শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিবাদ দমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার সচিবালয়ে সমাপনী অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গুলশান-শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
জেলা প্রশাসকদের কী বার্তা দেয়া হয়েছেÑ এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ম্যাসেজ তো অনেকগুলো। একটা বড় মেসেজ হলÑ জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সমস্ত মানুষকে সাথে নিয়ে, তাদেরকে সেনসেটাইজড করে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করতে হবে।
গত ২৬ জুলাই শুরু হওয়া এই ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা ৩৯টি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৩৩৬টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলেন। কার্যপত্রে থাকা এসব প্রস্তাবের বাইরে ১৮টি কার্যঅধিবেশনে আরও ২৮৮টি প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।
ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন সংশোধনের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছেÑ এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন থাকায়
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ডিসিদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
জঙ্গি বিচারে অসহযোগিতায় অভিযোগ
নেবে আইন মন্ত্রণালয়
জঙ্গিদের বিচারে বিচার বিভাগকে প্রসিকিউশন ঠিকমত সহায়তা না করলে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সেলে তা জানাতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী আনিসুল হক। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার সচিবালয়ে আইন, সমাজকল্যাণ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কার্যঅধিবেশনে তিনি এ নির্দেশ দেন। এই কার্য অধিবেশনে কয়েকজন ডিসি জঙ্গিদের বিচারে বিচার বিভাগকে প্রসিকিউশন ঠিকমতো সহযোগিতা না করার বিষয়টি আইনমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
কার্য অধিবেশন শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের সমস্যার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সেলের কথা (তাদের) বলেছি। উনারা (ডিসি) যদি মনে করেন, যে কোনো সময় প্রসিকিউশন থেকে বিচার বিভাগকে ঠিকমত সহায়তা করা হচ্ছে না, তাহলে জেলার এডমিনিস্ট্রেশন হিসেবে উনারা যেন তাৎক্ষণিক সেই সেলে খবর দেন, আমরা ব্যবস্থা করব। অধিবেশনে ডিসিরা স্থায়ী এটর্নি সার্ভিস ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেন।
সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগে স্থায়ী এটর্নি সার্ভিস ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটর্নি সার্ভিসের ব্যাপারে আমরা যেটা চিন্তা-ভাবনা করছি, একবারে আমরা সম্পূর্ণ প্রসিকিউশন সার্ভিসকে একটা এটর্নি সার্ভিস ক্যারিয়ার সার্ভিস করতে পারব না। এটা পর্যায়ক্রমে করতে হবে।
আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন, তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অন্তত ৩০ ভাগ জুডিশিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যারিয়ার প্রসিকিউশন অন্তর্ভুক্ত করব। সেটার সাফল্য-ত্রুটিবিচ্যুতি দেখে তার পরে আস্তে আস্তে এগুবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে তাতে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে যার অবস্থান থেকে যেন সেই চেষ্টা সফল হয়, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা বাস্তবায়নে উনারা যেন সজাগ থাকেন।
ডিসি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কিছু সমস্যা ও কিছু সমন্বয়ের বিষয় উঠে এসেছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, যেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান করা যায় সেগুলো তাৎক্ষণিক করি। অন্যগুলো গ্রহণ করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেই। জানা গেছে, এ কর্মঅধিবেশনে মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধন করে এর ক্ষমতা আরো বাড়ানোর বিষয়টি ডিসিরা তুলে ধরেন। আদালতে রিট থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন সংশোধন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি মন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে এ কার্যঅধিবেশনে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
জঙ্গি দমনে দৃঢ় থাকুন, ডিসিদের তথ্যমন্ত্রী ঃ
জঙ্গি দমন, টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার তিন ‘যুদ্ধে’ জয়ী হতে দৃঢ় ভূমিকা পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেই সঙ্গে জঙ্গি দমন ‘যুদ্ধের’ দর্শনগত রূপরেখাও দেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সমাপনী দিনে হাসানুল হক ইনু ডিসিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ তিন যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গি দমন, টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার এই যুদ্ধে নিরপেক্ষতার কোনো জায়গা নেই। রাষ্ট্র ও জাতির ওপর জঙ্গিদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে জয়ী হতে জাতীয় চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাসহ সংবিধান নির্দেশিত পথে জেলা প্রশাসকদের দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিগত বছরের ৯৩ দিনের ‘আগুন যুদ্ধ’ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে জঙ্গি দমন ‘যুদ্ধের’ দর্শনগত ধারণা তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে জঙ্গিরা যে যুদ্ধ দেশ ও জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, তা কোনো দল বা জোটের যুদ্ধ নয়, সমগ্র জাতির যুদ্ধ। এতে এক পক্ষে রয়েছে জনগণ ও সরকার এবং আরেক পক্ষে রয়েছে জঙ্গি ও তাদের দোসররা। পুরো জাতি এ যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, শুধু জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের দোসরদের নাম সে ঐক্যের খাতা থেকে কাটা গেছে। কারণ, জঙ্গি দমন ও জঙ্গি পুনরুৎপাদন বন্ধে জঙ্গি আর তাদের দোসর উভয়কেই নির্মূল করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি জেলা প্রশাসনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হচ্ছে উন্নয়নকে টেকসই করা এবং সমাজে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত।
চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের গতকাল শুক্রবার ছিল শেষ দিন। সকালের অধিবেশনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ, যুব ও ক্রীড়াসচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজও নিজ নিজ দপ্তরের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তাঁর বক্তব্যের শেষে ‘গুলশান হত্যাকা-ে নিহত ইতালীয় নাগরিক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিমোনে মন্ডির অনাগত শিশু মাইকেল অ্যাঞ্জেলো স্মরণে’ কবি তারিক সুজাত রচিত কবিতা ‘জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন’ আবৃত্তি করে শোনান।
বালু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য ডিসিদের নির্দেশ ঃ
অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সংকট সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গতকাল শুক্রবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৬-এর শেষ দিনের প্রথম অধিবেশন শেষে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়ক কর্ম-অধিবেশনের কয়েকজন ডিসি অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলছে। বাড়ি-ঘর, ফসলি-জমি, জনপদ ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাস দমনে ডিসিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। বাল্ক শিপের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে তাদের বলেও জানান তিনি।
অবৈধ দখলদারদের সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, নদী বাঁচাতে যা যা করা দরকার তার সবই আমরা করবো। জেলা প্রশাসকদের কাছে আমরা সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।
ডিসিরা ফেরি ঘাটে যানজট ও ফেরি সংকটের বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফেরিঘাটে যানজট ও ফেরি সংকট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ঘাটে যানজটের মূল কারণ ফেরি সংকট না। বর্ষায় নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে চারটি ফেরি আটকে থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন