বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

সাফা-মারওয়া সায়ী করার পদ্ধতি

হাফেজ মাওলানা বায়েজীদ হোসাইন সালেহ | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি মাধ্যম হল হজ¦। মোমিন জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত হজ¦। এর মধ্যে রয়েছে, তিনটি ফরজ ও ছয়টি ওয়াজীব। পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফের অদূরে বর্তমানে মসজিদুল হারামের ভিতরে অবস্থিত সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা বা দৌড়ানো হজ¦ ও ওমরার অন্যতম ওয়াজীব। হযরত বিবি হাজেরা (আ.) শিশু পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) রেখে পানির খোঁজে এই পাহাড়দ্বয়ের মাঝে ৭ বার দৌড়েছিলেন। বর্তমানে পাহাড় দু’টোকে কাটছাট করে ছোট আকৃতির টিলার মত করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের গায়ে টাইলস বসানো হয়েছে। যে তাওয়াফের পর সায়ী করতে হয়, যেমন: ওমরাহর তাওয়াফ,হজে¦ও ফরজ তাওয়াফ সমাপ্ত কওে,দুই রাকাত ওয়াজীবুত তাওয়াফ নামাজ পড়ে ও যমযমের পানি পান কওে মাতাফ থেকে বাবুস সাফা দিয়ে মসজিদে হারামের বাইরের দিকে অগ্রসর হলেই ছোট্র টিলার মত ১০/১২ ফুট উঁচু জায়গা পাবেন এটাই সাফা পাহাড়। এখান থেকেই সায়ী আরম্ভ করতে হয়। ‘সায়ী’ আরবী শব্দ। এর অর্থ, দ্রুত চলা ও চেষ্টা করা। ইসলামী শরীয়তে সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে বিশেষ রীতিতে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে সায়ী বলা হয়।।সায়ী ওমরার দুইটি ওয়াজীবের মধ্যে একটি। উল্লেখ্য সাফা ও মারওয়া পবিত্র কা’বা ঘরের পূর্ব-দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত দুটি বিখ্যাত পাহাড়।

সায়ীর শর্তসমূহ: (১) পায়ে হেঁটে সায়ী করা। ওজর ছাড়া কোন কিছুতে চড়ে সায়ী করলে ক্ষতিপূরন স্বরুপ দম দিতে হবে। (২) হজ¦ ও ওমরার এহরামে সায়ী করা। ওমরার সায়ী বিনা এহরামে করলে দম দিতে হবে। অনুরুপ তাওয়াফের পর মাথা মুড়িয়ে সায়ী করলে সায়ী হবে,তবে দম দিতে হবে। (৩) সায়ী সাফা পাহাড় হতে শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে শেষ করা। উল্লেখ্য সায়ীর প্রথম চার পাক ফরজ,বাকী তিন পাক ওয়াজীব। কেউ তিন পাক দিলে সায়ী হবে না। কেউ যদি চার পাক দেয় তাহলে সায়ী হবে,কিন্তু বাকী তিন পাকের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ দেয়া ওয়াজীব। একটি বিষয় হাজীদের মনে রাখতে হবে,সায়ীতে বদলী চলে না। হজ¦-ওমরার কার্যকলাপে সবকিছুই নিজেকে করতে হয়; শুধুমাত্র অপারগ হলে অন্যের দ্বারা কংকর নিক্ষেপ করা বৈধ।

সায়ীর ওয়াজীব: (১) সাত পাক পরিপূর্ণ করা। সাফা হতে মারওয়ায় পৌঁছলে হবে একপাক। আবার মারওয়া হতে সাফায় আসলে হবে দ্বিতীয় পাাক। এ নিয়মে মারওয়ায় গিয়ে সাত পাক শেষ হবে। (২) উভয় পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান দ্রুত অতিক্রম করা।

সায়ীর সুন্নাত: (১) তাওয়াফ শেষ হওয়ার পর পরই সায়ী করা। (২) সাফা-মারওয়ায় ওঠে কেবলামুখি হওয়া। (৩) সবুজ চিহৃদ্বয়ের স্থানটুকুু সামান্য দৌড়িয়ে অতিক্রম করা। মহিলারা স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে পার হবেন। মাহরাম থাকলে তিনি মহিলার সাথে চলবেন;দৌড়াবেন না। (৪) সায়ী শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া। সায়ীর নিয়ত করা,দোয়া পড়া ও উভয় পাহাড়ের উপর কিছুক্ষণ বসা মোস্তাহাব। অনর্থক কথা বলা ও সবুজ চিহৃদ্বয়ের মাঝে না দৌড়ানো মাকরুহ।

যেভাবে সায়ী শুরু করবেন: মসজিদে হারামের পূর্ব-দক্ষিণ কোণের শেষ প্রান্তে সাফা পাহাড় অবস্থিত। বাবুস সাফায় পৌঁছে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৫৮ নাম্বার আায়াত পড়–ন। অর্থ: নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হজ¦ করবে এ দুটির মাঝে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। কেউ স্বেচ্ছায় নেক কাজ করলে নিশ্চয় আল্লাহ পুরস্কারদাতা,সর্বজ্ঞ।

অত:পর সাফা পাহাড়ে ওঠে বাইতুল্লাহ শরীফ নজরে না আসলেও উহার দিকে মুখ করে এবং কাঁধ পর্যন্ত দুই হাত এমনিভাবে উত্তোলন করবেন,যেন হাতের তালু আাকাশের দিকে থাকে। অত:পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়বেন, এরপর বলবেন ‘লা ইলাহা ইলল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। এরপর সায়ীর নিয়ত সায়ী শুরু করবেন।

সাফা পাহাড় দোয়া কবুলের স্থান। তাই এখানে দাঁড়িয়ে দোয়া-দুরুদ,তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করে নিজের ও মুসলিম উম্মাহর জন্য আবেগে আপ্লুত হয়ে দোয়া করবেন। এরপর পাহাড় থেকে নেমে জিকির-আযকার করতে,করতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে রওয়ানা হবেন। মারওয়া পহাড় উত্তর দিকে পাঁচশত হাত দূরে অবিস্থিত। মারওয়া পাহাড়ের দিকে যেতে যেতে বামে মসজিদে হারামের দেয়ালের সাথে সবুজ রংয়ের একটি খুঁটি দেখতে পাবেন। খুঁটি থেকে ৪/৬হাত দক্ষিণে থাকতে একটু দ্রুতবেগে দৌড়ানো শুরু করবেন। এটা সুন্নাত। সেখান থেকে আনুমানিক একশত হাত উত্তরে আরেকটি খুঁটি আছে। সেই পর্যন্ত দৌঁড়াতে থাকবেন। এরপর স্বাভাবিক গতিতে হাটবেন। সাফা হতে মারওয়া পর্যন্ত পথকে ‘মাছয়া’ বলে। এই পথে দোয়া কবুল হয়। তাই অত্যন্ত মোহাব্বতের সাথে তাসবীহ পাঠ করবেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। এখানে বিশেষ কোন দোয়া নেই। তবে এই দোয়া পড়তে পারেন। যার অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর। তুমি মহাপরাক্রমশালী,মহাসম্মানী। যখন মারওয়া পাহাড়ে যাবেন তখন সাফার মতই তাকবীর বলবেন এবং কাকুতি-মিনতি সহকারে কিবলামুখি হয়ে দোয়া করবেন। কারণ এখানে দোয়া কবুল হয়ে থাকে। এভাবে এখানে এক পাক বা দৌড় শেষ হল। এরুপ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাতবার দৌড়ের পর সপ্তম পাক শেষ হবে মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে। সেখানেও দোয়া করে সায়ী শেষ করবেন।

সায়ীর সময় এদিক-সিদিক তাকাবেন না। অজু অবস্থায় সতর ঢেকে,আল্লাহর দিকে পুরোপুরি মনোনিবেশ করে দোয়া করতে করতে দৌড়াবেন। সায়ী শেষ হলে মারওয়া পাহাড় হেেত নেমে মাথা মুন্ডাবেন। অত:পর মসজিদে হারামে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়বেন। এটা সুন্নাত। সাফা-মারওয়ায় সাতবার সায়ী করতে হয়। প্রতিটি সায়ীতে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া আছে। সম্মানিত হজ্বযাত্রীগণ! আপনারা সে সব দোয়া হজে্বর বই দেখে অথবা নিজ নিজ এলাকার মসজিদেও ইমাম-খতিব অথবা মুয়াল্লিমদের কাছ থেকে শিখে নিবেন। সায়ীর পর ওমরা অথবা তামাত্তু হজ্ব পালনকারী মাথা মুন্ডাবেন। তবে কিরান অথবা ইফরাদ হজ্ব পালনকারী ইহরাম অবস্থায় থাকবেন। ১০জিলহজ্ব ‘জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করে ইফরাদ হজ্ব পালনকারী মাথা মুন্ডাবেন। আর কিরান হজ্বপালনকারী কংকর নিক্ষেপ ও জবেহের পর ইহরাম মুক্ত হবেন।

পুরষের জন্য মাথা মুন্ডন করাই উত্তম। কিন্তু মহিলারা শুধু তার চুলের অগ্রভাগ হতে এক কড় পরিমাণ নিজে কাটবেন অথবা স্বামীর দ্বারা কাটিয়ে নিবেন। মাথা পুরো মুন্ডানো সুন্নাত। এক চতুর্থাংশ করলে মাকরুহ হবে। যার মাথায় চুল নাই সে মাথায় শুধু ক্ষুর চালালেই হালাল হবে হজ্ব ও ওমরায় সায়ী করা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে সুন্নাত। ইমাম মালেক (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর মতে ফরজ। আর ইমামে আযম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে ওয়াজীব। যদি কোন কারণে তা ছুটে যায়, তবে একটা ছাগল জবাই করে কাফফারা দিতে হবে। ইতোমধ্যে বিশ্বেও দিক-দিগন্ত থেকে হজ্বেও উদ্দেশ্যে আল্লাহর মেহমানগণ পবিত্র মক্কাতুল মোকারমায় ও পবিত্র মদীনাতুত তাইয়্যেবায় হাজির হতে শুরু করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালা সকল হাজীকে মাকবুল হজ্ব নসীব করুন। যারা এখনও মক্কা ও মদীনার দেখা পাননি,আল্লাহ তাদেরকে তাওয়াফে বায়তুল্লাহ ও জিয়ারতে মদীনা নসীব করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন