। উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ১২ লাখ। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশিয় খামারিদের গরু-মহিষ দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে এবার পশু কোরবানিও কম হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, কোরবানির জন্য দেশের পশুই যথেষ্ট। বাইরের পশুর কোনো প্রয়োজন নেই। দেশে যে পশু আছে তাই এবারও প্লাস হবে। তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে কোরবানির জন্য বাইরে থেকে কোনো পশু আমদানি করা হয় না। দেশের কৃষক ও খামারিরা যে পশু লালন-পালন করেন সেটাই যথেষ্ট।

এবার দেশের খামারগুলোতে ৬০ লাখ গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে বৈশিক মহামারি করোনার কারণে কোরবানির গরুর বাজার নিয়েও খামারিদের মনে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের অর্ধেক গরু বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা। গেলো কোরবানির ঈদে দেশিয় খামারিদের ৪৫ লাখ গরু বিক্রি হয়েছে। এবার তা হবে কিনা এ বিষয়ে খামারিরা সংশয়ে রয়েছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো লিমিটেডে প্রতিবছরই কোরবানির জন্য গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ পশু প্রস্তুত করা হয়। তবে এবার সেখানে অনেক কম পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যান্য বছর আমেরিকা, ভারত ও মধ্যেপ্রাচ্য থেকে এমন সময় গরু, উট, দুম্বা ও ছাগল উড়োজাহাজে করে আমদানি করা হত। এবার তা বাতিল করা হয়েছে। সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন বলেন, লকডাউনে মনে শান্তি নেই, অস্বস্তি কাজ করছে। দেশের অর্থনীতি ভালো না। মানুষ চাল-ডাল কিনবে, না গরু কিনবে। দেশের চলমান সঙ্কটের রেশ অনেক দিন থাকবে। এবার ৬০ লাখ গরু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছিল। দেশের এমন অবস্থা চলতে থাকলে গত বছরের থেকে কোরবানির গরু কম বিক্রি হবে। আমরা ধরে নিয়েছি ৩০ লাখ গরু অবিক্রিত থাকবে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করে খুবই ভাল কাজ করেছে। এটা সারা বছর কার্যকর থাকলে খামারিরা পশু পালনে উৎসাহিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Zamal U Ahmed ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
আমাদের দেশে যে পরিমান কোরবানীর গরু আছে তাতে চাহিদা মিটিয়ে অনেক গরু অবিক্রিত থাকবে। বাহিরের কোন গরুর প্রয়োজন হবেনা।
Total Reply(0)
Mohammed Fasiul Alam ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
সঠিক সিদ্ধান্ত
Total Reply(0)
Ahmed Moha ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
Abar uchith hobe korbanir aurtho goriber maze diya deya
Total Reply(0)
Mohammed Ismail ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
হ্যাঁ, তবে আমাদের ব্যবসায়ীদের যে চরিত্র এক লক্ষ টাকার গরু তখন হয়ে যাবে দুই লক্ষ টাকা।
Total Reply(0)
Nazmul Huda ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
ঠিক সময় আসলে চিত্র উল্টে যাবে কারণ ভারতের একটা বাজার খোলা সেটা বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Mddewar Hossan ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
কদিন পর দেখা যাবে লক্ষ লক্ষ গরু আসতেছে।
Total Reply(0)
Motahar Alam Kajal ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
কিন্তু,বিভিন্ন পশুদের থেকেও নাকি ভাইরাস ছড়িয়েছে,এটা কিভাবে শনাক্ত করবে ?
Total Reply(0)
Gias Totol ২৮ জুন, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
সত্যিই যিনি এইরকম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে উনার মাঝে সত্যি কারের দেশ প্রেম আছে। শুধু বাস্তবায়ন চাই
Total Reply(0)
সাইফ ২৮ জুন, ২০২০, ৯:৫৫ এএম says : 0
অবশ্যই অনেক বড় এবং মহৎ শিদান্ত এবং এও দোয়া করি আল্লাহ্‌ যেন আমাদের নিতি নির্ধারকদের এই শিদ্ধান্তে অটল থাকার তৌফিক দেন,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন