মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ওয়ারী লকডাউন

আজ থেকে কার্যকর চলবে ২১ দিন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

আজ শনিবার থেকে লকডাউনে যাচ্ছে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীর ৪১নং ওয়ার্ড। ঘোষণা অনুযায়ী, ওয়ারীর আটটি এলাকায় পরবর্তী ২১ দিনের জন্য লকডাউন কার্যকর হবে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় সড়ক ও স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে বেরিকেড তৈরির কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। লকডাউন করা ১৫টি রাস্তার মধ্যে এলাকার বাসিন্দাদের বের হওয়া ও ঢোকার জন্য ২টি গেট তৈরি করা হয়েছে। মোট ২শ› জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে লকডাউন হওয়া এলাকায়। রেড জোন এলাকা হওয়ায় করোনা টেস্টের জন্য সেখানে অস্থায়ী বুথ তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জানা গেছে, জনসংখ্যার অনুপাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকায় রাজধানীর ওয়ারীতে কার্যকর হতে যাচ্ছে লকডাউন। স্বাস্থ্য অধিদতর নির্দেশিত ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এই লকডাউন বাস্তবায়ন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। লকডাউন বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলোও এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়ণ নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন দুইটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে। প্রথমত, এলাকাটির আয়তন বিবেচনায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি; এবং দ্বিতীয়ত, এলাকাটিতে প্রচুর ব্যবসায়ীদের বসবাস। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করা যাবে কিংবা করা হবেও। কিন্তু বেশি এত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার রাস্তাঘাট জনশূন্য রাখা কঠিন হতে পারে। তবে এর চেয়েও চ্যালেঞ্জিং হবে এলাকার ব্যবসায়ীদের আটকে রাখা। কারণ তাদের কাছে ব্যবসা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সামনে ঈদুল আজহা থাকায় সেই গুরুত্ব আরও বেড়েছে। ঈদের কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাইলে লকডাউন বাস্তবায়ন শঙ্কার মুখে পড়বে। তবে সবকিছু মিলিয়েও শেষ পর্যন্ত প্রশাসন লকডাউন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।

এ প্রসঙ্গে ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ মো. ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু শঙ্কাও আছে। কারণ পূর্ব রাজাবাজারের তুলনায় এখানে জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এই এলাকার প্রবেশপথও ১৭টি। আমরা দুইটি পথ খোলা রেখে বাকিগুলো সিলগালা করে রাখব। তারপরও এত বেশি জনগণকে ঘরে আটকে রাখতে হলে আমাদের যে জনবল প্রয়োজন, তাতে কিছু ঘাটতি আছে। আবার ব্যবসায়ীরা যদি ঈদের দোহাই দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান, তখন বড় মুশকিল হবে। এখন এলাকাবাসী আমাদের সহায়তা না করলে শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে লকডাউন বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হবে।
ডিসি ইফতেখার বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের ভুমিকাই মূখ্য। কারণ পুলিশ যেমন প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা দেবে, তেমনি বাসিন্দাদের সব ধরনের প্রয়োজন ও সমস্যা সমাধানেরও সমন্বয় করবে। কোথাও বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য লাগবে কিংবা কোনো সেবা লাগবে, কোথাও হয়তো কারও জন্য স্বাস্থ্যসেবা লাগবে— সবকিছু সমন্বয় করব আমরাই। তবে চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা আশাবাদী।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ারীর যেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে খুব বেশি শঙ্কা নেই। সচেতনতারও অভাব সবখানেই। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে অনেকেই দিব্যি ঘুরছেন রাস্তায়। দোকান-পাট, মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। অনেকের মধ্যেই এমন মনোভাব দেখে এলাকার সচেতন নাগরিকরাই শঙ্কিত। র‌্যাংকিং স্ট্রিটের গলির মুখের একটি ব্যাংকের বুথের কর্মচারী রহমত শিকদার। তিনি বলেন, এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী বেশি। কিন্তু তারপরও মানুষের মাঝে কোনো ভয়-ডর নেই। সারাক্ষণ মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। শুনেছি শনিবার থেকে লকডাউন হবে। কিন্তু লকডাউন হলে কী আর না হলেই কী, মানুষদের ঘরে রাখাটা কঠিন হবে মনে হচ্ছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তুতি শেষ করেছি। এরই মধ্যে কন্ট্রোল রুম স্থাপন, নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনসহ যাবতীয় কাজ শেষ। লকডাউনের বিষয়ে মাইকিংও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার বাসিন্দাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতিও শেষ। কিন্তু এতকিছুর পরও যাদের জন্য লকডাউন, তাদের সহায়তাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন