পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চীনের সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পায়রা বন্দরের সম্মেলনকক্ষে দু’পক্ষের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। সে অনুযায়ী কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ চ্যানেলটির চাড়িপাড়ায় প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মিত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত রাবনাবাদ চ্যানেলটি ১৪ কি.মি. দীর্ঘ।
পায়রা বন্দর কর্র্তৃপক্ষের এক তথ্য বিবরণীতে জানা গেছে, প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা, প্রাক্কলন এবং প্রকল্প চলাকালীন কাজ দেখাশোনার জন্য কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুনহুয়া ডাইয়ং হেরিমকে নিয়োগ করা হয়েছে। গত ১৮ জুন কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের কাজটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি (সিসিজিপি) কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ন করবে চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪ কোটি ৪০ লক্ষ ৮১ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। ৩০ মাসে কাজটি সম্পন্ন হবে। কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মিত হলে বছরে প্রায় ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। কন্টেইনার ইয়ার্ডের কাজের আওতায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ওয়ার্কশপ, ফায়ার স্টেশন, কন্টেইনার ফ্রেইড স্টেশন, গেট হাউজ, ফুয়েল স্টেশন, ভূ-গর্ভস্থ পানির আধার, পাম্প হাউস নির্মিত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল, সদস্য (প্রকৗশল ও উন্নয়ন) কমডোর এম জাকিরুল ইসলাম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কমান্ডার (অব) এম রাফিউল হাসাইন, সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেডের এ দেশীয় প্রতিনিধি রিচার্ড চেন, প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হন সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেডের চেয়ারম্যান চেন জিচুন, ভাইস চেয়ারম্যান ঝাউ বাউহুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়ান গুয়াংহুয়া এবং ইয়াং জুইবো।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৗশল ও উন্নয়ন) কমডোর এম জাকিরুল ইসলাম সূত্রে জানা গছে, ‘পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ এবং এ সংশ্লিষ্ট আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা গেলে পায়রা বন্দরের পুরো কার্যক্রম চালু হয়ে যাবে। এ ছাড়া রাবনাবাদ চ্যানেলের পাড়ে লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় প্রথম টার্মিনাল এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছয় লেনের সড়ক নির্মাণের উদ্যাগ নেয়া হয়েছে। এ সড়কের আন্ধারমানিক নদের ইটবাড়িয়া-চিংগুড়িয়া পয়েন্টে আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, চট্রগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট লেগে থাকে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আনুষাঙ্গিক সুবিধাদিসহ পায়রা বন্দরকে পুরোপুরি চালু করা গেলে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা পায়রা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এর ফলে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের যেমন উন্নতি হবে, তেমনি দেশও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
মন্তব্য করুন