কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবার্তত রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সে.মি ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭১ সে.মি এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি হু হু করে বাড়তে থাকায় এ দুটি নদীর অববাহিকার ৫০টি চরগ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নের সাড়ে তিনশ চর ও নদী সংলগ্ন ৩৫৭ গ্রামের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি হারিয়েছে ৫শ পরিবার। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। প্রবল ¯্রােতে টিকতে না পেরে অনেকেই রাস্তা, বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তবে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে তাদের ভোগান্তি বাড়ছে।
তিস্তার ভাঙনে উলিপুরের নাগরাকুড়া টি বাঁধের ব্লক পিচিংসহ ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সারডোব, নুনখাওয়া মোগলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ১৫টি স্পটে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে রৌমারী উপজেলা শহর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যা কবলিত। প্রায় ১৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। এসব মানুষের হাতে কোন কাজ না থাকায় জরুরীভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া প্রয়োজন বলে এই ইউপি চেয়ারম্যান। এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন চাল বা শুকনো খাবার বরাদ্দ পাননি বলেও জানান তিনি।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের বদলীপাড়া এলাকার ছকিনা বেওয়া, সুরুজ্জামান, শাহাজাহান জানান, গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। হাতে কাজ নাই, ঘরে খাবারও নাই। এ অবস্থা পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন পাড় করছি।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ময়নুদ্দিন ভোলা জানান, তার ওয়ার্ডের পানিবন্দি মানুষেরা অবর্ণনিয় কষ্টে থাকলেও এখন পর্যন্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় তাদেরকে কোন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানান চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দই খাওয়ার চরের কালু মিয়া, সিরাজুল হক, রমজান আলী জানান, ঘরের ভিতর পানি উঠেছে। বউ বাচ্চা নিয়ে কষ্টে আছি। নৌকা ছাড়া চলার উপায় নাই। পানি আরো বাড়লে বাড়িতে থাকার উপায় থাকবে না। আশেপাশে কোন শুকনো জায়গাও নেই।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিত এসব মানুষের জন্য সরকারীভাবে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলয় ৫ হাজার ৬শ ৫৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ, শাক সবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হবে।
এদিকে রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, আগামী মাসের ৪/৫ তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ধরলা ও তিস্তার পানিও বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এসময় নদ-নদীর ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এসে এসব তথ্য জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন