করোনাকালে যশোর জেলার সাধারণ চিকিৎসা সেবার মান একেবারে নীচে নেমে গেছে। করোনার চিকিৎসায়ও হযবরল অবস্থা। আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল যশোর ২৫০ বেড হাসপাতাল এবং জেলার ৭টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে কার্যত খুঁড়িয়ে। করোনার মধ্যে ডাক্তার ও নার্সরা ঠিকমতো ডিউটি করছেন না। নেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। অন্যদিকে, বিধি ভেঙে স্বাস্থ্য সেবার নামে হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বর্তমানে রমরমা ব্যবসা নেই। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবসায় চলছে দারুণ মন্দা।
সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, করোনায় এ পর্যন্ত জেলায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী মোট ৮০জন আক্রান্ত হয়েছেন। ২৫০বেড হাসপাতালের সুপার ডাঃ দীলিপ কুমারও স্ত্রীসহ আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের মতো স্বাস্থ্য কর্মীরা একের পর এক আক্রান্ত হওয়ায় কর্মরতদের মাঝেও রীতিমতো আতংক সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, অনেক স্বাস্থ্য কর্মী বিভিন্ন অজুহাতে দায়িত্ব পালনে অনেকটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কিংবা অর্ধেক ডিউটি ও হাজিরা দিয়ে কৌশলে সাবধানে থাকার চেষ্টা করছেন। যশোর ২৫০ বেড হাসপাতাল ও কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীদের ভিড় নেই। আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসাপ্রার্থীদের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। আবার অনেক চিকিৎসাপ্রার্থী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সামগ্রী একেবারেই অপ্রতুল প্রয়োজনের তুলনায়।
যশোর ২৫০ বেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাঘারপাড়ার আকবর আলী জানালেন, বড় হাসপাতালে আসলাম, শুনি ডাক্তার নেই। স্লিপ কেটে বসে থেকে ফিরে যাচ্ছি।
যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনার প্রথমদিকে যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, এখন সেই তুলনায় অনেকটাই ভালো। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এখন ধীরে ধীরে ডাক্তারা চেম্বারে বসছেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তদারকি করা হচ্ছে সার্বক্ষণিক। কোথায় কী সমস্যা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, যশোর শহরে অবস্থিত ২৫০ বেড হাসপাতাল ঘিরে স্বাস্থ্যসেবার নামে নিয়ম বহির্ভুতভাবে গড়ে ওঠা অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা এখন বেশ মন্দা। যার অধিকাংশের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে প্রতারণা, দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালের রোগী ধরার ফাঁদ পাতা ও স্বাস্থ্য সেবার নামে নানামুখী ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডিউটি করেন। কোন কোন ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসায়িক পার্টনারও। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব জানেন দেখেন শোনেন কিন্তু কোনরূপ ব্যবস্থা নেন না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন