বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাস জীবন

জর্ডান থেকে ফিরছে মহিলা গার্মেন্টস কর্মী

এক লাখ কর্মী ছুটিতে এসে আটকা পড়েছে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২০, ১:০২ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে প্রবাসী বাংলাদেশি মহিলা গার্মেন্টস কর্মীরা ভালোই ছিল। প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর কারণে দেশটিতে ঘরবন্দি প্রবাসী কর্মীরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। দেশটিতে অনেকেই খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে। দেশটির গার্মেন্টস কোম্পানীগুলো কর্মীদের মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় দফায় চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করছে না। ফলে দেশটিতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটি থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা দেশে ফিরছে শুরু করছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (কিউ ইউ-১২৮৩) বিশেষ ফ্লাইট যোগে জর্ডান থেকে ৩১৭ জন বাংলাদেশি গার্মেন্টস কর্মী হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ২৭১ জন মহিলা গার্মেন্টস কর্মী, ৩৫ জন পুরুষ কর্মী এবং বাকি ১১ জন তাবলীগ জামাতের লোক। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় এসব প্রবাসী দেশে ফিরছে। বিমানবন্দরের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করছে।
জর্ডান থেকে প্রত্যাগত মহিলা কর্মীরা জানান, করোনার মহামারীর কারণে দেশটিতে কাজের পরিসর হ্রাস পাচ্ছে। কোম্পানীগুলো অভিবাসী কর্মীদের কাজের চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানীতে কাজ না থাকায় বহু বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করছে। দেশ ফিরতে অপেক্ষমান কর্মীদের তালিকা তৈরি করছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দেশটিতে ভিসার মেয়াদ না থাকায় অনেক অবৈধ প্রবাসী কর্মীও দেশে ফিরতে পারছে না।
আম্মান থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, দেশটিতে বৈধ অবৈধ মিলে প্রায় সোয়া লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের প্রায় ৯০ ভাগই মহিলা কর্মী। দেশটির অন্তত ত্রিশটি শিল্প এলাকায় বাংলাদেশিরা তাদের কর্মগুণে রীতিমত রাজত্ব করছেন যুগ যুগ ধরে। তারা মূলত কাজ করেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে।
বিএমইটির সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩১ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। জর্ডানে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে গত মে মাস পর্যন্ত দেশটি থেকে প্রবাসী কর্মীরা ১১৫ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে।
এদিকে, গভীর রাতে কাতারের দোহা থেকে (কিউ আর-৬৩৮) বিশেষ ফ্লাইট যোগে ২৪৮ জন যাত্রী দেশে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে কুয়েত থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছে ১৩১ জন। এদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রও রয়েছে। এছাড়া আমেরিকা থেকে ৫০ জন এবং ফ্রান্স থেকে ফিরেছে ৮ জন। ২৯ জুন রাতেও দুবাই থেকে ফ্লাই দুবাই ও অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট যোগে ২৫২ জন কর্মী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছে।
মরণঘাতী করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকরি হারিয়ে প্রবাসী কর্মীদের দেশে ফেরার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বায়রার ইসি’র অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আলী। তিনি আজ বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, করোনা পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে সরকারকে এখনোই বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবাস থেকে কর্মী যাতে ফেরত না আসে সেজন্য দেশগুলোর সাথে নিয়মিত কূটনৈতিক তৎপরাত চালাতে হবে। বায়রা নেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। এসব কর্মীদের বিশেষ ফিরতি ফ্লাইট যোগে দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আটকে পড়া এসব কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সেবা করছে বলে প্রচার করছে। কিন্ত ছুটিতে আসা এসব ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা কিংবা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্তকরণের চিন্তাভাবনাও করা হয়নি। এছাড়া শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি ১০০/২০০ করে ভিসা কিনে কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ীক পুঁজি লস দিচ্ছে। এসব রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দেউলিয়ার পথে। এরা অফিস ভাড়া দিতে পারছে না কর্মচারি বেতন দিতে পারছে না। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা নেতা বলেন, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দুর্দিনে এগিয়ে না এলে আগামীতে রেমিট্যান্স খাতের ওপর ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন