আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন তাকদির-সংক্রান্ত বিষয়াদি যাতে সাধারণ মানুষ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সে নিরিখে একে দু’ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করেছেন। যথা- ক. তাকদিরে মুবরাম, অর্থাৎ চুড়ান্ত, স্থির, অপরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে কোনো রকম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয় না। লাওহে মাহফুজে একই বাণী লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং তা বাস্তবতা লাভ করবেই।
খ. তাকদিরে মুয়াল্লাক, অর্থাৎ ঝুলন্ত বা পরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে পরিবর্তন অথবা সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। এ প্রকার তাকদিরকে আল্লাহপাক অন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখেন। যেমন- অমুক কাজটি না হলে এ কাজটি বাস্তবায়ন হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লতিফ যদি পিতমাতার সেবাযত্ম করে, তবে জীবন দীর্ঘ ও সুখকর হবে। যদি সেবাযত্ম না করে, তাহলে দীর্ঘ হবে না, সুখকর হবে না।
বস্তুত তাকদিরে মুবরাম এবং তাকদিরে মুয়াল্লাক। অর্থাৎ চূড়ান্ত ও ঝুলন্ত তাকদির কেবল বান্দার ইলম ও অনুভুতি হিসেবে। কিন্তু আল্লাহপাকের ইলম ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী ঝুলন্ত বলে কিছুই নেই, বরং সবই মুবরাম। কেননা, যেকোনো কাজ বা বিষয়ের শেষ ও চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহপাক অনাদিকাল হতেই অবগত আছেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ক. আল্লাহপাক যা কিছু ইচ্ছা মিটিয়ে দেন, আর যা কিছু ইচ্ছা সুদৃঢ় করেন। তার নিকটই রয়েছে মূল কিতাব। (সূরা আর রা’দ: আয়াত ৩৯)। খ. এই আয়াতে কারিমার মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে হাফেজ মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা.-এর রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহপাক সৃষ্টির তাকদিরসমূহ লিখে রেখেছেন।
এর অর্থ হলো, আল্লাহপাক বান্দাহর তাকদির এমনভাবে নির্ধারণ করেছেন যে, আল্লাহর ইলমে কাদিমের বিপরীতে কোনো কিছু ঘটতেই পারে না। একেই বলা হয় উম্মুল কিতাব। অথবা লিখে রাখার অর্থ হলো, আল্লাহপাক তাকদির নির্ধারণ করেছেন মুয়াল্লাক হিসেবে। অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে আল্লাহপাক লিখে রেখেছেন যে, অমুকে যদি হজ করে তাহলে ২০ বছর বাঁচবে। আর যদি হজ না করে তবে ১৫ বছর।
তাকদির পরিবর্তন হওয়া ও ঠিক থাকা অর্থে এ কথাই বোঝানো হয়েছে। এরূপেই হাফেজ ইবনে আসকালানী রহ. আলোচনা করেছেন। কিন্তু তার আলোচনায় সামান্য একটু অস্পষ্টতা আছে। কেননা, মুয়াল্লাক ও মুবরাম এ দুই ধরনের তাকদিরই লাওহে মাহফুজে লিখিত এবং বাতিল হওয়ার অযোগ্য। তবে এ কথাও সত্যি যে, মুয়াল্লাক তাকদির ও আল্লাহপাকের ইলম, জ্ঞান, প্রজ্ঞা হিসেবে মুবরাম। (আল মিরকাত শরহে মিশকাত: খন্ড ১, পৃ. ১৪৫-১৪৬)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন