উত্তর : ইসলামের দৃষ্টিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। যে দৈহিকভাবে পবিত্র থাকে না তার মনও তাতে প্রভাবিত হয়। আধুনিক বিজ্ঞানও এ কথা স্বীকার করেছে, যে মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে মানসিক দিক থেকেও সে অধিকতর সুস্থ থাকে। এমনকি শারীরিক সুস্থতার জন্যও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। ইসলামে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সামগ্রিক। পরিচ্ছন্নতা বলতে শরীর ও মনের পরিচ্ছন্নতাকে বোঝানো হয়ে থাকে। একজন মুসলিমের পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখতে হয়।
মূত্র ত্যাগের পর ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহার করে ভালোমত পবিত্র হওয়া পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম দিক। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নবীজি (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মন্তব্য করলেন : ‘এই কবরবাসীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, অথচ তাদের কোন বড় কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরি করত, অন্যজন মূত্র ত্যাগের পর পুরোপুরি পবিত্র হত না। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন মহান আল্লাহ। মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার লোকজনের প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা তওবা, আয়াত : ১০৮) কোবাবাসীদের এত প্রশংসা করার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হল তারা পেশাব-পায়খার পর ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার সাথে সাথে পানিও ব্যবহার করত।
মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২২২)
অপরিচ্ছন্নতার দুয়ার বন্ধ করে দেয় অজু। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তুলনা নেই এ অজুর। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য অজু করতে হয়। এতে করে তার শরীরে কি আর কোন ময়লা থাকতে পারে? অজুর মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘুমালে তার ফজিলত দেখুন হাদিসে- নবীজি (সা.) বলেন, যে কোন মুসলমান যখন পবিত্রতার সঙ্গে আল্লাহর নামে ঘুমায়, এরপর সে রাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখেরাতের কোন কল্যাণ প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪৪)
সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা দ্বীনদার মানুষদের থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে মেসওয়াক। এ মেসওয়াক হতে পারে পরিচ্ছন্নতার অন্যতম মাধ্যম। কোথাও যেতে হলে কিংবা কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে হলে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাহলে নিজেও মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবে। অন্যরাও নিষ্কৃতি পাবে তার মুখের দুর্গন্ধ থেকে। এজন্য কোথাও যাওয়ার আগে কিংবা কারও সাথে দেখা করার আগে মেসওয়াকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। নবীজি (সা.) বলেছেন, মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রতা আর প্রভুর সন্তুষ্টির মাধ্যম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫)
জুমার দিনের গোসলও খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার দিন জুমার নামাজে অনেক লোক একত্রিত হয়। অনেক লোকের আবহে সৃষ্টি হতে পারে দুর্গন্ধের। তাই নবীজি (সা.) বলেন, জুমার দিন গোসল করা প্রতিটি বালেগ পুরুষের জন্যে আবশ্যক। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৫৮)
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন