হাজার হাজার যুবকের মতো আমিও এই মহামারী চলাকালে আমার বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে চিন্তিত। আমি বিশেষত আমার বাবার বিষয়ে উদ্বিগ্ন, যিনি নয়াদিল্লির তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন।
আমার বাবা সৈয়দ আলতাফ শাহ গিলানি, বা আব্বু’র (যেভাবে আমি তাকে ডাকি) বয়স ৬৩ বছর এবং তার ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সুতরাং, তিনি ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ শ্রেণিতে আছেন যার জীবন সম্ভাব্য হুমকির সম্মুখীন, আল্লাহ না করুন তিনি করোনভাইরাসের সংস্পর্শে আসেন।
আব্বু ২০১৭ সালের জুলাইয়ে গ্রেফতার হন। কোনও অপরাধমূলক কার্যকলাপের কারণে তিনি কারাগারে নন। তার কারাগারের কারণ হল তার রাজনৈতিক তৎপরতা এবং ভারতীয় শাসিত কাশ্মীরের স্বাধীকারের পক্ষে তার অবস্থান। আমার অসুস্থ আব্বুর রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা দেখে ভয় পেয়ে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র তাকে কারাবন্দী করে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ‘দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর’ অভিযোগ আনে।
আব্বু এই প্রথমবার কারারুদ্ধ হননি। তিনি কাশ্মীরের প্রতিরোধ আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য এবং আমার দাদা সৈয়দ আলী শাহ গিলানির নেতৃত্বে প্রতিরোধপন্থী রাজনৈতিক দল হুরিয়াত কনফারেন্সের সদস্য হওয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর বিভিন্ন জেলে কাটিয়েছেন।
আমি যখন আব্বুর সাথে দেখা করতে যাই, আমাকে অপেক্ষা করার জায়গায় তিন ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে হত। অপেক্ষা সময় ইঁদুর, পোকামাকড় এবং বিপথগামী কুকুর ঘরে লুকিয়ে থাকত। কারাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি দেখে আমি অনেকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ভিতরে তাপ এবং আর্দ্রতা সত্তে¡ও দর্শনার্থীরা এমনকি এক গ্লাস পরিষ্কার পানি পান করতে পেতেন না।
আমি যখনই আব্বুকে জেলের অবস্থা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতাম, তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যেতেন, তবে তার শারীরিক অবস্থাই বলে দিত। প্রত্যেকবার দেখা করতে গিয়ে তাকে ক্রমেই দুর্বল দেখতে পেতাম এবং তাকে অনেক বেশি বয়সী দেখা যেত, তার চুল এবং দাড়ি সাদা হয়ে গেছে।
আব্বু সর্বদা আমার মনোবল চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করতেন, আমাকে তার মুক্তির দিনটির জন্য আশা এবং প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। আমি এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ তাকে দেখেছি। এক মাস পর করোনাভাইরাসের কারণে ভারত দেশব্যাপী লকডাউনে গেছে। এসময় কারাগার পরিদর্শন নিষিদ্ধ ছিল। আমার বাবার সম্পর্কে আমার উদ্বেগ আরও বেড়েছে এ কারণে যে, ভারতে বন্দিরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পায় না।
মার্চ মাসে বন্দিরা এ রোগের পরীক্ষায় পজেটিভ হতে শুরু করার পরে, সুপ্রিম কোর্ট খুব শিগগরিই জনগণের ভিড় হ্রাস করার জন্য মুক্তির আদেশ দেয়। এপ্রিলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে কারাগার থেকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল; জম্মু ও কাশ্মীরের ৬৫ বন্দিকেও মুক্তি দেয়া হয়। তবে এখনও পর্যন্ত আমার বাবা এবং তার সহযোগীদের মুক্তি দেয়া হয়নি, যদিও তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযোগই ভারতের কোনও আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
আমার মা, যিনি আব্বুকে গ্রেফতারের পর থেকে খুব অসুস্থ। গত মাসে আমাদের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়, তবে আমার বাবাকে হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর জন্য আমাদের আবেদন গৃহীত হয়েছিল। আব্বুকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ১ জুন আদালতের আদেশ জারি করা সত্তে¡ও কারা কর্তৃপক্ষ এখনও তা কার্যকর করেনি।
করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ আরো বাড়ায় ন্যায়বিচার এবং আমাদের প্রিয়জনকে মুক্ত, জীবিত এবং ভালভাবে দেখতে পাবার আশা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
(লেখক : রুয়া শাহ তুরস্কে সিনেমা ও টিভি বিষয়ে অধ্যয়নরত ভারতের সাবেক সাংবাদিক এবং হুররিয়াত কনফারেন্স নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানির নাতনী)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন