বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দান-খয়রাত কুরবানির বিকল্প নয়

খুৎবা-পূর্ব বয়ানে সিনিয়র পেশ ইমাম

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মসজিদে মসজিদে মুসল্লিরা গতকাল জুমার নামাজে অংশ নিয়েছেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক বুথ স্থাপন করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিরা জুমার নামাজে অংশ নেন। অধিকাংশ মসজিদে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করেন। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। মসজিদগুলোতে খুৎবা-পূর্ব বয়ানে ইমাম ও খতীবরা কুরআন হাদীসের আলোকে পবিত্র কুরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। বয়ানে কুরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ইদানিং বিভিন্ন মিডিয়ায় কুরবানি নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ওয়াজিব বিধান। অধিক সর্তকতা অবলম্বন করেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ীই কুরবানি দিতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে কুরবানির বিকল্প দান খয়রাত নয়। যেখানে সম্ভব হয় সেখানেই কুরবানি দিতে হবে। তিনি বলেন, কুরবানি পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ যারা হকদার এবং গরিবরা যাতে বঞ্চিত না হয় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে নিরাশ ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বিপদাপদ বালা মুসিবত যত কঠিনই হোক না কেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবার সুযোগ নেই। নিরাশ ও হতাশা একটি সামাজিক ব্যাধি। কাফের বেঈমানরা নিরাশ হবে কিন্ত ঈমানদাররা এক মুহূর্তের জন্যও নিরাশ হবেন না। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপক করেন পেশ ইমাম।

চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব মুফতি মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি খুৎবার বয়ানে বলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন, বিত্তবানদের সম্পদে গরিব ও দুস্থদের অংশ রয়েছে। তাই চলমান করোনা মহামারিতে এবং পরবর্তী সঙ্কটে গরিব অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে ধনীদের দাঁড়াতে হবে। সাধ্যমতো দান-খয়রাত করে যেতে হবে। তিনি বলেন, হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি দয়া করে না তার ওপর দয়া করা হয় না। সুতরাং মহান আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পা প্রত্যাশী হলে অবশ্যই সম্পদশালী মুমিনকে দান-খয়রাতের হাত প্রসারিত করতে হবে এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে ছুঁটে যেতে হবে।

নগরীর সেগুনবাগিচাস্থ মসজিদে নূর-এর খতীব মুফতি আব্দুল কাইয়ূম সুবহানী বয়ানে বলেন, মুমিনের সব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার জন্য উৎসর্গিত। আমাদের নামাজ, রোজা, হজ কুরবানি এবং যেকোনো ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই যাবতীয় ইবাদত বন্দেগি করতে হবে। অন্তরে গায়রুল্লাহকে স্থান দিয়ে ইবাদত করলে সেটি কোনোভাবেই আল্লাহর কাছে গৃহিত হবে না।

কেরানীগঞ্জের আটিবাজার কেন্দ্রীয় মসজিদে খুৎবার বয়ানে ইমাম মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলাকে রাজি-খুশি করার একটি বড় মাধ্যম হলো কুরবানি। কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে নেকি অর্জিত হয়। পৃথিবীর সকল মুসলমান মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানি করে থাকেন। বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে একটি কুচক্রী মহল মুসলমানদেরকে কুরবানি করা থেকে নিরুৎসাহিত করতে ষড়যন্ত্র করে আসছে। কোন ষড়যন্ত্রে কান না দিয়ে যাদের ওপর ওয়াজিব হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই কুরবানি আদায় করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে দেশের গরিব এতিম অসহায় মানুষগুলো যেন কুরবানির সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত না হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের প্রতিও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন খুৎবার বয়ানে বলেন, আল্লাহর গজবের মোকাবেলা করার শক্তি কারো নেই। আসমানি গজবের ক্ষেত্রে মোকাবেলা শব্দ প্রয়োগ আল্লাহর সাথে মোকাবেলা করার নামান্তর, যা চরম ধৃষ্টতা। সারা পৃথিবী জুড়ে অশ্লীলতা বেহায়াপনাসহ অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ও জালেম শাসকদের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের কারণে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ গজব থেকে মুক্তি পেতে সকলকে স্বীয় গুনাহ পরিহার করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ। একমাত্র আল্লাহই পারেন সকল বিপদ-আপদ ও সঙ্কট থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন