শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মহামারীকালে কীভাবে কোরবানী করবেন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

মুসলিম মিল্লাত প্রতি বছর ঈদুল আযহার সময় যে পশু যবেহ করে থাকে তার পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাস গড়ে উঠেছে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং তাঁর প্রাণাধিক পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কেন্দ্র করে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর নির্দেশক্রমে প্রিয়তম পুত্রকে যবেহ করতে চাইলে পুত্র বলেন : ‘হে পিতা আপনি আল্লাহর নির্দেশ পালনে তৎপর হোন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন’। (সূরা সাফফাত : আয়াত ১০২)।

এরপর হযরত ইব্রাহীম (আ.) পুত্রকে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন। আল-কোরআনে বিবৃত হয়েছে : ‘যখন উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত হল এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শোয়ায়ে দিল, তখন আমি তাকে আহ্বান করলাম, হে ইব্রাহীম! তুমি নির্দেশ পালনে সততার প্রমাণ দিয়েছে, একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাণব্যক্তিদেরকে এভাবেই আল্লাহ প্রতিফল দিয়ে থাকেন। নিঃসন্দেহে এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা বিশেষ। আর পুত্র যবেহের বিনিময়ে তাকে একটি যবেহ করা মোটাতাজা জন্তু উপহার দিলাম।’ (সূরা সাফফাত : আয়াত ১০৩-১০৭)।

বস্তুতঃ হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর এই আদর্শের বাস্তব প্রমাণ পেশ করার উদ্দেশ্যেই প্রত্যেক বছর ঈদুল আযহার সময়ে পশু কোরবানী করার রেওয়াজ চালু হয়েছে। বিশেষতঃ সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মিল্লাতে ইব্রাহীম পরিচিতিতেই দীন ইসলাম প্রচার করেছেন। কাজেই সকল উম্মতে মোহাম্মাদীর অন্তর্ভুক্ত লোকদের পক্ষে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর এই দৃষ্টান্তহীন আত্মত্যাগের অনুসরণে কোরবানী করা ওয়াজিব। আল কুরআনে এই নির্দেশই প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে! সুতরাং তোমার প্রতিপালকের সন্তুষ্টির উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। (সূরা কাওছার : আয়াত ২)।

কোরবানীকে সামনে রেখে মুসলিম মিল্লাতের ঘরে ঘরে এর প্রস্তুতি শুরু হয় বেশ আগে থেকেই। কিন্তু এ বছর বিশ্ব জোড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যাদের উপর কোরবানী করা ওয়াজিব বা যারা নিয়মিত কোরবানী করে আসছেন তাদের মাঝে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা জেঁকে বসেছে। কেননা, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার গত মার্চ মাস থেকে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। দেশের সচেতন মানুষ অনেকটা সেলফ কোয়ারেন্টিনে থেকে সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এবং অন্যকে সংক্রমিত না করার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু কোরবানীর পশুক্রয়, কয়েক দিন লালন পালন এবং পরিশেষে যবেহ ও গোশত বিতরণের সময় সংক্রমণ আশঙ্কা নিয়ে দুশ্চিন্তা সকলের মাঝেই কমবেশি আছে। সংক্রমণের ঝুঁকিতেই এমনভাবে হাটে গিয়ে পশু ক্রয় যেমন সম্ভব নয়, তেমনি হাট থেকে বাড়ীতে নিয়ে আসা এবং সুষ্ঠুভাবে কোরবানী সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই অবস্থার অবতারণা ঘটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচলন ব্যাপক হওয়ায় অনেকেই হয়ত এ পদ্ধতিতেই কোরবানীর পশু ক্রয় করবেন। কিন্তু পশু ডেলিভারী গ্রহণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাবে। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে কসাইখানা না থাকার কারণে তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যেমনটি সউদী আরবে হয়ে থাকে, তা এদেশে সম্ভব নয় বিধায় সঙ্কট থেকে মুক্তিলাভ খুবই দুরূহ ব্যাপার।

এই পৃথিবীতে ইতঃপূর্বে বহু মহামারী এসেছে। তখনকার লোকেরা গৃহপালিত পশু দ্বারাই কোরবানী আদায় করত। কিন্তু বর্তমানে বাজার থেকে ক্রয় করা পশুর দ্বারাই কোরবানী করার রেওয়াজ দাঁড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কোরবানী দাতাদের উচিৎ সকল অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানী করা এবং সংক্রমণের হাত হতে নিজেকে রক্ষা করা ও অন্যকে সংক্রমণ মুক্ত রাখা। অন্যথায় মহাসঙ্কটের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

কোনো কারণে কেউ কোরবানী করতে না পারলে বিকল্প ব্যবস্থাও আছে। যে ব্যক্তির উপর কোরবানী ওয়াজিব সে যদি কোন কারণে কোরবানীর জন্য নির্দিষ্ট ৩ দিনের মধ্যে কোরবানী করতে না পারে, তাহলে নির্দিষ্ট ৩ দিন (১০, ১১ ও ১২ যিলহ্জ) অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাকে একটি বকরী অথবা তার মূল্য সদকাহ করে দিতে হবে। এভাবে সে কোরবানীর সওয়াব লাভে ভাগ্যবান হবে। ইসলামী শরীয়তে এর অনুমোদন আছে। সুতরাং দুশ্চিন্তাও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানী করতে পারবেন, তারা করবেন। যাদের পক্ষে তা সম্ভব হবে না, তারা বিকল্প পথ অনুসরণ করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৯ জুন, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের করোনাভাইরাস মহামারি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
Total Reply(0)
মেহেদী ২৯ জুন, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
সময় উপযোগী একটি লেখা উপহার দেয়ায় লেখকের উত্তম প্রতিদান কামনা করছি।
Total Reply(0)
নাজারেথ স্বনন ২৯ জুন, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
ধন্যবাদ ইনকিলাবকে। িইনশায়াল্লাহ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এবার কুরবানী দেবো।
Total Reply(0)
নাসিম ২৯ জুন, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের দ্রুত এই মহামারি থেকে হেফাজত করো, করোনা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে কুরবানী করার সুযোগ দাও।
Total Reply(0)
রাজিব ২৯ জুন, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
মানুষের এবার ক্রয় ক্ষমতাকমেছে। অনেকের চাকরি নেই, তাই মনে হচ্ছে এবার কুরবানীর পরিমাণ কম হবে।
Total Reply(0)
রাজিব ২৯ জুন, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
মানুষের এবার ক্রয় ক্ষমতাকমেছে। অনেকের চাকরি নেই, তাই মনে হচ্ছে এবার কুরবানীর পরিমাণ কম হবে।
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২৯ জুন, ২০২০, ১০:০৪ পিএম says : 0
কোরবানী সম্পর্কে এই প্রতিবেদনটি লিখার জন্যে এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এখানে তিনি বলেছেন, “কোন কারনে কোরবানী দিতে নাপারলে পরিবর্তে তাকে একটি বকরী অথবা তার মূল্য সদকাহ করে দিতে হবে। এভাবে সে কোরবানীর সওয়াব লাভে ভাগ্যবান হবে। ইসলামী শরীয়তে এর অনুমোদন আছে।“ বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। এখনে ফজলুর রহমান সাহেব বলেছেন “একটি বকরী অথবা তার মূল্য সদকাহ করে দিতে হবে”। এখন আমি একটা বিষয়ে পরিষ্কার হতে চাই সেটা হচ্ছে, আমি ৭ নামে (আমার পরিবারের সকল সদস্যদের নামে) একটি গরু কোরবানী দিয়ে আসছি। এখন আমাকেও কি একটি বকরী অথবা তার মূল্য সদকাহ করে দিতে হবে নাকি একটি গরুর মূল্য সদকাহ করে দিতে হবে। এটা এখন আমার জন্যে একটা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো গরু কিনে কোরবানী দিতে। তারপরও সন্দেহ হচ্ছে কারন আমি দেশে থাকিনা প্রতিবছর আমার পক্ষথেকে ঢাকায় গরু কিনে কোরবানী দেয়া হয়। এবার যদি ওনারা কোন কারনে কোরবানী না করতে পারেন তাহলে আমি কি একটা বকরী বা ছাগলের মূল্য সদকাহ করে দিলেই হবে কিনা এটা আমার জানা দরকার। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে আমাদের উপর আল্লাহ্‌র প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা প্রদান করুন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন